৩১ জানুয়ারির সেই ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেটযুদ্ধ!
ঠিক ২০ বছর আগে আজকের দিনে ক্রিকেটবিশ্ব দেখেছিল অবিস্মরণীয় এক লড়াই। প্রায় এক যুগ বিরতির পর ১৯৯৯ সালে সেবার ভারত সফরে আসে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। চিরবৈরী দুই দেশের মধ্যে তখন টানটান রাজনৈতিক উত্তেজনা। ওয়াসিম আকরামের নেতৃত্বাধীন দলটাকে ভারতে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয় শিবসেনারা। সফর শুরু হওয়ার তিন সপ্তাহ আগে দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা মাঠের পিচই খুঁড়ে ফেলে দলটির কিছু উগ্রবাদী সমর্থক। এমন ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যেই টেস্ট সিরিজ খেলার জন্য ভারতে আসে পাকিস্তান দল।
উত্তেজনাপূর্ণ সফরের প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিন ছিল ৩১ জানুয়ারি, ১৯৯৯। চেন্নাইর চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে সকালে খেলা শুরুর নির্ধারিত সময়ের মাত্র আধঘণ্টা আগেও মাঠ ও পিচের পাহারার দায়িত্বে তখন পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা। গ্যালারির এক কোণে বিদ্রুপ আর উত্তেজনাকর মন্তব্য ছুড়তে থাকা ভারতীয় দর্শকদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। চতুর্থ ইনিংসে ২৭০ রানের জয়ের লক্ষ্যে সেদিন ব্যাটিংয়ে নামবে ভারত। তৃতীয় দিন বিকেলে তারকা ফার্স্ট বোলার ওয়াকার ইউনুসের তোপে মাত্র ৬ রানে দুই ওপেনারের উইকেট হারিয়ে তখন শঙ্কায় রয়েছে তারা।
তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয়দের আশার আলো হয়ে ছিলেন একজন শচীন টেন্ডুলকার। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হলেও তাঁর কারণেই ২৭০ রানের জয়ের লক্ষ্যটা নাগালের বাইরে মনে হয়নি কোটি কোটি সমর্থকের। কিন্তু রাহুল দ্রাবিড়, অধিনায়ক আজহার ও সৌরভ গাঙ্গুলীর দ্রুত আউটে দলীয় ৮২ রানে ৫ উইকেট হারায় ভারত। পিনপতন নীরবতা নেমে আসা মাঠে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে নয়ন মঙ্গিয়াকে নিয়ে প্রতিরোধ শুরু করেন টেন্ডুলকার। পাকিস্তানি পেস আর স্পিন আক্রমণ আস্থার সঙ্গে মোকাবিলা করে ১৩৬ রানের জুটি গড়েন দুজন মিলে।
ব্যক্তিগত ৫২ রানে উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান নয়ন মঙ্গিয়াকে আউট করে পাকিস্তানকে ব্রেক থ্রু এনে দেন অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম। কিন্তু অন্যপ্রান্তে টেন্ডুলকার নজরকাড়া সব শটে অসাধারণ এক সেঞ্চুরি তুলে নেন। জয় থেকে মাত্র ১৬ রান দূরে থাকতে ব্যক্তিগত ১৩৬ রানে সাকলাইন মুশতাকের দুসরায় আউট হয়ে যান। এরপর সাকলাইন ও ওয়াসিম আকরাম মিলে আরেকটি ক্রিকেটীয় রূপকথার জন্ম দিয়ে মাত্র ৪ রানে ভারতের বাদবাকি উইকেট তুলে নেন। প্রায় পরাজয়ের প্রান্তসীমায় দাঁড়ানো পাকিস্তান ২৫৮ রানে ভারতকে অলআউট করে মাত্র ১২ রানে টেস্ট ম্যাচটি জিতে নেয়।
ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টানো ম্যাচটিতে টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া পাকিস্তান শুরুতে বিপর্যয়ে পড়লেও মোহাম্মদ ইউসুফ ও মঈন খানের ব্যাটিং নৈপুণ্যে প্রথম ইনিংসে ২৩৮ রান তোলে। ভারতের অনিল কুম্বলে একাই নেন ৬ উইকেট। জবাবে সাকলাইন মুশতাক ৫ উইকেট নিলেও ২৫৪ রান করে ঠিকই ১৬ রানের লিড পেয়ে যায় ভারত। আফ্রিদি নেন তিন উইকেট। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে শহিদ আফ্রিদির মারকুটে ১৪১ ও ইনজামামের হাফসেঞ্চুরিতে একপর্যায়ে ৫ উইকেটে ২৭৫ রান করে ফেলে পাকিস্তান। কিন্তু ভেংকটেশ প্রসাদের দ্রুত ৬ উইকেটে ২৮৬ রানে অলআউট হয়ে যায় সফরকারীরা।
চতুর্থ ইনিংসে আবার সাকলাইন মুশতাক ৫ উইকেট নিয়ে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেন পাকিস্তানকে। প্রথমবার ক্রিকেটে দুসরার ভেল্কি দেখিয়ে ম্যাচে এই স্পিনার ১০ উইকেট পেলেও সেঞ্চুরির সুবাদে সেরা খেলোয়াড় হন শচীন টেন্ডুলকার। শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনার ম্যাচ জিতে সফরে ১-০ লিড পেয়ে মাঠেই সিজদায় লুটিয়ে পড়ে পাকিস্তান।