বাংলাদেশ দলে একজন ‘জন্টি রোডস’ চান কুক
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল, বোলারদের মধ্যে মাশরাফি বিন মুর্তজা কিংবা মুস্তাফিজুর রহমান, অলরাউন্ডারদের মধ্যে সাকিব আল হাসানকে ধরলেও দুর্দান্ত ফিল্ডার হিসেবে কারো নাম আসবে কি না, সেটি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিষয়টি নজর এড়ায়নি বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফিল্ডিং পরামর্শক রায়ান কুকের। তরুণ খেলোয়াড়দের ফিল্ডিং আরো অসাধারণ করতে এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে একজনও কিংবদন্তি না থাকার প্রভাব রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে জুলাইয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলে ফিল্ডিং পরামর্শক হিসেবে যোগদান করা কুক বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়দের মধ্যে ফিল্ডিংয়ের ব্যাপারে খুব একটা আচরণগত পার্থক্য খুঁজে পাননি।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের কুক বলেন, ‘ফিল্ডিংয়ের ব্যাপারে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের ওপর আমি সন্তুষ্ট। তাঁদের অসাধারণ উন্নতি হয়েছে। তাই আচরণে খুব একটা বিচ্যুতি চোখে পড়েনি। দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য জন্টি রোডস কিংবা হার্শল গিবসের মতো খেলোয়াড় রয়েছেন। কখনো কখনো এমন কিংবদন্তি না থাকায় খেলোয়াড়রা উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারে। তবে আমি মনে করি তাদের ফিল্ডিংয়ের আদর্শ নিজেদেরই তৈরি করতে হবে এবং বিশ্বে সেরা ফিল্ডিং দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হবে এবং আমরা এটি করতে সক্ষম, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
জিম্বাবুয়ে সিরিজে দ্বিতীয় টেস্টে জয় পেলেও প্রথম টেস্টের তুলনায় অনেক বেশি ক্যাচ ফেলেছে বাংলাদেশ। এমনকি অভিষিক্ত খালেদ আহমেদও দুটি ক্যাচ ফেলেছেন। এই ব্যাপারে কুক বলেন, ‘আমি মনে করি সুযোগগুলো অনেক কঠিন ছিল। প্রথম টেস্টে আমরা শতকরা ৯১টি ক্যাচই ধরতে পেরেছি, যা আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচে কিছু কঠিন সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। ছেলেরা এসে জানিয়েছে, তারা এটি নিয়ে আরো কঠিন পরিশ্রম করবে। মনযোগ ধরে রাখা খুবই কঠিন। কেউ যদি টানা ছয় ঘণ্টা অনুশীলন করায় এবং ছয় ঘণ্টা শেষেও খেলোয়াড়রা যদি একইভাবে ক্যাচ ধরতে পারে, তাহলে আমি বিরতি দেব। তবে একজন পেশাদার হিসেবে দিনের শুরু এবং শেষের ক্যাচটি একই উদ্দ্যমে ধরা উচিত। পর্যবেক্ষণ ও মনযোগ ধরে রাখার আশা আমরা করতেই পারি।’
নিচু ও ধীর গতির উইকেট এশিয়ান দেশগুলোকে স্লিপে ফিল্ডার তৈরি করতে ব্যর্থ করেছে বলে মনে করেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি কিছুটা ঐতিহাসিক। দক্ষিণ আফ্রিকায় কিশোর বয়সী ক্রিকেটারদেরও চারটি স্লিপ এবং একটি গ্যালি ফিল্ডার রাখতে দেখা যায়। সেই সম্ভাবনা এখানে একটি কিংবা দুটি স্লিপে নেমে আসে। তাই এখানে স্লিপের তুলনায় শর্ট লেগ ও সিলি পয়েন্টে ফিল্ডার রাখার প্রবণতা বেশি। ভিন্ন উইকেটে ভিন্ন স্লিপ ফিল্ডার থাকবে। তবে তিন চারজন হলে স্লিপে ভালো ফিল্ডিং সম্ভব হয় এবং এই ধারা অব্যহত রাখতে হবে।’
কেপটাউনের গ্যারি ক্রিস্টেন একাডেমির সাবেক প্রধান কোচ কুক জানিয়েছেন, তারা পরিবর্তন করে ফিল্ডিং করানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘দক্ষতা বাড়াতে আমরা এমন উদ্যোগ নিয়েছি। কেউ আহত হলে বা দলে না থাকলে যেন সহজেই সেই অভাব পূরণ করা যায়। স্লিপে অসাধারণ ফিল্ডারদের দিকে তাকালে আপনি ম্যাথ্যু হেইডেন, শেন ওয়ার্ন, মার্ক ওয়াহদের তিন-চার বছর ধরে ফিল্ডিং করতে দেখতে পাবেন এবং তারা ভালো ফলাফল এনেছে।’
রায়ান কুক হয়তো চাইবেন সাকিব-তামিমদের মধ্যে থেকেই বাংলাদেশের কিংবদন্তি ফিল্ডার তৈরি করতে, যাদের দেখে অনুপ্রাণিত হবে তরুণ ক্রিকেটাররা। তবে বিশ্বের সেরা ফিল্ডিংয়ের খ্যাতি বাংলাদেশ অর্জন করতে পারবে কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।