বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এক অপরিহার্য নাম মাশরাফি বিন মুর্তজা। ইনজুরি তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি। দুই হাঁটুতে ইতমধ্যে অনেকগুলো অস্ত্রোপচার করিয়েছেন এই ডানহাতি পেসার। তবে বোলিং কিবা ব্যাটিং নয়, ভক্তরা মাশরাফিকে মনে রেখেছে তাঁর দেশের প্রতি নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার কারণে। দলকে নেতৃত্ব দিয়ে যেভাবে এগিয়ে নিয়েছেন মাশরাফি, তাতে বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক বলা চলে তাঁকে। চলমান এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনিই। এটিই মাশরাফির শেষ এশিয়া কাপ। ২০১৯ সালে বিশ্বকাপের পর অবসরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর। নিজের শেষ এশিয়া কাপে কি দেশকে এশিয়া সেরার মুকুট পরাতে পারবেন তিনি?

১৯৫টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন মাশরাফি। তবে নেতৃত্ব পেয়েছেন দফায় দফায়। কারণ, ইনজুরির জন্য মাঠের বাইরে তাঁকে কাটাতে হয়েছে অনেকদিন। তবুও বারবার ক্রিকেটের মাঠে ফিরে এসেছেন মাশরাফি। ২০১৫ সালের পর থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে রদবদল আসতে শুরু করে। টানা কয়েকটি দেশকে সিরিজে হারায় বাংলাদেশ। এমনকি ক্রিকেট খেলুড়ে সবগুলো দেশই বাংলাদেশের কাছে অন্তত একবার পরাজয় বরণ করেছে। এই কৃতিত্ব যেমন সকল খেলোয়াড়ের, এক মাশরাফিও তাঁর চেয়ে কোনো অংশে কম কৃতিত্ব ধারণ করেননা। দলের খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিয়ে গেছেন সবসময়। কিছুদিন আগেই টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন মাশরাফি।

চলমান এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভাঙা হাত নিয়েও ব্যাট করতে নামেন তামিম ইকবাল। সেই জুটিতে গুরুত্বপূর্ণ ৩২ রান যোগ করেন মুশফিকুর রহিম। তবে, তামিমকে মাঠে নামার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফিই। এমনকি প্যাড, অ্যাবডোমিনাল গার্ডসহ তৈরি করে শেষ উইকেটে মাঠে নামেন তামিম। সেই ম্যাচে দাপুটে জয় পায় বাংলাদেশ।

সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। অঘোষিত সেই সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে মাত্র ২৪০ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় টাইগাররা। ইমাম উল হাসান এবং শোয়েব মালিকের দুর্দান্ত জুটি যখন লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখনই রুবেল হোসেনের বলে এক দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মাশরাফি। হাঁটুতে এতগুলো অস্ত্রোপচারের পরেও ০.৮৬ সেকেন্ডের মধ্যে বাঁপাশে লাফিয়ে শোয়েব মালিকের ক্যাচ নেন তিনি। তখনই জয়ের সুবাতাস পেতে শুরু করে বাংলাদেশ। এমনকি সেই ক্যাচে আঙুলে ইনজুরি হওয়ার পরেও ড্রাইভ দিয়ে ফিল্ডিং করেছেন। তাঁর জন্যই তরুণ খেলোয়াড়রা নিজেদের উজাড় করে দিয়েছিল। সেই মাশরাফি আজ নিজের শেষ এশিয়া কাপের ফাইনালে মাঠে নামবেন।

মাশরাফি শুধু একজন খেলোয়াড় নন, বাংলাদেশের তো বটেই, ক্রিকেটের ভক্তদের কাছেও এক অনুপ্রেরণার নাম। আজ মাশরাফির বিদায়ী এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দল বিশেষ কিছু করতে চাইবে অবশ্যই। তবে মাশরাফি জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ট্রফির জন্য খেলেন না। এই অনুপ্রেরণায় আজ এশিয়া সেরার মুকুট পর্বে বাংলাদেশ, এমনটিই প্রত্যাশা ভক্তদের।