জয় পেয়েও কাঁদলেন নেইমার!
ম্যাচটা মাত্র শেষ হয়েছে। রেফারি বাজিয়ে দিলেন শেষ বাঁশিটা। জিতে কোথায় উদযাপনে ব্যস্ত হবেন নেইমার ডি সিলভা, তা না; ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে দেখা গেল মাঠের মাঝে বসে মুখ ঢেকে কাঁদছেন। দলের জয়ে শেষমুহূর্তে নিজেও করেছিলেন একটি গোল। নেইমারের কান্নাটা যে সুখেরই-স্বস্তিরই; তা বলে না দিলেও চলে। বারংবার ট্যাকলের শিকার হতে হতে, পড়ে যেতে যেতে পাওয়া গোলটি হয়তো সত্যিই ভীষণ স্বস্তি এনে দিয়েছে নেইমারকে। সেটাই গালে গড়িয়ে পড়েছে অশ্রু হয়ে।
শুরুটা কিন্তু ঠিক এমন ছিলনা ব্রাজিলের। কোস্টারিকার বিপক্ষে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা ছিল আটকেই। পুরো মাঠ জুড়ে বল ছিল সেলেসাওদের দখলেই কিন্তু সব আক্রমণ যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে কোস্টারিকার ডি-বক্সে যেয়েই।
অবশ্য প্রথম সুযোগটা কিন্তু পেয়েছিল সার্বিয়ার কাছে প্রথম ম্যাচ হেরে বসা কোস্টারিকাই। তবে সেলসো বোর্হেস দেখা পাননি জালের। ব্রাজিল ঘাবড়ায়নি তাতে, কোস্টারিকার জালে বল ঢুকাতে তাঁদের চেষ্টা বেড়ে গিয়েছিল শতগুণ।
কোস্টারিকার বক্সটা ম্যাচের মাঝখানে হঠাৎ-ই দেখলে চমকে যেতেন যে কেউ। বলতেন, এটা কি ব্রাজিলের ডি-বক্স? সে প্রশ্ন উঠতেই পারতো। ব্রাজিলের পুরো আক্রমণভাগটা যে পুরো ম্যাচটাতেই খেলেছে কোস্টারিকার কোটেই। কিন্তু, তবুও গোল আসেনি। ম্যাচ শেষে দুই দলের বল দখলে রাখার পরিসংখ্যানটায়ও দেখা গেল আকাশ-পাতাল পার্থক্য। ব্রাজিলের ৭২% আর কোস্টারিকা…? মাত্র ২৮%!
আসবেই বা কীভাবে, গোলরক্ষকটা যে কেইলর নাভাস! বার্সেলোনার হয়ে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে কষ্টটা বুঝেছিলেন ফিলিপে কৌতিনহো, এবার বুঝলেন ব্রাজিলের জার্সিতেও। গোলপোস্টের সামনে বেরসিকের মতো গাঁট হয়ে বসে একের পর এক ফিরিয়েছেন সেলেসাওদের বিধ্বংসী তীর। চীনের প্রাচীর হয়ে ম্যাচের পুরো ৯০ মিনিট কাটিয়ে দিয়েছেন নাভাস। আর কত? তিনিও মানুষ, জানিয়েছেন ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে যেয়ে।
মূল সময় পেরিয়ে ইনজুরি টাইমে দুই দল পেয়েছে মোট ছয় মিনিট। আর মাত্র ছয়টা মিনিট গোলপোস্টটা আগলে রাখতে পারলেই নাভাস এনে দিতে পারতেন দলের ড্র, কে জানে, হয়তোবা টিকিয়ে রাখতে পারতেন দলের বিশ্বকাপটা স্বপ্নটাও!
সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে দলের স্কোরলাইনের খাতাটা খুলেছিলেন তিনিই। ব্রাজিলের ত্রাতা তাঁকে হতে হল এই ম্যাচেও। অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটেই গ্যাব্রিয়েল হেসাসের বাড়িয়ে দেয়া বলটাতে মনে হয় শটটা করেছিলেন গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে। নাভাস আর পারেননি, প্রথম গোলটা পেয়েই যায় ব্রাজিল।
কৌতিনহো তো পারলেন, দলের সেরা খেলোয়াড় নেইমার রয়ে গেলেন বাকি। বিশ্বকাপের আগেই দুই প্রস্তুতি পেয়েছেন দুই গোল। সুইসদের বিপক্ষে তিনিই ছিলেন কিনা নিষ্প্রভ! কোস্টারিকার বিপক্ষেও বেশ কিছু আক্রমণ করলেও প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনের (পিএসজি) ফরোয়ার্ড দেখা পাননি গোলের।
পেলেন যখন, ম্যাচের তখন সময় প্রায় শেষ। অতিরিক্ত সময়ের সাত মিনিট শেষে রেফারি প্রস্তুত বাঁশি বাজাতে, ম্যাচের ইতি টানতে। তবে, নেইমার যেন তাঁর অপেক্ষাটা বাড়ালেনই। ডগলাস কস্তার পাস থেকে দলকে এনে দিয়েছেন ২-০ গোলের লিড।
রেফারি বাঁশিটা বাজিয়েছেন একটু পরেই। দুই গোলে ম্যাচ জিতে মাঠ ছেড়ে নেইমার ভিজেছেন কান্নায়। কে জানে, রিও ডি জেনিরোতেও কি হয়ে গেল নাকি এক পশলা আনন্দ অশ্রুর বর্ষণ!