রেকর্ড গড়েই জিতল বাংলাদেশ
ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে বিশাল সংগ্রহ এনে দেন লিটন দাস। বল হাতে দুর্দান্ত করেন সাইফউদ্দিন-মিরাজরা। দুই বিভাগের সাফল্যে জিম্বাবুয়েকে ১৬৯ রানের বড় ব্যবধানে হারাল বাংলাদেশ। এ জয়ের সুবাদে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। ওয়ানডেতে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়।
আজ রোববার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ব্যাট করে ছয় উইকেটে ৩২১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে ১৫২ ওভারেই অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ১২৬ রান করে ম্যাচসেরা হয়েছেন লিটন দাস।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ৩২২ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। জিম্বাবুয়ের ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার টিনাশেকে বোল্ড করেন তরুণ এই পেসার। ফেরার আগে ১০ বলে এক রান করেন সফরকারী দলের ওপেনার।
দ্বিতীয় শিকারও সাইফউদ্দিনের, রেজিস চাকাভাকেও ফিরিয়ে দেন তিনি। ইনিংসের ৭.৪ তম ওভারে এলবির ফাঁদে ফেলে চাকাভাকে সাজঘরে পাঠান ডানহাতি পেসার। নবম ওভারে চিমু চিবাবাকে (১০) আউট করেন অধিনায়ক মাশরাফি।
দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন ব্রেন্ডন টেইলর। তবে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগে তাঁকে থামিয়ে দেন তাইজুল ইসলাম। বোল্ড করে ফিরিয়ে দিলেন টেইলরকে। এরপর সিকান্দারকে ফেরান মুস্তাফিজ। দ্রুত টপ অর্ডারদের হারিয়ে বেশিদূর যেতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। শেষ পর্যন্ত তম ওভারে ১৫২ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে দারুণ করেন সাইফউদ্দিন। মাত্র ২২ রানের বিনিময়ে তিনটি উইকেট নেন তিনি। দুটি উইকেট নেন মেহেদী মিরাজও। দুটি নেন মাশরাফি ও একটি নেন তাইজুল।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা সাবধানে করে বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম বল থেকে দেখেশুনে খেলেন তামিম ইকবাল। তবে রানের গতি বাড়ান লিটন দাস। দুই ওপেনারের ব্যাটে প্রথম ১০ ওভারে ৪৪ রান তোলে বাংলাদেশ।
এর পরই তামিমের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। উইকেটে থিতু হয়েও টিকতে পারেননি বাঁহাতি ওপেনার। এলবির ফাঁদে পড়েন ২৪ রানে। ৬০ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি। এরপর নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে জুটি বাঁধেন লিটন। দ্বিতীয় উইকেটে শান্তর সঙ্গে স্কোরবোর্ডে ৮০ রান যোগ করেন ডানহাতি ওপেনার। এর মাঝে ৪৫ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফসেঞ্চুরি করেন তিনি।
ছুটতে থাকা এই জুটি ভাঙে শান্তর আউটে। ২৫.৪তম ওভারে এলবির ফাঁদে পড়ে ফিরে যান শান্ত। জিম্বাবুয়ের লেগস্পিনার মাটুমবডজির ফুল লেংথ বল ব্যাটে খেলতে পারেননি শান্ত। সফরকারীরা আবেদন জানালে সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেন আম্পায়ার। ফেরার আগে ২৯ বলে ৩৮ রান করেন তিনি।
এরপর মুশফিকের সঙ্গে ব্যাট চলাকালীন সেঞ্চুরি হাঁকান লিটন দাস। ৪৫ বলে হাফসেঞ্চুরি করা লিটন তিন অঙ্কের ঘরে যান ৯৫ বলে। ডানহাতি ওপেনারের শতরানের ইনিংসটি সাজান ১০টি বাউন্ডারি ও একটি ছক্কায়।
এর আগে ২০১৮ সালে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন লিটন। মাঝে কেটে গেছে প্রায় দেড় বছর। অবশেষে সিলেটে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান লিটন দাস।
লিটনের সেঞ্চুরিতে ভর করেই এই বিশাল সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। ব্যক্তিগত ১২৬ রানের মাংসপেশিতে চোট পেয়ে রিটায়ার্ড হার্ড হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে লিটনের ক্যারিয়ার-সেরা ইনিংস এটি। এর আগে এশিয়া কাপে করেছিলেন ১২১ রান।
তবে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। করেন মাত্র ১৯ রানে। দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ-মিঠুন। পঞ্চম উইকেটে দুজন তোলেন ৬৮ রান। ৪৬তম ওভারে মাহমুদউল্লাহর আউটে ভাঙে এই জুটি। ফেরার আগে ২৮ বলে ৩২ রান করেন তিনি।
মাহমুদউল্লাহ ফেরার পর ঠিক ৫০ রান করে আউট হন মিঠুন। ৪১ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল পাঁচ বাউন্ডারি ও এক ছক্কা। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের বিদায়ের পর সাইফউদ্দিনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ওভারে ছয় উইকেটে ৩২১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ৩২১/৬ (তামিম ২৪, লিটন ১২৬*, শান্ত ২৯, মুশফিক ১৯, মাহমুদউল্লাহ ৩২, মিঠুন ৫০, মিরাজ ৭, সাইফউদ্দিন ২৮, মাশরাফি ০; এমপফু ১০-০-৬৮-২, মাধেভেরে ৮-০-৪৮-১, মুতুমবামি ৭-০-৪৭-১, সিকান্দার ১০-০-৫৬-০, টিরিপানো ৭-০-৫৬-১)।
জিম্বাবুয়ে : ৩৯.১ ওভারে ১৫২/১০ (চিবাবা ১০, টিনাশে ১, টেইলর ৮, সিকান্দার ১৮, মাধেভেরে ৩৫, চাকাভা ১১, মুতুমবামি ১৭, মাটুমবডজি ৬, টিরিপানো ২, এমপফু ৯ ও মুম্বা ১৩; সাইফউদ্দিন ৭-০-২২-৩, মাশরাফি ৬-০-৩৫-১, মিরাজ ৮-১-৩৩-২, তাইজুল ৯-২-২৭-১, মুস্তাফিজ ৬-০-২২-১, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-১২-০ )।
ফল : ১৬৯ রানে জয়ী বাংলাদেশ ।