বড় সংগ্রহই গড়ল পাকিস্তান
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের দ্বিতীয় দিনই ম্যাচ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ টপকে লিড নেয় ১০৯ রানের। আজ রোববার তৃতীয় দিন সেই সংখ্যাটা আরো বাড়িয়ে নিয়েছে স্বাগতিকরা।
দিনের শুরুতে সেঞ্চুরিয়ান বাবর আজম ফিরলেও শেষের দিকের ব্যাটসম্যান উপর ভর করে প্রথম ইনিংসে ৪৪৫ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। ৪৪৫ রানের ইনিংসে ২১২ রানে এগিয়ে আছে আজহার আলির দল।
আজ দিনের শুরুতেই পাকিস্তান শিবিরে আঘাত হানেন আবু জায়েদ রাহি। ফিরিয়ে দেন সেঞ্চুরিয়ান বাবর আজমকে। সাজঘরে ফেরার আগে ১৪৩ রান করেন বাবর। ১৯৩ বলের ইনিংসটিতে ছিল ১৯টি বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা।
বাবর ফিরলেও পাকিস্তানকে টানেন হারিস সোহেল ও আসাদ শফিক। ৬৫ রানে আসাদকে সাজঘরে পাঠান এবাদত হোসেন।
তবে থেমে যাননি সোহেল। বোলারদের নিয়ে দলকে বিশাল সংগ্রহের পথে নিয়ে যান তিনি। তাঁর ব্যাটে ভর করে প্রথম ইনিংসে শেষ পর্যন্ত ৪৪৫ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান।
প্রথম দিনের মতো গতকাল শনিবার দ্বিতীয় দিনও হতাশায় কাটে বাংলাদেশের। কাল প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে তিন উইকেট হারিয়ে ৩৪২ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে পাকিস্তান। দিন শেষে উইকেটে ছিলেন সেঞ্চুরিয়ান বাবর আজম। ১৪৩ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ৬০ রানে অপরাজিত ছিলেন আসাদ শফিক। ১০৯ রানে এগিয়ে থেকে আজ তৃতীয় দিন শুরু করে পাকিস্তান।
কাল দিনের শুরুতেই সাফল্য পায় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আঘাত হানেন রাহি। পেসার রাহির বলে স্বাগতিক ওপেনার আবিদ আলি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাজঘরে। তবে শুরুতে উইকেট হারালেও দ্বিতীয় উইকেটে ঘুরে দাঁড়ায় পাকিস্তান।
মাথা ব্যথার কারণ হয়ে ওঠেন অধিনায়ক আজহার আলি ও শান মাসুদের জুটি। সেই জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে আবারও সাফল্য এনে দেন রাহি। ফিরিয়ে দেন থিতু হয়ে যাওয়া পাকিস্তান অধিনায়ক আজহার আলিকেও। তাতে ভাঙে ৯১ রানের জুটি। আজহার ফিরে যান ৩৪ রানে।
কিন্তু সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন শান মাসুদ। ১০০ রানের মাথায় তিনি ফিরলে জ্বলে ওঠেন বাবর আজম। তাঁর সেঞ্চুরিময় ইনিংসে রাওয়ালপিন্ডিতে দাপট স্বাগতিকদের।
এর আগে গত শুক্রবার প্রথম ইনিংসে ২৩৩ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায় সফরকারীরা। হারায় অভিষেক হওয়া সাইফ হাসানকে। সাইফের পর উইকেটে থিতু হতে পারেননি তামিমও।
হাল ধরতে পারলেন না অধিনায়ক মুমিনুল হকও। লড়াইয়ের আশা জাগিয়ে আফ্রিদির বলেই ফেরেন তিনি। ফেরার আগে ৫৯ বলে ২৮ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পর বিপর্যয় এড়ানোর চেষ্টা করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ। দুই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান তৃতীয় উইকেটে গড়েন ৫০ রানের জুটি। তাঁদের ব্যাটে ভর করে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে মধ্যাহ্ণ বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
কিন্তু বিরতি থেকে ফিরেই আবারও উইকেট বিলাতে শুরু করেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। বিরতির পর পরই আউট হন তরুণ এই ওপেনার। ফেরার আগে ৪৪ রান করেন তিনি।
শান্তকে সঙ্গ দেওয়া মাহমুদউল্লাহও বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। ৪৮ বল মোকাবিলা করে ফিরে যান তিনিও। এরপর মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে হাল ধরার চেষ্টা করেন লিটন দাস। কিন্তু তাঁর চেষ্টা দীর্ঘ হলো না। ৫৪ রানের প্রতিরোধ গড়া জুটি ভাঙেন হারিস সোহেল।
এরপর তাইজুলকে নিয়ে দলকে টানেন মিঠুন। দারুণ সঙ্গ দেন তাইজুলও। তাতে সপ্তম উইকেটে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেরা জুটি পায় বাংলাদেশ। সপ্তম উইকেটে এর আগে সেরা জুটি ছিল সাকিব-শুভাগত হোমের অবিচ্ছিন্ন ৩১ রানের জুটি। এবার তাদের ছাড়িয়ে ৫৩ রানের জুটি গড়েন মিঠুন-তাইজুল। কিন্তু শেষ বিকেলে এই জুটি ভাঙলে ২৩৩ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ২৩৩/১০ (তামিম ৩, সাইফ ০, শান্ত ৪৪, মুমিনুল ৩০, মাদমুদউল্লাহ ২৫, মিঠুন ৬৩, লিটন ৩৩, তাইজুল ২৪, রুবেল ১, রাহী ০, এবাদত ০; আফ্রিদি ২১.৫- ৩-৫৩-৪, আব্বাস ১৭-৯-১৯-২, নাসিম ১৬-০-৬১-১, ইয়াসির ২২-২-৮৩-০, সোহেল ৬-২-১১-২)।
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস : ৪৪৫/১০ (শান ১০০, আবিদ ০, আজহার ৩৪, বাবর ১৪৩, আসাদ ৬৫, সোহেল ৭৫, রিজওয়ান ১০, ইয়াসির ৫, আফ্রিদি ৩, আব্বাস ১, নাসিম ২ ; এবাদত ২৫-৬-৯৭-১, আবু জায়েদ ২৯-৪-৮৬-৩, রুবেল ২৫.৫-৩-১১৩-৩, তাইজুল ৪১-৬-১৩৯-২, মাহমুদউল্লাহ ২-০৬-০)।