সাক্ষাৎকার
‘ফুটবলের হারানো গৌরব ফেরানোই মূল লক্ষ্য’
বহুল আলোচিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচনে সভাপতি পদে কাজী সালাউদ্দিনের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন শফিকুল ইসলাম মানিক। দীর্ঘ ৪০ বছর ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত সাবেক এই ফুটবলার। তাই এবার দেশের ফুটবলের উন্নয়নে এগিয়ে আসতে চান তিনি। ফিরিয়ে আনতে চান ফুটবলের হারানো গৌরব। এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাই জানালেন জাতীয় দলের সাবেক এই কোচ।
প্রশ্ন : আপনার প্রতিপক্ষ বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। এমন শক্ত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নির্বাচনে জয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
শফিকুল ইসলাম মানিক : আপনি বলেছেন, উনি (কাজী সালাউদ্দিন) শক্ত প্রতিপক্ষ; কিন্তু আমার কাছে উনাকে হেভিওয়েট প্রার্থী মনে হয়নি। হয়তো উনি নিজেকে এটা মনে করতে পারেন, কিন্তু অন্যদের কাছে উনি গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন। যখন উনি প্রথমবার নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন। গত ১২ বছরের কার্যক্রমে তিনি আগের অবস্থানে নেই। তাই আমি মনে করি, লড়াই করার জন্য এটা একটা সুন্দর জায়গা। কাউন্সিলররাও উনাকে হেভিওয়েট প্রার্থী ভাবছেন না। আমার মনে হয়, উনি সম্মানিত কাউন্সিলরদের সন্তুষ্ট করার ব্যাপারে পিছিয়ে আছেন। এখন দেখা যাক, কাউন্সিলরা হেভিওয়েট প্রার্থী বিবেচনা করবেন নাকি ফুটবলের পথপ্রদর্শক হিসেবে প্রার্থী নির্বাচন করবেন। এ ক্ষেত্রে কাউন্সিলরাই সবকিছু নির্ধারণ করবেন।
প্রশ্ন : অন্য কোনো পদ নয়, সরাসরি সভাপতি পদ বেছে নিলেন কেন?
শফিকুল ইসলাম মানিক : আমার লক্ষ্যই ছিল সভাপতি পদে নির্বাচন করা। তা ঠিক, এটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। তবে মানুষের সঙ্গে যখন কথা হয়, সবারই একটাই প্রশ্ন, ফুটবলের এত খারাপ অবস্থা কেন? এতটা অবনতি কেন? এটার কোনো উত্তর আমরা দিতে পারি না। যারা বিগত দিনে কাজ করেছেন, তাদের থেকে কিছু পাইনি। তাই চ্যালেঞ্জ নিয়েছি কিছু করার। সংগঠন চালানোর অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাস আমার আছে। তাই সরাসরি সভাপতি পদে লড়তে এসেছি।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের ফুটবলের এই দুরবস্থা কাটানোর জন্য কী কী পরিকল্পনা আছে আপনার?
শফিকুল ইসলাম মানিক : আমার মূল পরিকল্পনা হলো ফুটবলের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা। এই বিশ্বাস থেকে এই নির্বাচনে এসেছি আমি। আমি ও আমার সতীর্থ যাঁরা আসবেন, তাঁদের নিয়ে যদি পরিকল্পনা মাফিক ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করতে পারি, তাহলে মানুষের আস্থা বাড়বে। ফুটবলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। সেই জায়গা নিয়ে কাজ করব। তবে ইশতেহার ঘোষণার আগে এখনই আমি কিছু বলে দিতে চাই না। তবে অবশ্যই উন্নতির জন্য আমি যে কাজগুলো করব, সেগুলোতে মানুষ বিশ্বাস রাখবে বলে আমি মনে করি। নির্বাচনের আগে কোনো লোভ দেখাতে চাই না আমি। কাজেই প্রমাণ করতে চাই। কারণ, বাংলাদেশের মানুষ ফুটবলকে ভালোবাসে। ফুটবল এ দেশের মানুষের প্রাণের খেলা। তাই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচনে এতটা নজর রাখছে মানুষ।
প্রশ্ন : খেলোয়াড়দের আস্থা অর্জন করতে কতটা আত্মবিশ্বাসী?
শফিকুল ইসলাম মানিক : খেলোয়াড়রা দলের প্রাণ। খেলোয়াড়রা যেহেতু সবাই আলাদা আলাদা মানুষ, সবার চিন্তাধারাও আলাদা। আমি চেষ্টা করব সবার চিন্তাধারাগুলো এক করার, ঐক্য গঠন করার। সবার পারফরম্যান্সকে একই সুতোয় বাঁধার চেষ্টা করব। তারা যেহেতু ক্লাব ও জাতীয় দলকে সার্ভিস দেবে, সেভাবে তাদের তৈরি করতে হবে। তাদের ভাবনায় উন্নতি আনার চেষ্টা করব। তাদের দিকে আমার সবার আগে নজর দিতে হবে। তারা যদি ৮০ ভাগ পারফরম্যান্স করে, সেটাকে আমি ১০০ ভাগে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। চেষ্টা করব সবাই মিলে এগিয়ে নেওয়ার।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের হারানো গৌরব ফিরে আনতে আপনার কেমন উদ্যোগ থাকবে?
শফিকুল ইসলাম মানিক : আমাদের দেশের ফুটবলে প্রথম দিকে বেশ উন্নতি ছিল। অনেক তারকা খেলোয়াড় ছিল। হয়তো জাতীয় দলে সফলতা কম ছিল, কিন্তু ক্লাব ফুটবলে দারুণ সময় কেটেছে। ক্লাব ফুটবল এ দেশের মানুষকে আনন্দ দিয়েছে। তবে হ্যাঁ, জাতীয় দলে ভালো রেজাল্ট ছিল না। তবে এখন আর অবস্থাটা সে রকম নেই। আমাদের ফুটবলে ঐতিহ্য ছিল, সেটা আমরা হারিয়েছি। এখন ফুটবলের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনাটাই একমাত্র উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন : কাজী সালাউদ্দিনের বিপক্ষে এই লড়াইটা নিয়ে কতটা রোমাঞ্চ কাজ করছে আপনার?
শফিকুল ইসলাম মানিক : না, রোমাঞ্চ নেই। আমি মনে করি, এটা আমার জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সালাউদ্দিন ভাইয়ের ইমেজ ছিল, সেটা উনি হারিয়েছেন। আর আমি ইমেজ অর্জন করে একটা লড়াইয়ে যাচ্ছি। তাই এই ইমেজ ধরে রাখাই এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ। এখানে আমার হারানোর অনেক কিছু আছে। আমি যোগ্য সেটার প্রমাণ দিতেই এসেছি।
প্রশ্ন : সালাউদ্দিন অনেক বড় তারকা, তিনবারের সভাপতি; কিন্তু ক্ষমতায় এসে ফুটবলের উন্নয়নে তাঁর ব্যর্থতা কোথায় দেখছেন?
শফিকুল ইসলাম মানিক : সালাউদ্দিন ভাই আমার কোচ ছিলেন। সেরা খেলোয়াড় ছিলেন। খেলায় আমি তাঁকে অনুকরণ করতাম। কিন্তু সংগঠন হিসেবে তাঁর কাজ ভালো লাগেনি। সেই জায়গায় তিনি ব্যর্থ। মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেননি। যখন নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখন তাঁর প্রতি মানুষের অনেক বিশ্বাস ছিল। কিন্তু তিনি সেটা হারিয়েছেন।
প্রশ্ন : সালাউদ্দিনের বিপক্ষে বেশ সমালোচনা হচ্ছে, এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য?
শফিকুল ইসলাম মানিক : মানুষের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নেই, সেটা আমরাও জানি। ১২ বছর আগে উনার কাছে সবার যেই প্রত্যাশা ছিল, সেই জায়গায় যখন তিনি মানুষকে খুশি করতে পারেননি, ফুটবলের উন্নতির জন্য যা করা দরকার তা করতে পারেননি, তাই হয়তো মানুষ আন্দোলন করছেন। শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নয়, পথে-ঘাটে সাধারণ মানুষদের মাঝেও ফুটবল নিয়ে এখন অনীহা তৈরি হয়েছে। আমি মনে করি, এটাই চরম ব্যর্থতা। এখন যিনি চেয়ারে বসে আছেন, তিনি যদি এটা না বুঝতে পারেন, তাহলে মানুষ বলবেই। এ ছাড়া কাউন্সিলররা কী মনে করেন, সেটাই দেখার। তাদের চিন্তাধারার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের ফুটবলভক্তদের উদ্দেশে কিছু বলুন?
শফিকুল ইসলাম মানিক : আপনাদের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসাটা সব সময় থাকুক। আমি নিজেই একজন ফুটবলপ্রেমী। আপনারা সবাই আমাকে দোয়া করবেন। আমার ওপর আস্থা রাখবেন। আপনাদের ভাবনার জায়গায় আমি প্রবেশ করতে চাই। কাউন্সিলররা যেন তাদের বিবেক দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেন, সেই দোয়া করবেন। আমি কথা দিচ্ছি, আমি ফুটবলে সময় দেব। আমার যতটুকু অভিজ্ঞতা বা ফুটবল জ্ঞান আছে, সবটুকু আমি উজাড় করে দেব। আপনারা শুধু দোয়া করবেন। হয়তো রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়, তবে বাংলাদেশের ফুটবলের গ্রাফটা উন্নতির দিকে যাবে বলে আমি কথা দিচ্ছি।