জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ব্যবধানে হারাল বাংলাদেশ
ব্যাটে-বলের উজ্জ্বলতায় ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিনই ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। আজ মঙ্গলবার চতুর্থ দিন স্পিনার নাঈমের ঘূর্ণিতে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি স্বাগতিকদের। নাঈমের দুর্দান্ত বলে চতুর্থ দিনেই জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ও ১০৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে টানা ছয় ম্যাচ পর টেস্টে জয়ের স্বাদ পেল লাল-সবুজের দল।
আজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেশনেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১৮৯ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। বল হাতে দ্বিতীয় ইনিংসে নাঈম নেন পাঁচ উইকেট। প্রথম ইনিংসের ৪ উইকেটসহ মোট ৯টি উইকেট নিয়ে সেরা বোলার হয়েছেন নাঈম। এ ছাড়া ব্যাট হাতে ডাবল সেঞ্চুরি করেন মুশফিকুর রহিম ও সেঞ্চুরি করেন অধিনায়ক মুমিনুল হক।
গতকাল সোমবার শেষ বিকেলেই স্পিন দিয়ে জিম্বাবুয়েকে চেপে ধরেন নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৯ রানের মাথায় দুই উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। আজ চতুর্থ দিনও শেরেবাংলায় দাপট দেখিয়েছেন স্পিনাররা। দিনের প্রথম ঘণ্টায় অতিথিদের দুই উইকেট তুলে নেন বাংলাদেশি স্পিনাররা।
দিনের শুরুতে জিম্বাবুয়ে শিবিরে আঘাত হানেন তাইজুল। মাঠে নামার ২২ মিনিটের মাথায় তাইজুলের বলে মিঠুনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান জিম্বাবুয়ে ওপেনার কাসুজা। ফেরার আগে ১০ রান করেন তিনি। এরপর ব্রেন্ডন টেইলরকে ফিরিয়ে অতিথিদের টপঅর্ডার গুঁড়িয়ে দেন নাঈম। এই নিয়ে তিনটি উইকেট শিকার করলেন তরুণ এই অফস্পিনার। এরপর রানআউটে কাটা পড়েন আরভিন। বিরতির আগে মোট তিনটি উইকেট হারায় অতিথিরা।
বিরতির পর দ্বিতীয় সেশনে বাকি উইকেটগুলো নিয়ে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। এরআগে প্রথম ইনিংসেও সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি।
এর আগে গতকাল সোমবার তৃতীয় দিনের শুরুটা সেঞ্চুরিতে রাঙান মুমিনুল হক। তুলে নেন অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম ও ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি। মুমিনুল ফিরলে ডাবল সেঞ্চুরির উল্লাস করেন মুশফিকুর রহিম। দুই সেঞ্চুরিয়ানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর দিনের শেষভাগে চমক বল হাতে চমক দেখান নাঈম হাসান। ফলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ২৮৬ রানের বিশাল লিড নিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
মুমিনুল হক ও মুশফিকের ব্যাটে ৬ উইকেটে ৫৬০ রানে ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। এরপর দিনের শেষের দিকে ব্যাট করতে নেমে ২ উইকেট হারিয়ে ৯ রানে দিন শেষ করে জিম্বাবুয়ে। ২৮৬ রানে পিছিয়ে থেকে আজ মঙ্গলবার চতুর্থ দিন শুরু করে সফরকারীরা।
গতকাল ব্যাট করতে নেমে প্রথম সেশনেই সেঞ্চুরির দেখা পান মুমিনুল। ডোনাল্ড ট্রিপিয়ানোকে কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরিতে পৌঁছান তিনি। টেস্টে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের এটি নবম সেঞ্চুরি। ২০৮ মিনিটে ১৫৬ বলে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন মুমিনুল, যাতে ছিল ১২টি বাউন্ডারি।
১৪ ইনিংস খেলার পর সেঞ্চুরি পেয়েছেন মুমিনুল। শেষ সেঞ্চুরি করেছেন ২০১৮ সালের নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
এরপর লাঞ্চ থেকে ফিরেই সেঞ্চুরির দেখা পান মুশফিক। অ্যানস্লের বলে বাউন্ডারি মেরে তিন অঙ্কের ঘরে যান এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান।
মুশফিকের টেস্ট ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি এটি। শতকের ঘরে যেতে মুশফিক খেলেন ১৬০ বল। ২১৩ মিনিটের ইনিংসে ছিল ১৮টি বাউন্ডারি। শেষ এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুরেই সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিক। ২০১৮ সালে সে ইনিংসে মুশফিক ২১৯ রানের ইনিংস খেলেছেন। দীর্ঘ ১০ ইনিংস পর আবারো সেঞ্চুরির দেখা পেলেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার।
মুমিনুলের শতরানের ইনিংস থামে লাঞ্চের পর। লাঞ্চ থেকে ফিরে ১৩২ রানে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক। ৩২৮ মিনিট ব্যাট করে মুমিনুল খেলেছেন ২৩৪ বল। যার মধ্যে আছে ১৪টি বাউন্ডারি। মুমিনুলের পর ব্যাট করতে নামা মিঠুন অবশ্য টিকতে পারেননি। ২৩ বল মোকাবিলা করে তিনি ফিরে যান ১৭ রান।
এরপর লিটনের সঙ্গে জুটি বাধেন মুশফিক । শেষ সেশনে ২৫৪ বলে ১৫০-এর ঘরে যান মুশফিক। এরপর ৩১৫ বলে তুলে নেন ক্যারয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরির পরপরই ইনিংস ৫৬০ রানে ইনিংস ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ। ২০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়েন মুশফিক।
দিনের শেষের দিকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে জিম্বাবুয়ে। এরপর দুই উইকেটে ৯ রান নিয়ে দিন শেষ করে অতিথিরা।
এর আগে একমাত্র টেস্টে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২৬৫ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় দিন ব্যাট প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২৪০ রানে দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস : ২৬৫/১০
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৫৬০/৬ (তামিম ৪১, সাইফ ৮, শান্ত ৭১, মুমিনুল ১৩২, মুশফিক ২০৩, মিঠুন ১৭, লিটন ৫৩, তাইজুল ১৪*; সিকান্দার ৩০-২-১১১-১, ট্রিপিয়ানো ৩০-৬-৯৬-১, নাইছু ২৭-৩-৮৭-১, তসুমা ২৫-২-৮৫-১, আন্ডিলুগু ৪২-৪-১৭০-২)।
জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংস : ১৮৯/১০ (কেভিন ১০, মাসাভরে ০, আরভিন ৪৩, সিকান্দার ৩৭, টেইলর ২৭, মারুমা ৭, চাকাভা ৪২, ট্রিপিয়ানো ০, চার্লটন ০, ভিক্টর ৬, অ্যানস্লে ৪; এবাদত ৫-১-১৬-০, রাহি ৪-৩-৪-০, নাঈম ২৪-৬-৮২-৫, তাইজুল ২৪.২-৭-৭৮-৩)।
ফল : ইনিংস ও ১০৬ রানে জয়ী বাংলাদেশ।