‘বাংলাদেশের আগে ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না’
ঐতিহাসিক ইডেন গার্ডেনসে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে একেবারেই বিপর্যস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। ১০৬ রানে প্রথম ইনিংস গুটিয়ে নেয় মুমিনুল-মুশফিকরা। তাই সমালোচনা ঝড় ওঠে, আগে ব্যাটিংয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল কিনা। অবশ্য বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গো মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত মোটেও ভুল ছিল না।
আজ শুক্রবার কলকাতায় প্রথম দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে রাসেল ডমিঙ্গো বলেন, ‘ইডেন গার্ডেনসের এই উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ। তাই আমাদের ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না। এখানে ৯৯ ভাগ সময়েই যে কেউ আগে ব্যাটিং নেবে। আমি নিজেও এই সিদ্ধান্ত ভুল বলতে নারাজ।’
তবে বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতার কথা স্বীকার করলেন বাংলাদেশ কোচ, ‘অবশ্য বলতেই হবে আমাদের ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হয়েছে। ভারতের দুর্দান্ত বোলিংয়ের বিপক্ষে তারা একেবারেই অসহায় ছিল। আমরা আসলেও খুবই বাজে ক্রিকেট খেলেছি।’
ভারতের বোলারদের প্রশংসা করে ডমিঙ্গো বলেন, ‘সত্যিই ভারতের বোলিং লাইনআপ দুর্দান্ত। এমন বোলিংয়ের বিপক্ষে ভালো করা সত্যিই কঠিন। তাদের ব্যাটিং লাইনআপও ভালো।’
ইডেন টেস্টে ভারতীয় বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সামনে প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানেই অলআউট হয় বাংলাদেশ। শেষ সেশনে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১৭৪ রানে প্রথম দিন শেষ করেছে ভারত। দিন শেষে উইকেটে ছিলেন বিরাট কোহলি (৫৯) ও অজিঙ্কা রাহানে (২৩)। সাত উইকেট হাতে নিয়ে ভারতের লিড ৬৮ রানের।
ইডেনে আজ বিশেষ কয়েনের টসে জিতে ম্যাচটিতে আগে ব্যাট করার সাহসী সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে চরম ব্যর্থতার প্রমাণ দিলেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা।
ভারতীয় বোলারদের সামনে রীতিমত অসহায় হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ইনিংসের শুরুতেই ইমরুল কায়েসকে হারায় বাংলাদেশ। সপ্তম ওভারের প্রথম বলে ইমরুল কায়েসকে এলবির ফাঁদে ফেলার জোরালো আবেদন করেন ইশান্ত শর্মা। স্বাগতিক পেসারের আবেদনে সাড়াও দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে সেই যাত্রায় বেঁচে যান এই বাংলাদেশি ওপেনার। কিন্তু একই ওভারের ৩ নম্বর বলে আর নিজেকে রক্ষা করতে পারলেন না তিনি। ইশান্তর বলে সেই এলবির ফাঁদে পড়েই উইকেট বিলিয়ে দিলেন ইমরুল। এর আগের ম্যাচেও দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ১২ রান করেছিলেন তিনি।
দলকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারলেন না অধিনায়ক মুমিনুল হকও। স্লিপে রোহিত শর্মার অসাধারণ ক্যাচে শূন্য রানে ফিরলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তিনে ব্যাট করতে নেমে মোহাম্মদ মিঠুনও ফিরলেন শূন্য রানে। তিন বলের মধ্যে দুই উইকেট নেন উমেশ যাদব।
ব্যাটিংয়ের মূল আস্থা মুশফিকুর রহিমও হাল ধরতে পারেননি। ইন্দোরে বাংলাদেশের মান রাখা মুশফিক ঐতিহাসিক টেস্টে ফিরলেন শূন্য রানে। এরপরে একে একে ফিরলেন সাদমান ইসলাম ও মাহমুদউল্লাহ । ৬০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে উইকেটে ভীষণ চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
এর মধ্যে সাবলীল ব্যাট করছিলেন লিটন দাস। সতীর্থদের ব্যর্থতার মাঝে ৫ বাউন্ডারিতে ২৪ রানে ব্যাট করছিলেন। তখনই মোহাম্মদ শামির বলে আহত হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় লিটনকে। মাথায় আঘাত পাওয়া লিটনকে পরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
লিটনের পরিবর্তনে ‘কানকাসন’ পদ্ধতিতে বদলি ব্যাটসম্যান নামানোর সুযোগ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু শঙ্কার কথা হলো, বাংলাদেশের স্কোয়াডে একজনও বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান নেই। যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই বোলার। শেষ পর্যন্ত এঁদের মধ্যে থেকে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নামানো হয় মিরাজকে। এই স্পিনারই এখন বাংলাদেশের প্রথম বদলি ক্রিকেটার।
কিন্তু বদলি খেলোয়াড় মিরাজও তেমন ভালো করতে পারেননি। ইশান্ত শর্মার বলে ৮ রানে ফিরেন তিনি। টিকলেন না বাকিরাও। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত দ্বিতীয় সেশনেই ১০৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এর মধ্যে মাথায় আঘাত পান নাঈম হাসান। তার বদলি হিসেবে সুযোগ পান তাইজুল ইসলাম।
ভারতের হয়ে বল হাতে ২২ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট নেন ইশান্ত শর্মা। ২৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট সংগ্রহ করেন উমেশ যাদব। দুটি উইকেট নেন মোহাম্মদ শামি।
বিপরীতি প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে ধাক্কা খায় ভারত। পেসার আল-আমিন হোসেনের বলে সাজঘরে ফিরে যান আগের ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো মায়াঙ্ক আগরওয়াল। টিকেননি রোহিত শর্মাও। এবাদতের বলে আউট হন তিনি। এরপর চেতেশ্বর পুজারাকে নিয়ে ভারতকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যান স্বাগতিক অধিনায়ক বিরাট কোহলি।