লুটেরাদের শাস্তি না হলে ব্যাংকের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরবে না : আবু আহমেদ

ইসলামী ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকে ব্যাপক লুট হয়েছে। যারা লুট করেছে তাদের শাস্তি দিতে হবে। না হলে জনগণের মধ্যে ব্যাংকের প্রতি আস্থা ফিরবে না বলে মন্তব্য করেছেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আবু আহমেদ। তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার কারণেই দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির ৯০ শতাংশই অল্প কয়েকজনের দখলে রয়েছে।
আজ বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুর ১২টায় রাজধানীর পল্টনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) নিজস্ব কার্যালয়ে এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবু আহমেদ এসব কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি গোলাম সামদানীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবু আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ডিবিএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সাইফুদ্দিন।
পুঁজিবাজারের ক্ষতির হোতা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মন্তব্য করে আবু আহমেদ বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ নিশ্চিত করতে পারেনি বিএসইসি। ফান্ড ম্যানেজার টাকা পয়সা নিয়ে ভেগে যায় কীভাবে? এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাই দায় এড়াতে পারে না। মিউচুয়াল ফান্ড ও পুঁজিবাজারের ক্ষতির পেছনে বড় দায়ী বিএসইসি নিজেই।
ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংকে লুট হয়েছে মন্তব্য করে আবু আহমেদ বলেন, যারা লুট করেছে তাদের শাস্তি দিতে হবে। না হলে জনগণের মধ্যে ব্যাংকের প্রতি আস্থা ফিরবে না। বড় বড় কোম্পানির মালিকরা এই লুটপাট করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কীভাবে পারল ব্যাংক দখল করার সুযোগ দিতে? ব্যাংকে বড় ঋণ কেলেঙ্কারি কীভাবে হয়। এটা দেখার দায়িত্ব তো তাদের।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার কারণেই দেশের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির ৯০ শতাংশই অল্প কয়েকজনের দখলে চলে গেছে জানিয়ে আবু আহমেদ বলেন, এভাবে অর্থনীতি চালালে তো সাধারণ মানুষের দুর্দশা হবেই। সাধারণ মানুষরা ভোগান্তিতে থাকবেই।
আবু আহমেদ বলেন, বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবো সে কোম্পানি সম্পর্কে যদি নিজে না জানি তাহলে কেন বিনিয়োগ করলাম। নলেজের কোন বিকল্প নেই। নলেজ হচ্ছে এক ধরনের সম্পদ।
পুঁজিবাজারের আরেকটি বড় দুর্নীতির উৎস হচ্ছে তালিকাভুক্তির আগে প্লেসমেন্ট শেয়ার বাণিজ্য মন্তব্য করে আবু আহমেদ বলেন, প্লেসমেন্ট শেয়ার আরেকটি বড় দুর্নীতির জায়গা। এটা নিয়েও রেগুলেটর কাজ করতে পারেনি। ভালো আইপিও আসছে না, আনার চেষ্টাও করা হয়নি। ইনটেনসিভ না থাকলে ভালো কোম্পানি এখানে আসবে কেন? এখানে ভালো কোম্পানি আনতে হলে কোম্পানিকে ভালো কিছু সুবিধা দিতে হবে। এই সুযোগটাও এতদিনে ব্যবস্থা করতে পারেনি বিএসইসি। এ কারণে ৩৩ লাখ বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব এখন ১৩ লাখে নেমে এসেছে।
দেশের পুঁজিবাজার সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আনতে বিশেষ ছাড় বা প্রণোদনা দিয়ে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্তির পরামর্শ দিয়ে আবু আহমেদ বলেন, বিদেশি ও দেশের বড় কোম্পানিকে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পারসু করতে হবে। সিস্টেমকে ইনসেনটিভ দেওয়া লাগবে, নইলে তারা আসবে না। বহুজাতিকের পাশাপাশি দেশেও অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে। তাদেরকে বাজারে আনতে হলে ‘সিস্টেম ইনসেনটিভ’ দিতে হবে, নইলে তারা আসবে না।