আপনার জিজ্ঞাসা
বাটি চালান বা তাবিজ করা কি ইসলাম সম্মত?
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তরের অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৮৫৯তম পর্বে চিঠিতে বাটি চালান দেওয়া বা পেটের ভেতর থেকে তাবিজ বের করার বিষয়ে ইসলামের বিধান সম্পর্কে লালবাগ রোড থেকে জানতে চেয়েছেন মো. জাহিদুল হাসান । অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : কোনো হুজুর বা এ ধরনের কারো মাধ্যমে পেটের ভেতর থেকে তাবিজ বের করা কি ইসলাম সম্মত ? কোনো ঘরের মধ্য থেকে তাবিজ বের করার ইসলামি পদ্ধতি কী? কোনো হুজুর যদি বাটি বা এ ধরনের জিনিস ঘরের মধ্যে চালান দিয়ে তাবিজ উদ্ধার করে তবে কি তা জায়েজ হবে?
উত্তর : ইসলামি তরিকা অনুসারে এ কাজগুলো শুদ্ধ নয়। তার কারণ হচ্ছে পেটের থেকে তিনি যে তাবিজটি উদ্ধার করলেন, তিনি কিভাবে সেটি বের করলেন? কারণ অপারেশন ছাড়া তা সম্ভব নয়। এই ব্যক্তি বা হুজুর আদৌ কোনো অলৌকিক ক্ষমতাধারী নন যে তিনি হাত দিয়ে ইশারা করলেই পেট থেকে তাবিজ বেরিয়ে আসবে।
সুতরাং এটি আমাদের বুঝতে হবে যে, বস্তু জগতের বিষয়গুলোকে ট্রিটমেন্ট করার বিষয়টি বস্তুর সাথে সম্পৃক্ত। এটি বস্তু দিয়েই ব্যাখ্যা করতে হবে। কারণ এটাকে অলৌকিক বিষয় দিয়ে ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নেই। আর অলৌকিক বিষয় দিয়ে যদি কেউ ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে তাহলে তাকে নিশ্চিত হতে হবে যে এই লোক এ ধরনের কোনো অলৌকিক ক্ষমতাধারী। আসলে সে তা নয়। তাই সে পেট থেকে তাবিজ বের করে আনবে অথচ অপারেশন করাবে না এটি সম্ভব নয়। এটি শুধু লোকদের চোখে ধুলা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই না।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, কোথায় তাবিজ আছে, এটি অদৃশ্য এবং অজানা। জানা হলেও বের করা কঠিন। যেমন, কেউ যদি বলে এই ঘরের ভেতর তাবিজ আছে, কিন্তু ঘরের কোথায় আছে তা না জানা থাকলে খুঁজে বের করা কষ্টকর। কিন্তু যদি বিষয়টি অজানা হয় উপরন্তু অদৃশ্য হয় তাহলে এটাকে বাটি চালান দিয়ে অথবা ফুঁ দিয়ে অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে এই অজানা তথ্য বের করা ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী মোটেও শুদ্ধ নয়। কারণ এই অদৃশ্যের কোনো জ্ঞান কারো নেই। এর একমাত্র জ্ঞান রাখেন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা।
তাই এই বিশ্বাস করা একেবারেই শিরক, আকিদা। কোনো ব্যক্তি এই কাজ করতে সক্ষম বা তার ক্ষমতা আছে এই বিশ্বাস হচ্ছে নিজের ইসলামকে বিনষ্টকারী বিষয়। বরং বেশির ভাগ সময় এর মাধ্যমে মানুষ প্রতারিত হয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী, তা জানতে হবে।
যদি এমন কোনো আশংকা থেকে থাকে তাহলে ইসলামি চিন্তাধারা অনুযায়ী মেনে নিতে হবে। কোনো জিনিস হারিয়ে গেলে তার খোঁজ করতে হবে, তালাশ করতে হবে। যদি খোঁজ করে কোথাও না পাওয়া যায় তাহলে চতুর্দিকে সন্ধান করতে হবে। তাতেও যদি না পাওয়া যায় তাহলে ধৈর্য ধারণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া চাইতে হবে, যদি কেউ জিনিসটি পেয়ে থাকে তাহলে যেন সে তা প্রত্যাবর্তন করে, ফিরিয়ে দেয়। এই কাজ জায়েজ রয়েছে। অন্যথায় কোনো গণকের কাছে, দৈবকদের কাছে, জাদুকরের কাছে অথবা এ জাতীয় দৈব কাজের সাথে যারা জড়িত আছে তার কাছে হারিয়ে যাওয়া বস্তু ফিরে পাওয়ার আশা করা এটি ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী শুধু হারামই নয় এটি শিরকি কাজ।