আপনার জিজ্ঞাসা
তাবলিগ জামাতের ভিত্তি কী?
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৮৫২তম পর্বে তাবলিগ জামাত সম্পর্কে ই-মেইলে রংপুর থেকে জানতে চেয়েছেন আমিনুল ইসলাম স্বাধীন। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : আমি একজন কলেজছাত্র। নিয়মিত নামাজ ও ধর্মকর্ম পালনের চেষ্টা করি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, তাবলিগের তিন দিন, সাত দিন ও ৪০ দিনের চিল্লার ভিত্তি কী?
উত্তর : কোরআন ও হাদিসে এর কোনো ভিত্তি বা দলিল নেই। তবে ভিত্তি বলতে যদি তাদের ব্যক্তিগত গবেষণার বিষয় বলেন, তাহলে সেটা হতে পারে। এটি নিছক কোনো ব্যক্তির গবেষণা ছাড়া আর কিছুই না। কোনো ব্যক্তি যদি তার ব্যক্তিগত গবেষণার মাধ্যমে, চিন্তাধারার মাধ্যমে এটাকে তিন দিন, চার দিন, সাত দিন বা ৪০ দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেন, এটি তার জন্য হারাম বা অবৈধ বিষয় নয়। তার অভিজ্ঞতার আলোকে এটি করা জায়েজ।
কিন্তু এই নির্ধারিত সময়টাকে যদি তিনি শরিয়তের বিষয় অথবা তাহাব্বুদ ইবাদত সম্পৃক্ত বিষয় হিসেবে অথবা ইবাদত হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং এটাকে ইবাদতের ফজিলতের মর্যাদায় নিয়ে যান, তাহলে এটি ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী গর্হিত কাজ, বেদাত এবং হারাম। এটি এই পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। কারণ, এটি রাসূল (সা.)-এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং এটাকে যদি কেউ ফজিলত হিসেবে প্রমাণ করতে চান, তাহলে তিনি সবচেয়ে নিকৃষ্ট হারাম কাজে লিপ্ত হয়েছেন। এটি মোটেও জায়েজ না। কারণ এর কোনো দলিল নেই।
১৯৪০ সালে তাবলিগ জামাতের গবেষণা শুরু হয়। সুতরাং এটি সুস্পষ্ট যে, রসূল (সা).-এর হাদিসের মধ্যে এর জন্য নির্দিষ্ট দলিল পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
কোরআনে কারিমের সূরা আল-মায়েদার ৪ নম্বর আয়াতে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, ‘ইসলাম পরিপূর্ণ।’ পরিপূর্ণ বলতে বলা হয়েছে দুটি মৌলিক কথা। একটি হচ্ছে, কেয়ামত পর্যন্ত এমন কোনো বিষয় মানুষের সামনে আসবে না, যে বিষয়ের সমাধান ইসলামের মধ্যে নেই। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, পরিবেশ বিষয়ে মৌলিক বক্তব্য কোরআন সুন্নাহে রয়েছে। আমরা সবাই হয়তো তা না-ও জানতে পারি। কিন্তু ইসলামে এর পূর্ণাঙ্গ সমাধান রয়েছে।
দ্বিতীয় হচ্ছে, এমন কোনো ব্যক্তির আর প্রয়োজন নেই, যে ইসলামের মধ্যে নতুন করে পরিপূর্ণতা আনতে পারে বা নতুন করে কোনো বিষয় সংযোজন করতে পারে। সুতরাং কোনো ধরনের সংযোজন ইসলামের ভেতরে আসার কোনো অবকাশ নেই। তাই কেউ যদি মনে করে, আমি নতুন করে ইসলামের মধ্যে সংযোজন করেছি, তাহলে ইসলামের বিধানে সে ব্যক্তি হচ্ছে দাজ্জাল। অর্থাৎ ইসলামের ভেতর সে মিথ্যা সংযোজন করেছে, যার অধিকার কারো নেই। এখন আমরা যারা আছি, তারা ইসলামের জন্য সংযোজনকারী নই, আমরা হচ্ছি অনুসারী।