নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান “আপনার জিজ্ঞাসা”। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দ‍র্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

আপনার জিজ্ঞাসার ২১৭৩তম পর্বে আমাদের প্রিয় নবী (সা.) হানাফি, শাফেয়ি, মালেকি না হাম্বলি ছিলেন, সে সম্পর্কে মহাখালী থেকে ই-মেইলে জানতে চেয়েছেন আলমগীর হোসেইন। অনুলিখন করেছেন জহুরা সুলতানা।

প্রশ্ন : আমাদের প্রিয় নবী (সা.) কে ছিলেন? তিনি হানাফি নাকি শাফেয়ি নাকি মালেকি নাকি হাম্বলি ছিলেন?

উত্তর : নাউজুবিল্লাহি মিন জালেক! আপনি তো অদ্ভুত প্রশ্ন করেছেন।

নবীর (সা.) মৃত্যুর ৮০ বছর পর আবু হানিফার (রহ.) জন্ম হয়েছে। সুতরাং প্রশ্নই আসে না তিনি হানাফি ছিলেন, নাউজুবিল্লাহি মিন জালেক!

নবী (সা.) তো নয়ই, নবীর সাহাবিদের মধ্যেও কেউ হানাফি, শাফেয়ি, মালেকি বা হাম্বলি ছিলেন না। তাবেয়িদের মধ্যে একের অর্ধেক ব্যক্তিও হানাফি, শাফেয়ি, মালেকি বা হাম্বলি ছিলেন না।

হানাফি, শাফেয়ি, মালেকি বা হাম্বলির প্রশ্ন এসেছে মূলত হিজরি চতুর্থ শতাব্দীর পর থেকে। যেহেতু বিভিন্ন ধরনের চিন্তা তখন সংকলিত হয়েছে, তাই এগুলো আলোচনায় এসেছে। এমনকি ইমাম আবু হানিফাসহ (রা.)  অন্য তিনজনের কেউই নিজে সুনির্দিষ্ট কোনো মাজহাবের অনুসরণ করেননি। তারা আল্লাহ ও রাসূলের অনুসরণ করেছেন।

এটি ওলামায়ে কেরামদের গবেষণা। এই গবেষণার ওপর নির্ভর করে যেখানেই সংকীর্ণতা এসেছে সেখানেই এই মাজহাবি দ্বন্দ্ব, কলহ, বিদ্বেষ, বাড়াবাড়ি, সীমালঙ্ঘন শুরু হয়েছে। কিন্তু ওলামায়ে কেরামরা কখনোই সংকীর্ণ ছিলেন না।

এই চারজন ছাড়াও অন্য কোনো ইমামের কেউই এই সংকীর্ণতার কথা বলেননি। তাঁরা সংকীর্ণমনা ছিলেন এমন দলিল কেউ দিতে পারবেন না।

সুতরাং, এই বক্তব্যগুলো থেকে আমাদের দূরে সরে আসতে হবে, এগুলো নিকৃষ্ট বক্তব্য এবং সংকীর্ণতা। আল্লাহর নবী (সা.) কেয়ামত পর্যন্ত আগত মানুষের কাছে প্রেরিত হয়েছেন, তিনি ওহির মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছেন। তিনি কারো অনুসরণ করেছেন এমন প্রশ্নই আসে না। নবীজির (সা.) কোনো বিষয়ে গবেষণার প্রয়োজন ছিল না। কারণ তিনি সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে ওহি পেতেন। তার কোনো একটি বক্তব্যও গবেষণা ছিল না, প্রতিটিই ছিল ওহি।

আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তিনি নিজের প্রবৃত্তি থেকে একটি কথাও বলতেন না, যা বলতেন সবটাই ওহি।’ ওহির মাধ্যমে রাসুল (সা.) বক্তব্য দিয়েছেন, এটি প্রমাণিত সত্য এবং কোরআনের মাধ্যমে বলা হয়েছে।

তাই নবীজি (সা.) কার অনুসরণ করেছেন! এই বক্তব্যগুলো দেওয়ার আগে আমরা খুব সতর্কতা অবলম্বন করব। এগুলো কিন্তু ধৃষ্টতার মধ্যে পড়ে যায়।  রাসূলের (সা.) হাদিস সবগুলোই ওহি।