আপনার জিজ্ঞাসা
বেহুঁশ অবস্থায় তালাক দিলে গ্রহণযোগ্য হবে?
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মদ জাকারিয়া।
জুমাবারের বিশেষ আপনার জিজ্ঞাসার ৫৩৬তম পর্বে বেহুঁশ অবস্থায় তালাক দিলে গ্রহণযোগ্য হবে কি না, সে সম্পর্কে জানতে চেয়ে ঢাকা থেকে টেলিফোন করেছেন মুক্তি। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : আমার পরিচিত এক ভাই, তাঁর ঘরে তিন সন্তান। উনি একটি বিপদে পড়ে গেছেন, অন্য ধর্মের এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে গেছেন। তিনি এতটাই জড়িয়ে গেছেন যে আমরা তাঁকে ফেরাতেই পারছি না। তিনি তাঁর মাকে আগে অনেক শ্রদ্ধা করতেন, এখন সেই মাকেও কঠিন কথা বলতে কষ্ট পান না। রাগের মাথায় তাঁর স্ত্রীকে তিন তালাকও দিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু সেই মুহূর্তে তাঁর কোনো হুঁশ ছিল না, পরে তিনি তালাকের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এটি কি আসলেই তালাক হয়ে যাবে?
উত্তর : নিঃসন্দেহে আপনার জন্য এবং আপনার পরিবারের জন্য এ ধরনের পরিস্থিতি কষ্টকর। একজন মানুষ হঠাৎ করেই বিপদগ্রস্ত হয়ে গেছে বা তাঁকে কেউ বিপথে নিয়ে গিয়েছে। আপনারা তাঁকে ভালো করে বুঝিয়ে বলুন, সেই মহিলা যদি মুসলিম না হয়, তাঁকে মুসলিম বানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন, এতে অন্তত পরিবারটি টিকে থাকবে। আর সেটি যদি না হয়, যেভাবেই হোক শক্ত হাতে আপনাদের সেটি সামাল দিতে হবে।
তিনি যে রাগের মাথায় একসঙ্গে তিন তালাক দিয়েছেন, সে সময় যদি তিনি হুঁশে থাকেন, তাহলে এখানে এক তালাক হয়ে যাবে। আর যদি হুঁশে না থাকেন, তাহলে কোনো তালাকই হবে না, এক তালাকও না। আপনি যেহেতু বলেছেন, তাঁকে জিজ্ঞাসা করার পর তিনি বলেছেন যে তালাক দেননি, তাহলে তিনি আসলেই তালাক দেননি। অতএব তিনি বেহুঁশ ছিলেন, বেহুঁশ থাকা অবস্থায়, অর্থাৎ যার হিতাহিত জ্ঞান থাকে না, ভালো-মন্দ ঠিক রাখতে পারে না, এ রকম অবস্থায় যে কেউ তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিলে সেটি তালাক হবে না। অবশ্যই তাঁকে হুঁশ অবস্থায় তালাক দিতে হবে। শরিয়তের প্রতিটি কাজই হুঁশ অবস্থায় করতে হয়, নামাজ-জাকাত সবকিছুই হুঁশ অবস্থায় করতে হবে।
আপনি আপনার ভাইকে বোঝান, আরো যারা মুরুব্বি আছে তাঁদের নিয়ে বসেন, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘দুদিক থেকে লোক নিয়ে বসেন, মুরুব্বি অথবা সমাজকে নিয়ে বসেন’, এভাবে বসে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করুন যে তিনি আসলে কী চান। বাড়াবাড়ি না করে তাঁর চাওয়াটাও আপনারা শুনুন, তিনি যদি বিয়ে করতে চান, সেই বিধর্মী মেয়ে যদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। শরিয়তে একাধিক বিয়ে বৈধ করা হয়েছে। মূল সমস্যা ও কারণটাও বুঝতে হবে, রাগারাগির মধ্যে গেলে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। আপনারা আগে কারণটি বোঝেন, তারপর সমাধানের চেষ্টা করুন, আশা করি আল্লাহতায়ালা এই সমস্যার একটি উত্তম সমাধান দিয়ে দেবেন।