পিএইচপি কুরআনের আলোয় চ্যাম্পিয়ন হাফেজ বশির
হিফজুল কুরআনভিত্তিক দেশের সবচেয়ে বড় রিয়েলিটি শো পিএইচপি কুরআনের আলো প্রতিভার সন্ধানে ২০২১-এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে হবিগঞ্জের হাফেজ বশির আহমেদ। প্রথম রানার আপ হয়েছে নেত্রকোনার হাফেজ লাবীব আল হাসান। দ্বিতীয় রানার আপ হয়েছে কিশোরগঞ্জের হাফেজ মাহমুদুল হাসান আশরাফী। চতুর্থ হয়েছে সিলেটের হাফেজ সালমান আল মাহমুদ।
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এনটিভির স্টুডিওতে অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একে একে সেরা প্রতিযোগীদের নাম ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে সেরা প্রতিযোগীর নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে হাফেজ বশির আহমেদ। অনুষ্ঠানটির মিডিয়া পার্টনার এনটিভি।
অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘অনেক অনুষ্ঠানে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। তবে এ অনুষ্ঠানের মতো এত সুন্দর আয়োজনে উপস্থিত হতে পেরে গর্বিত ও নিজেকে ধন্য মনে করছি। যারা এ আয়োজন করেছে, তাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামের তথা কুরআনের সব আয়োজনে সহযোগিতা করে আসছেন। ভবিষ্যতে এসব কুরআনের হাফেজদের জন্য আমরা চেষ্টা করব কিছু করার।’
অতিথি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে আমার এ অনুষ্ঠানে আসার সুযোগ হয়েছে। এ জন্য আমি গর্বিত ও আনন্দিত। ছোট ছোট এসব শিশুদের মুখে কুরআনের এসব তেলাওয়াত শুনলে মনটা অনেক ভালো হয়ে যায়। ভবিষ্যতে এসব মহতী অনুষ্ঠানের সঙ্গে থাকব এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে সব সহযোগিতা করা হবে।’
অনুষ্ঠানে এনটিভির হেড অব ফাইন্যান্স মো. গোলাম রওশন ইয়াজদানী বলেন, ‘এনটিভি এ কুরআনের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান ১৩ বছর ধরে করে আসছে। আমরা অনেক ধরনের অনুষ্ঠানই করে থাকি। কিন্তু সারা বছর এ অনুষ্ঠান দেখার জন্যই অপেক্ষায় থাকি। কুরআনের এ অনুষ্ঠান দেখে দেশের মানুষ কুরআন তেলাওয়াতের প্রতি উৎসাহী হোন। অনেকেই নিজেদের সন্তানদের কুরআনের হাফেজ হিসেবে তৈরির জন্য মনস্থির করেন। তাই এনটিভি সব সময় এ আয়োজন করার জন্য প্রস্তুত। পিএইচপি কর্তৃপক্ষসহ সবাইকে এ আয়োজনের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে সামনের দিনে আরও ভালো আয়োজন যেন করতে পারি সবাই সঙ্গে থাকবেন। করোনা পরিস্থিতিতে এ অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করা ছিল অনেক কঠিন। অনেক কষ্ট করে এ আয়োজন বাস্তবায়ন করায় অনেক ধন্যবাদ।’
সেভয় আইসক্রিমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘কুরআনের এ প্রতিযোগিতা যেন সারা বছর চালু থাকে, সে আহ্বান জানাব। এ সুন্দর আয়োজনের জন্য এনটিভি ও পিএইচপি কর্তৃপক্ষকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।’
ইনফিনিটির চেয়ারম্যান জুনাইদ আহমেদ বলেন, ছোট ছোট এসব শিশুদের তেলাওয়াত শুনে মনে হয় জীবন্ত কুরআন নাজিল হচ্ছে। বিশাল কুরআনের ভান্ডার থেকে খুঁজে বের করে তেলাওয়াত করছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব কুরআনের হাফেজদের মূল্যায়নের জন্য অনুরোধ করছি।’
অনুষ্ঠানে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, নিঃসন্দেহে পবিত্র রমজান মাসে কুরআনের এ আয়োজন অনেক মহৎ আয়োজন। এ আয়োজনে সরকার যদি এগিয়ে আসে তাহলে এসব কুরআনের পাখিদের আরও মূ্ল্যায়নের সুযোগ হবে। দেশে ক্ষুদে খেলোয়ারদের মূল্যায়ন করা হয়। ক্ষুদে এসব কুরআনের হাফেজরা বিদেশে নিজের দেশকে তুলে ধরছে। তাই তাদের মূল্যায়ন করা উচিত।
হিফজুল কুরআনভিত্তিক দেশের সবচেয়ে বড় রিয়েলিটি শো পিএইচপি কুরআনের আলো প্রতিভার সন্ধানে ২০২১-এর গ্র্যান্ড ফিনালে আজ বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এনটিভির স্টুডিওতে শুরু হয়। মহান আল্লাহর দরবারে দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। ৩৬ জনের মধ্য থেকে বাছাই করা চারজনকে নিয়ে আজকের অনুষ্ঠান হয়।
অনুষ্ঠানটি এনটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এ ছাড়া অনুষ্ঠানটি দেখা যায় এনটিভি অনলাইনের ওয়েবসাইট (www.ntvbd.com/livetv), ফেসবুক পেজ (www.facebook.com/ntvdigital) ও NTV Live ইউটিউব চ্যানেলে (www.youtube.com/watch?v=olfr1V6S96o)।
অনুষ্ঠানে চার প্রতিযোগীর মধ্যে থেকে কে হবেন সেরাদের সেরা, তা দেখার অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে থাকে সারা দেশের মানুষ। অনুষ্ঠানে প্রথম পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় চার লাখ টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার তিন লাখ টাকা, তৃতীয় পুরস্কার দুই লাখ টাকা ও চতুর্থ পুরস্কার দেওয়া হয় এক লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রথম তিনজন প্রতিযোগীর ওস্তাদরা পান পিএইচপি মোটরবাইক।
এর আগে অনুষ্ঠানটি সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। পিএইচপি কুরআনের আলো প্রতিযোগিতার এটি ১৩তম আসর।
রমজান মাসজুড়ে কণ্ঠের মাধুর্য আর শুদ্ধ উচ্চারণের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হৃদয় জুড়িয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের তিলাওয়াত। ইসলামের শান্তিময় আবেশ ছড়িয়ে রোজার শেষ বিকেলে মহান রবের শ্বাশত বাণীতে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন এসব হাফেজরা। গত জানুয়ারি থেকে সারা দেশের প্রায় ২০ হাজার ক্ষুদে হাফেজের মধ্য থেকে টেলিভিশন পর্বের জন্য ৩৬ জনকে বাছাই করা হয়। আর সেই ৩৬ জনের মধ্য থেকে বাছাই করা চারজনকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় পিএইচপি কুরআনের আলোর গ্র্যান্ড ফিনালে।
সাইফুল্লাহ সাইফের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটির বিচারক হিসেবে ছিলেন শায়খ আবদুল হক, কারি জহিরুল ইসলাম, মুফতি মিজানুর রহমান এবং ‘কুরআনের আলো’ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হাফেজ মাওলানা আবু ইউসুফ।
অনুষ্ঠানটির প্রযোজক সাইফুল্লাহ সাইফ বলেন, কুরআনের আলো ফাউন্ডেশন প্রতি বছর এই অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে এই প্রত্যাশা সবার।