সিডনিতে দুই মাসে ১৩ মেলা, বিভ্রান্তে আছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা

Looks like you've blocked notifications!

অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সিডনি শহরে প্রায় ৫০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করেন। এ ছাড়া লাকেম্বা, রকডেল, কোগারাহ, মিন্টু, ব্ল্যাক টাউন, ক্যাম্বেল টাউন, রুটি হিল, ব্যাংকসটাউন ও ইস্টার্ন শহরে অনেক বাংলাদেশি বসবাস করেন।

কিন্তু হঠাৎ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে মেলা করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কয়েক বছর আগেও প্রবাসীরা সিডনিতে বছরে কয়েকটি মেলা করত। সবাই একসঙ্গে আনন্দ উদযাপন করত। সম্প্রতি দেখা গেছে ভিন্নতা।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শাখাগুলো তাদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য এই ধরনের মেলা বেছে নিয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। মূলত অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সংগঠনগুলো এখন একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বাদ যায়নি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ স্থানীয় মূলধারার কাউন্সিলররা পর্যন্ত।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির শিক্ষক রশিদা খানম বলেন, অস্ট্রেলিয়ার মূলধারার রাজনৈতিক নেতাদের কিন্তু অন্য চিন্তা করার কথা। তাদের কাজকর্ম হবে বাংলাদেশ কমিউনিটিকে সঠিক পরামর্শ দেওয়া এবং আরো মানুষকে সম্পৃক্ত করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই স্থানীয় কাউসিলাররা জড়িয়ে পড়েছেন এই মেলা বাণিজ্যে। এবারের বৈশাখ নিয়ে সেই রকম একটা অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন নামকরা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। অনেক ব্যবসায়ী অস্ট্রেলিয়ার মূলধারার বাণিজ্য ভবন নির্মাণ থেকে এসেছেন বৈশাখী মেলা বাণিজ্যে।

অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও আপডেট বিডিনিউজের প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ রেজাউল হক বলেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে অলিম্পিক পার্কের বৈশাখী মেলা। কারণ শুধু বৈশাখ নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে আটটি মেলা। প্রবাসীরা বিভক্ত হয়ে এই অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নেবে।

রেজাউল হক বলেন, এই বিভক্তি নিয়ে দেখার কেউ নেই। কারণ যারা দেখবেন তারাই এই অশুভ প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। প্রত্যেক সংগঠনের একই বাণী- আমাদের সংস্কৃতি এবং নতুন প্রজন্ম। স্বাধীনতামেলা, বাংলামেলা, বইমেলা, বসন্তমেলা, ভালোবাসা দিবস মেলা, বৈশাখীমেলা সবাই একসঙ্গে একই স্লোগানে নেমেছেন।

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় মিলনমেলা হলো অলিম্পিক পার্ক বৈশাখীমেলা। যেখানে কয়েক হাজার প্রবাসী একসঙ্গে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করে, এবার এত মেলার কারণে তাদের মেলাটা অনেক আগেই নিয়ে এসেছে। হবে আগামী ২৩ মার্চ শনিবার।

অন্যদিকে ফেয়ারফিল্ড শো গ্রাউন্ডে বৈশাখী মেলা হবে ৬ এপ্রিল। ওই মেলায় বিপুল দর্শকের আগমন হবে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় স্টলহোল্ডার মালিকরা।

অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল হক বলেন, মূলত দুটি মেলাই দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসীদের মনের মধ্যে স্থান করেছে। কিন্তু বর্তমানে স্থানীয় রাজনীতিকরা (কাউন্সিলররা) মনে করেন, আগামী দিনে ভোটব্যাংকে প্রবাসীদের ভোট পেতে এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এবারের ফেয়ারফিল্ড বৈশাখীমেলা হবে সিডনির সবচেয়ে বড় বৈশাখী উদযাপন।

সিডনি অলিম্পিক পার্ক বৈশাখীমেলার আয়োজক শেখ শামীমুল হক বলেন, আমাদের বৈশাখীমেলা শুধু অস্ট্রেলিয়া নয় সারা পৃথিবীর মধ্যে প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় আয়োজন। ২০০৩ সালের থেকে পর কয়েক বছর একই নাম, একই স্থান বারউড স্কুলে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দুটি মেলা আমাকে কিছুটা বিচলিত করলেও আমরা বর্তমানে একটা ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছি। তাই আমি সাংগঠনিকভাবে বলতে পারি এই ধরনের নব্য আয়োজকদের মেলা আমাদের কোনো বাড়তি চ্যালেঞ্জ নিতে হয় না।

তবে শেখ শামীম এটাও বলেন, কাউন্সিলর যদি মেলা করেন তাহলে কাউন্সিলনের জব কী সেটা সবার আগে জানা উচিত। তাদের কাজ তো মেলা করা না।