মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ঈদ আনন্দ

Looks like you've blocked notifications!

ঈদুল আজহার আনন্দ ভাগাভাগি করতে সবাই ছুটে যান প্রিয়জনের কাছে। দীর্ঘ ভ্রমণের অসহনীয় ক্লান্তিও কাউকে ক্লান্ত করে না যখন ঈদের আনন্দটুকু ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ মেলে। কিন্তু প্রবাসে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার সুযোগটি একেবারে সীমিত। প্রবাসী ছাত্রছাত্রীদের বেলায় সেটি আরো সীমিত। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ একদিকে যেমন কম, অন্যদিকে ক্লাস, পড়াশোনা, পরীক্ষা আর কাজ এসব মিলিয়ে কাটাতে হয় ব্যস্ত দিন। অনেকের কাছেই ঈদ তখন হয়ে ওঠে শুধুই একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা। তবে কেউ কেউ আবার সব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও উপভোগ করতে চান ঈদের আনন্দটুকু।

এশিয়ার ইউরোপখ্যাত মালয়েশিয়ায় উচ্চতর ডিগ্রি লাভে বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা আসছেন। বাংলাদেশ থেকেও অনেক শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ায় যান। মালয়েশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা ও উচ্চশিক্ষার পরিবেশ সম্পর্কে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষাথীরা বলেন, সরকারি ও উচ্চ মানের কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া মালয়েশিয়ার প্রায় বেশির ভাগ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সহজেই ভর্তি হওয়া যায়। মালয়েশিয়ার বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে টিউশন ফিও কম। মূলত এই কয়টি কারণেই বিশ্বের অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় যান।

দেশের মতো ঈদের পরিবেশ এখানে না থাকলেও ঈদের আনন্দ উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হতে চান না এখানকার ছাত্রছাত্রীরা। ঈদের নামাজে যাওয়া থেকে শুরু করে এ দিনটির জন্য বিশেষ কোনো খাবারের আয়োজন সবাই মিলে একসঙ্গে করে থাকেন। কেউ কেউ আবার তাঁদের বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেন, ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন একটি বৈচিত্র্যময় পরিবেশে। তেমনি ঈদের আনন্দের সঙ্গে প্রবাসে নিজেদের দুঃখ-কষ্ট ভাগাভাগি করতে এনটিভি অনলাইন সঙ্গে আড্ডা দেন তাঁরা। এনটিভির কাছে তাঁদের ঈদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

অরুণিমা হোসাইন, আইইউকেএল, মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়া এই ঈদ মিলে চতুর্থ ঈদ করছি। স্বজনদের ফেলে রেখে ঈদ করা সত্যি খুব কষ্টের। বাংলাদেশের মতো মালয়েশিয়া কোরবানি আমেজ বোঝা যায় না। তবুও আমি চেষ্টা করি, বন্ধু-বান্ধবদের বাসায় দাওয়াত করি। সবাই মিলে আড্ডা দিয়ে বাংলাদেশের কথা ভোলার চেষ্টা করি। ঈদ দিন সকালে সেমাই,  মাংস রান্না করে বন্ধুদের মিলে খাই। এত কিছু পর ও মা-বাবার কথা বেশি মনে পড়ে। আমার আম্মু ঈদের সারা দিন আমার খোঁজ নিতে থাকে। আম্মু আমাকে অনেক মিস করে। তাঁদের মেয়েটি কী করছে, কী খাচ্ছে এই সব নিয়ে আম্মু অনেক টেনশন ফিল করে।

শামীম আহসান, মালয়েশিয়া

আমরা মালয়েশিয়ায় তিন বছর ধরে বসবাস করে আসছি। আত্মীয়স্বজনদের ফেলে রেখে ঈদ করা অনেক কষ্টের। প্রবাসে ঈদ করলেও দেশের শূন্যতা কাজ করে। প্রবাস জীবনটা একটা কর্মের মধ্যে বন্দি। ইচ্ছা করলেই বাংলাদেশের মতো ঘোরাঘুরি যায় না। চাকরি পিছু ছাড়ে না। তারপর ঈদের দিনটা বন্ধুদের বাসায় বেড়াতে গিয়ে অনেক মজা করি। অনেক ভালো লাগে। সঙ্গে আমার স্ত্রী  মাইশা মালিয়াতকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে বের হই।

জেনিফা বিনতে জামাল, ইনটি, মালয়েশিয়া

এ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় তিনটা ঈদ উদযাপন করেছি। আমি পরিবারের একমাত্র আদরের মেয়ে হওয়ায় আমাকে নিয়ে মা অনেক দুশ্চিন্তা করে। ঈদ এলেই আমাকে অনেক মিস করে। আমিও করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে অনেক আড্ডা দিই। আসলে আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে করব এই জন্য যে, এখানে আমার বন্ধুরা অনেক আন্তরিক। ঈদের দিনে তাদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে দেশের কষ্ট খানিকটা ভুলে যাই।

ফারজানা রুম্পা, আইইউকেএল, মালয়েশিয়া

আমি মালয়েশিয়ায় দুই বছর ধরে বসবাস করে আসছি। মনে আনন্দ থাকলেও মনটা পড়ে থাকে বাংলাদেশে। আজ বন্ধু অরুণিমার বাসায় এসেছি। সে হরেক রকম রান্নাবান্না করেছে। অনেক দিন পর মনে হলো, বাংলাদেশের রান্নার স্বাদ এখানে পেয়েছি। অনেক বন্ধুকে একসঙ্গে পেয়ে ঈদে অনেক মজা হচ্ছে। ভালো কাটছে প্রবাসের ঈদ।

সানজিনা তিশা, আইইউকেএল, মালয়েশিয়া

ঈদ আনন্দের হলেও প্রবাসের ঈদ অনেক কষ্টের। প্রবাসে আত্মীয়স্বজন কাছে থাকে না। একপ্রকার অস্থিরতা কাজ করে। স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের কথা বেশি বেশি মনে পড়ে।

মাশিকুর ইমরান, আইইউকেএল, মালয়েশিয়া

পরিবার-পরিজনের কথা খুব মনে পড়ে। তবে এখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সঙ্গেও এক ধরনের আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তাঁদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করে দেশে থাকা প্রিয়জনদের অভাব কাটানোর চেষ্টা করি।

ফয়সাল কবির, আইইউকেএল, মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ায় একটু ভিন্নভাবে ঈদ উদযাপন করি। বাংলাদেশিদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি শেষে বন্ধু অরুণিমার বাসায় আমন্ত্রণে যাই। বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করাটাকেই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। আসলে ঈদের আনন্দ পরিপূর্ণ হয় যদি তা প্রিয়জনদের সঙ্গে উদযাপন করা যায়। তবে ঈদের দিনটিতে আমি দেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এ অভাবটুকু কাটানোর চেষ্টা করি৷

মঞ্জের রহমান, ইউনিমাস, মালয়েশিয়া

তিন বছর ধরে আছি মালয়েশিয়ায়। এখানকার ঈদ আসলে বাংলাদেশের মতো নয়। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদ উপভোগ করার সুযোগ এখানে নেই। তবে এখানে থাকা বাংলাদেশিদের সবাই ঈদের দিনটিতে একত্র হই। বাংলাদেশে আমরা সবাই পরিচিতরা একসঙ্গে নামাজ পড়ি। কিন্তু এখানে আমরা নামাজ পড়ছি বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে, যাদের কাউকে আমি চিনি না। নামাজ শেষে যখন আমরা হাত মেলাই বা কোলাকুলি করি, তখন মনে হয় না যে আমি তাঁদের চিনি না। ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়ি, এটা উপভোগ করি।