প্রথম আলোর সংবাদে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ
প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সন ‘দূর পরবাস’ অস্ট্রেলিয়া বিভাগে প্রকাশিত একটি সংবাদ নিয়ে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিরা অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর ‘আইজিপির সঙ্গে প্রবাসীদের মতবিনিময়’ শীর্ষক সংবাদটি প্রকাশিত হয়।
বিক্ষুব্ধরা এ সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহিদুল হককে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে ‘অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের মুষ্টিমেয়’ কয়েক ব্যক্তির পক্ষ থেকে। সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তাঁরা কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এমনকি আওয়ামী লীগেরও অনেকে বিষয়টি জানতেন না। এ পরিপ্রেক্ষিতে এ অনুষ্ঠানকে ‘প্রবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময়’ উল্লেখ করে প্রথম আলো ‘মিথ্যাচার’ করেছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রবাসীরা।
গত ৩১ আগস্ট সিডনির বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা রকডেলের বনফুল রেস্টুরেন্টে আইজিপি এ কে এম শহিদুল হককে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সংবর্ধনা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে বাংলাদেশি কমিউনিটি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ স্থানীয় অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে।
বিক্ষুব্ধরা জানান, দলীয় এ সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহসাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ আওয়ামী লীগের কিছু সংখ্যক নেতা-কর্মীরা। কিন্তু প্রথম আলোর সংবাদে শুধু সাধারণ সম্পাদকের নাম এবং পদবি উল্লেখ করে সভাপতিসহ অন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের পদবি গোপন রেখে তাদের ‘প্রবাসী’ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ রেজাউল হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এর আগে আরো কয়েকবার কমিউনিটির সংবাদ নিয়ে প্রথম আলো মিথ্যাচার করেছে। কোনো সংবাদ প্রচার করার আগে সংবাদের সূত্র কিংবা বিশ্বস্ততা জানা প্রয়োজন।
এ সংবাদ যিনি পাঠিয়েছেন সেই সংবাদদাতাকে দায়ী করে মোহাম্মদ রেজাউল হক আরো বলেন, যদিও অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ কমিউনিটিতে প্রথম আলোর সংবাদের তেমন কোনো গুরুত্ব নেই।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের প্রধান উপদেষ্টা গামা আবদুল কাদের, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নিউ সাউথ ওয়েলসের সভাপতি সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস স্টেট পার্লামেন্টের লাকেম্বা আসন থেকে প্রথম বাংলাদেশি সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও ব্যবসায়ী জিল্লুর রশীদ ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি মতিউর রহমান খান, বঙ্গবন্ধু পরিষদ-অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ সম্পাদক রফিক উদ্দিন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ-সিডনির সাধারণ সম্পাদক গাউসুল আলম শাহজাদা, দেশ-বিদেশ পত্রিকার সম্পাদক বদরুল আলম, আপডেট বিডিনিউজের হেড অব নিউজ রাশেদ শ্রাবণ, বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের সাধারণ সম্পাদক সাকিল আহমেদ, বাংলাদেশ ভয়েস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি পারভেজ মজুমদার, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নিউ সাউথ ওয়েলসের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকট মোবারক হোসেন, সুপ্রভাত সিডনির চিফ রিপোর্টার ফজলে রাব্বি, বাংলাদেশ সোসাইটি অব সিডনির সভাপতি সামসুজ্জোহা স্বপন প্রমুখ।
তাঁরা এ প্রতিবেদককে অভিযোগ করেন, এ মতবিনিময় অনুষ্ঠান সম্পর্কে তাঁরা অবগত ছিলেন না। এমনকি খোদ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতাদেরও অনুষ্ঠান সম্পর্কে অবহিত করা হয়নি। আওয়ামী কিছু কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। প্রথম আলো একে ‘প্রবাসীদের’ মতবিনিময় সভা হিসেবে সংবাদ প্রকাশ করে এখন বাংলাদেশিদের কলুষিত করেছে।
তাঁরা আরো বলেন, এর আগেও প্রথম আলোর ‘দূর পরবাস’ অস্ট্রেলিয়া বিভাগের অনলাইন ভার্সনে বিভ্রান্ত ও সমালোচনামূলক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে পত্রিকাটির জনপ্রিয়তা ও বিশ্বাসযোগ্যতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু কাউন্সিলের সভাপতি ও সিডনি অলিম্পিক পার্কের বৈশাখী মেলার প্রধান আয়োজক শেখ শামীমুল হক এ ব্যাপারে বলেন, আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক সরকারি সফরে অস্ট্রেলিয়া এসেছেন- তা আমি জানি। কিন্তু দলীয়ভাবে কোনো সংবর্ধনা কিংবা প্রবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি অংশ নেবেন এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না।
‘তা ছাড়া আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও আমার পক্ষে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা সম্ভব ছিল না। কারণ, একজন সরকারি কর্মকর্তা তিনি পুলিশপ্রধান বা সেনাবাহিনী প্রধানই হউক না কেন, সরকারের বিশেষ কোনো অনুমতি ছাড়া দলীয় অথবা প্রবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করার এক্তিয়ার নেই।’ যোগ করেন শেখ শামীমুল হক। তিনি আরো বলেন, সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা উচিত।