কুড়িগ্রামের বিচ্ছিন্নতার পৌনে শতবর্ষ ঘুচবে কি?
জনগোষ্ঠী হিসেবে কুড়িগ্রামবাসী সর্বাধিক সংখ্যক শ্রমিকের জোগানদাতা; যে শ্রমিকরা বাসে গরু-ছাগলের মতো যাতায়াত করে সর্বাধিক মৃত্যুর মুখোমুখি হন; যেখানকার কৃষকরা তপ্ত বালুতে বাদাম, ভুট্টা আবাদ করে সবচেয়ে কম দাম পান; যে এলাকাবাসী বেঁটে হয়ে যাচ্ছেন বলে কয়েকদিন আগে খবর হয়েছেন একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে। সেখানে বলা বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্যান্য জেলায় যেখানে গড় পুষ্টিহীনতার শিকার ৩৫ ভাগ, সেখানে কুড়িগ্রামে তা ৫০-৫৫ ভাগ। এই জেলাতেই সর্বাধিক সংখ্যক নদ-নদী থাকার পরও সবচেয়ে কম মাছ ভোগ করে এই জেলাবাসীই। ২০১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের অন্যান্য জেলায় জনপ্রতি মাছ গ্রহণের হার যেখানে ১২ কেজি সেখানে কুড়িগ্রামে তা সাড়ে সাত কেজি। আর সেই হতভাগ্য জেলায় প্রধানমন্ত্রী আসছেন -এটা তাঁর দয়া!
জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়-অর্থনৈতিক অঞ্চল হয়, তাই কুড়িগ্রামেও হয়! সারা দেশে কার্ড বিতরণ হয়, তাই কুড়িগ্রামেও হয়। কিন্তু বিচ্ছিন্নতার পৌনে শতবর্ষ আর দূর হয় না!
রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি টানা পাঁচ বছর ধরে এই বিচ্ছিন্নতার সমাধান হাজির করে আসছে। চিলমারী থেকে ঢাকা পর্যন্ত ‘ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস’ নামে আন্তনগর ট্রেন চালু, প্রস্তাবিত চিলমারী-সুন্দরগঞ্জ তিস্তা সেতুর নকশায় রেল যুক্ত করা, ঐতিহাসিক চিলমারী নদীবন্দর পুনরায় চালু করা এবং রৌমারী-রাজীবপুর টু চিলমারী রুটে ফেরি যোগাযোগ চালু করলেই আপনাআপনি কুড়িগ্রাম জেলা এগিয়ে যাবে।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের সকল রুটে লাল-সবুজ ট্রেন দেওয়া হলেও কুড়িগ্রাম জেলা তিমিরেই রয়ে গেছে।
ইতিহাস সাক্ষী, যোগাযোগ ব্যবস্থাই কুড়িগ্রাম জেলাকে একদিন আসাম-পূর্ববাঙলার দরজার মর্যাদা দিয়েছিল। দেশভাগের পর কুড়িগ্রাম জেলা যে বিচ্ছিন্নতার পৌনে শতবর্ষ ধরে ডুবেছিল, এই যোগাযোগব্যবস্থাই তার থেকে মুক্তি মেলাবে।
লেখক : প্রধান সমন্বয়ক, রেল-নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি।