আসুন শত্রু আবিষ্কার করি
তো এই ডামাডোলের মধ্যে সুজা মিয়ারা যার যার চিন্তার লাইন অনুযায়ী শত্রু নির্মূলে অথবা দৃষ্টি আকর্ষণী ব্যবসায় নেমে পড়েছেন । আমি সাধারণত এসব কথার উত্তর কম দেই। কিন্ত ছোট ভাইদের খোঁচাখুঁচিতে কিছু বলতে মনস্থির করেছি।
পহেলা বৈশাখে নারী নির্যাতনের ঘটনায় কেউ কেউ ছাত্রলীগকে দায়ী করছেন, কেউ মৌলবাদীদের, কেউ Mac Haque (গায়ক মাকসুদ)-এর গানকে, কেউ তাঁর বাড়িওয়ালাকে (ছোটো ভাই ইশতিয়াকের ভাষ্য মতে), কেউ ডাইলে লবণ কমপড়াকে দায়ী করেছেন এবং গৌরবের বিষয় হলো কেউ কেউ আমাকেও দায়ী করেছেন।
আমার এক লেখক ভাই বলতেন, ‘সরয়ার, আধাসেদ্ধ প্রগতিশীল আর কমসেদ্ধ ধর্মীয় ফ্যানাটিকের মাঝে বিশেষ পার্থক্য নাই।’ কথাটার অর্থ সত্যি প্রমাণ করতে এই বেলায় গুটিকয়েক প্রগতিশীল আর প্রতিক্রিয়াশীল মোটামুটি এক ভাষায় কথা বলছেন। কে বলছে এই দুই শিবির কখনো মিলতে পারে না? এই তো মিলে গেল
এই দুই দলের বক্তব্য হলো আমি আমার ছবিতে পরকীয়া, বিবাহপূর্ব ডেটিং, লিভ টুগেদার, যৌনতা, এবং বাঙালি সংস্কৃতির সাথে যায় না- এমন জিনিস দেখানোর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে নারী নির্যাতন করতে উৎসাহিত করেছি।
বাচ্চালোক তালিয়া বাজাও।
এদের এসব প্রাইমারি স্কুল টাইপ আর্গুমেন্টের উত্তরে ছয় বছর আগে আমি ‘ওকে কাট’ নামে একটা শর্ট ফিল্ম বানিয়েছিলাম। দেখে নিতে পারেন যাঁর যাঁর দেখা প্রয়োজন।
শিল্প সাহিত্যে সকল চরিত্র মহান চরিত্র হইবে, তাহারা ভালো ভালো কাজ করিবে, ভালো কথা বলিবে, কাহারও চরিত্রে কোনো দুর্বলতা থাকিবে না- এই সূত্র মানলে যে দুনিয়ার হাজার হাজার সিনেমা, উপন্যাস বাতিলের খাতায় চলে যাবে- এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
যাইহোক, আমি বরং এখান থেকে একটু মজা নিয়ে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।
রবীন্দ্রসঙ্গীত অনুরাগী একজন লিখেছেন, পরকীয়া এবং লিটনের ফ্ল্যাটের মতো বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী জিনিস দেখানোর কারণেই দেশের আকাশে আজ এই দুর্যোগের ঘনঘটা।
ইয়ে মানে কেউ কি উনাকে খেয়াল করিয়ে দেবেন- ‘বাঙালি সংস্কৃতির বড় দাদা রবীন্দ্র ঠাকুর সাহেবের পরকীয়ার গল্পটা?’
আরেকটা ছেলে লিখেছে যে এসব বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী জিনিস দেখানোর ফলে তরুণ প্রজন্ম খারাপ হয়ে গেছে। স্মৃতি হাতড়ে আবিষ্কার করলাম এই ছেলেটা দুই বছর আগে আমাকে নিয়মিত চিঠি লিখত।তাকে খুব সান্ত্বনা দিতাম আমি সেসব দিনে।
তার সেসব চিঠি ছিল আহাজারি ভরা। এই জীবন সে রাখবে না। তার ইউনিভার্সিটিতে সবাই তাকে গঞ্জনা দেয়, তার বাসায় সবাই গঞ্জনা দেয়, সে সমাজে স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে না।
কারণ সে সমকামী। সমকামিতার বিরুদ্ধে আমার কোনো বক্তব্য নেই। তার জীবন, সে বুঝবে। আমার কথা হলো এখন যদি আমি তার জীবন নিয়ে ছবি বানাই তাহলে তার পরবর্তী পোস্ট কী হবে জানেন তো?
‘এসব বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী সমকামিতা নিয়ে ছবি বানিয়ে ফারুকী কি প্রজন্মকে সমকামী বানাতে চান?’
আরেকজন দেখলাম ‘মুক্তমনা’ সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন। তারা ইসলাম ধর্মের পয়গম্বরদের গালাগাল করার স্বাধীনতা চান, কিন্তু শিল্পীর কাজের স্বাধীনতায় লাগাম দিতে চান।
বাচ্চালোক তালিয়া বাজাও আরেক দফা।
আসুন আমরা সবাই মিলে এরকম আরো শত্রু আবিষ্কার করে শত্রু শত্রু খেলি। তাতে নারী স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে এবং ধর্মও সুরক্ষিত থাকবে।