জ্ঞানীরা বলেন, বাংলাদেশের পলিবাহিত হওয়ার ইতিহাস হিমালয় পর্বতমালার জন্মের ইতিহাসেরও আগের। কারণ ভারতবর্ষ গণ্ডোয়ানাভূমির মধ্যে ছিল, আর তা ছিল দক্ষিণ ভূ-ভাগের অংশ। টেথিস নামের একটি সাগর ভারতবর্ষ ও এশিয়া মহাদেশের মাঝামাঝি ছিল। তারপর গণ্ডোয়ানাভূমি ফাটল ধরে ১০ কোটি বছর আগে ভাসতে ভাসতে তিন হাজার মাইল পার হয়ে চার কোটি বছর আগে এশিয়া খণ্ডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে হিমালয় ও মিয়ানমার-আরাকান ইয়োমা পর্বতমালা তৈরি হয়। নবম-দশম শ্রেণির বইয়ে পড়েছি, ধাক্কা লেগে সৃষ্টি হওয়ায় এই পর্বতমালাকে ভাঁজ পর্বতমালা বলা হয়। আর এই পর্বতমালা ভেসে ওঠার আগে সাড়ে ১৩ কোটি বছর আগে থেকেই ব্রহ্মপুত্র নদ উপমহাদেশে প্রবহমাণ। যা শিলং মালভূমির শিলারাশি ক্ষয় ও বহন করে তৈরি হয়েছে আজকের বাংলাদেশে। তাই ব্রহ্মপুত্র আজকের বাংলাদেশের আদি পিতা।

চলতিকালে এই আদি পিতা ব্রহ্মপুত্র বছর বছর ৭৫০ মিলিয়ন টন পলি বাংলাদেশে নিয়ে আসে। তার অন্তত তিন ভাগের এক ভাগ কুড়িগ্রাম অংশে ফেলে যায়। পাশে আসামের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল থাকায় কবির কথায়- বৃষ্টি পড়ে এখানে বারো মাস, এখানে মেঘ গাভীর মতো চড়ে। আর বিজ্ঞানীদের গবেষণায়, কালো সোনার খনি। এই বালু স্থানীয় বাজারে প্রতি টন ৩০০ টাকায় বিক্রি হলেও প্রতি টন বালুতে আছে কাচ তৈরির সর্বোচ্চ পরিমাণ কোয়ার্টজ সিলিকা ৫০ কেজি, ইলমিটাইট ৬০০ গ্রাম, জিরকন ৪০০ গ্রাম, রুটাইল ৪০০ গ্রাম, গার্নেট দুই কেজি ৫০০ গ্রাম ও মোনাজাইট ১০০ গ্রাম। যার চলতি বাজারমূল্য তিন লাখ ২০ হাজার ৮৯২ টাকা। শিল্পায়ন না করেও যদি শুধুমাত্র রপ্তানি করা যায়, তাহলে বছরে আসবে আট হাজার কোটি টাকারও অধিক। আর শিল্পায়ন হলে বাংলাদেশ পৌঁছে যাবে অন্য উচ্চতায়। তাই ১৯৭৮ সালেই চীন ও অস্ট্রেলিয়ার বালু আমদানির দাবি অগ্রাহ্য করে ভূতত্ত্ব জরিপ অধিদপ্তর বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করে।

কিন্তু প্রভাবশালী মহল প্রশাসনের নাকের ডগার সামনে দিয়ে কয়েক ডজন ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু উত্তোলন চলছে। নদীভাঙনের হুমকিতে এলাকাবাসী কয়েকবার প্রতিরোধের চেষ্টা করেছে। কিন্তু থানা পুলিশের ভয়ে সেই প্রতিরোধ স্থায়ী হয়নি। ইদানীং ড্রেজার তৈরির ধুম পড়েছে। আইনের হাত কি এদের রুখবে না?

লেখক : প্রধান সমন্বয়ক, রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি।