ক্রিকেট
পরাজয়ের পরও এটা জয়!
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টেনে বাংলাদেশ বনাম ভারতের খেলা। ঠিক কীভাবে এই ম্যাচকে মূল্যায়ন করা সম্ভব সেটা স্পষ্ট নয়। তবে দিনশেষে এটা তিন বলের ম্যাচে, এক রানের পরিষ্কার হার! খানিকটা অবিশ্বাস্য ভাবেই হেরেছে বাংলাদেশ! ঠিক এভাবে না বলে অন্য ভাবেও বলা যায়। তিনটি বলে ম্যাচটা হাতছাড়া হয়ে গেল। ওই তিনটা বলই গড়ল ম্যাচের ভাগ্য।
২০১২ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হেরেছিল। এদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ওটা ছিল একটা ট্র্যাজেডি। এর সাথে গতকাল কিছু যোগ হলো কি না! কদিন আগে ওই এশিয়া কাপের ফাইনালে আবারও একটা বড় ম্যাচে ভারতের সাথে হারে বংলাদেশ। বলতে গেলে সেটাতেও আমাদের মন খারাপের অনেক কিছুই ছিল। জিততে জিততে হারা আর কি। কিন্তু টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতের সাথে খেলা এ ম্যাচ হারার পর বাঙালির উপলব্ধিটা, কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা। না, কাঁটা ঘায়ে মরিচের ছিটা। এটা ঠিক বুঝে ওঠার ঘোর এখনো কাটেনি। তবে মোটামুটি ভাবেই বলা যায় আমাদের ক্রিকেটের ইতিহাসে এটা ভয়ংকর একটা ট্র্যাজেডি হয়ে থাকবে।
টি-টোয়েন্টিতে অচেনা বংলাদেশকে এখন অনেকটা চেনা মনে হয়। মনে হয় আমরা টি-টোয়েন্টি বিষয়টা আয়ত্ত করতে চলেছি। বলতে গেলে এবারের এশিয়া কাপ দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আমাদের নতুন পথচলা শুরু হলো। তবে ভারতের বিরুদ্ধে খেলা ম্যাচটা আমাদের জেতা খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। এটা আমাদের ক্রিকেট দল থেকে শুরু করে সাড়ে ষোল কোটি বাঙালির প্রতিটি হৃদয় চেয়েছে। যিনি খেলা বোঝেন না তিনিও নিশ্চিত বাংলাদেশের সমর্থনে নিজের মন থেকেই চেয়েছেন, জয়টা দরকার। অতি সম্প্রতি ভারতে যাওয়ার পর আইসিসির গ্যাড়াকলে পিষ্ট করে আমাদের দুজন উদীয়মান ক্রিকেটারকে নিষিদ্ধ করা থেকে শুরু করে সুনীল গাভাস্কারের করা মন্তব্য। আর বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্যাপটেন ম্যাশকে নিয়ে বোরিয়া মজুমদারের বক্তব্য আমাদের ক্রিকেটপ্রেমী জাতিকে করেছে বিব্রত। আমাদের ক্রিকেট নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বৈরি মনোভাবকে অন্তত উপেক্ষা করা যায় না। যেখানে ভারতের মাটিতে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশকে এখনো কোনো আন্তর্জাতিক সিরিজের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সেখানে ওদেশের মাটিতে প্রথম দেখায় বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যে লড়াইটা করল সেটা ম্যাচ হারার কারণে প্রশংসা না পেলেও খেলায় চেষ্টার ঘাটতি ছিল না।
আমাদের ক্রিকেটাররা শুধু দেশের মাটিতে নয় দেশের বাইরে খেলেও ফাইট দিতে শুরু করেছে। আর একটু হলে তো ওই পঁচা শামুকটা আবারও গিলতে হতো! এবার আর রক্ত মুছে রেহাই পাওয়া যেত না। ভারতকে একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপে হারানো হয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে হলে সেটা আরো ভালো হতো। বিশেষ করে টিমের এ অবস্থানে ওই রকম একটা জয় বিশ্বকাপ জয়ের চেয়ে কম আনন্দ দিতো বলে মনে হয় না!
বলতে গেলে ম্যাচের ওই তিনটা বল বাদে পুরো সময়টাই ভারতীয় দলের ওপর অসম্ভব একটা চাপ ছিল। ওই তিনটা বলেও চাপ যে কম ছিল তা নয়। কিন্তু সমীকরণটা ভারতের পক্ষেই কথা বলল। ম্যাচের শেষ তিন বলে তাই কি না তাই তিন উইকেট! এবং সবশেষে বাংলাদেশের হার। অবিশ্বাস্য জয় দেখার অপেক্ষার উপহার অবিশ্বাস্য হার! ভারতীয় দলও ম্যাচের চাপটা বুঝেছে। যে বাংলাদেশের সাথে হেসে খেলেই জিততো তারা, সেখানে আজকাল বেশ ফাইট করে তো বটেই, হারতে হারতে জিততে হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের সাথে ম্যাচ ছাড়া সম্প্রতিক সময়ে দারুণ ফর্মে থাকা বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার ভারতীয় টিমকে এদিন দেখা গেছে বারবার শলা পরামর্শ করতে। সময় নিয়ে বল করতে। প্রায় বল টু বল পর্যালোচনা করতে। ধোনির কপালে ভাঁজ পড়তে। আর ইন্ডিয়ান সমর্থকরা এখন থেকে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে একচেটিয়া ভারতের সমর্থন না দিয়ে চুপচাপ খেলা দেখতে বসে থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
বাংলাদেশ এখন ক্রিকেট খেলতে শিখেছে। যেকোনো সময় ঘটনা ঘটতে পারে। এখন ঘটনাই ঘটে। অঘটন ঘটার দিন শেষ। এ এক পরিণত বাংলাদেশ। তাসকিন-সানী নেই। দল ভেঙেছে, কিন্তু মন ভাঙেনি। সাহস নিয়ে খেলতে পারলে পরাজয় হতেই পারে। কিন্তু ওটাও একটা জয়!
লেখক : সাংবাদিক, দ্য ডেইলি সানের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।