৭ মার্চ ’৭১ স্মরণে
বাংলাদেশকে বলা হতো বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ। সম্প্রতি ধর্মের পুনরুজ্জীবন সত্ত্বেও পূজা-পার্বণ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি সবকিছুকে ছাপিয়ে ওঠে না। এখন আছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা দিবস উদযাপন উপলক্ষে দিনব্যাপী, সপ্তাহব্যাপী, মাসব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব-অনুষ্ঠান।
আগেকার পার্বণাদির উপভোগ্য ভূমিকা থাকলেও কোনো সৃষ্টিশীল কিংবা প্রগতিশীল ভূমিকা ছিল না। সে জন্য শাসকশ্রেণি জনজীবনে সেগুলোকে উৎসাহিত করত। শাসকশ্রেণি সৃষ্টিশীলতা ও প্রগতিশীলতাকে ভয় পায়। এখনকার উৎসবাদিত্ত প্রচলিত ব্যবস্থাকে ও শাসকশ্রেণির কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত রাখার কাজে সহায়ক। অধিকন্তু বাংলাদেশে এসব উৎসব-অনুষ্ঠানে ক্রিয়াশীল থাকে অতিমুখী দৃষ্টিভঙ্গি। অতীতমুখিতা সৃষ্টিবিরোধী, প্রগতিবিরোধী-শাসকশ্রেণির কর্তৃত্ব রক্ষার সহায়ক। সর্বজনীন কল্যাণে দরকার সৃষ্টিশীলতা ও প্রগতিশীলতা। আজকের উৎসবাদিতে সৃষ্টিশীলতা ও প্রগতিশীলতা দরকার। পাকিস্তানকালে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপনে সৃষ্টিশীলতা ও প্রগতিশীলতা থাকত, পার্বণিক চেতনা থাকত না। অতীতচারিতায় সীমাবদ্ধ না থেকে প্রতিবছর প্রগতির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নতুন নতুন বিষয় আলোচিত হতো। সেগুলোতে ‘সাধনা ও সংগ্রাম’-এর বিকাশশীল চিন্তা-চেতনা থাকত। পাকিস্তানকালে একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা আমাদের জাতীয় স্বাধীনতায়, নিজেদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায়, গণতন্ত্রে, সমাজতন্ত্রে অনুপ্রাণিত করত। বাংলাদেশকালে সে চেতনা আর বিকশিত হয়নি। এখন আরো প্রগতিহীন গতানুগতিতে নিমন্ধিত। গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের ব্যর্থতার মধ্যে, অপব্যবস্থা ও দুর্নীতির রাজত্বে পুরাতন পরাজিত সংগ্রাম ও বিশ্বাসের পুনরুজ্জীবন ঘটে চলছে। গণতন্ত্রের ধারণাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে নির্বাচনে। উন্নয়নকে আলাদা করে ফেলা হয়েছে রাজনীতি থেকে। রাজনীতিকে করে তোলা হয়েছে বৃহৎ শক্তিবর্গের স্থানীয় দূতাবাস অভিমুখী এবং ওয়াশিংটনের স্টেট ডিপার্টমেন্ট অভিমুখী। ওয়াশিংটনের পাশাপাশি ভারতও এখন ভীষণভাবে তৎপর হয়ে উঠছে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে। বিবেকবান চিন্তাশীল ব্যক্তিদের মধ্যে এ ব্যাপারে সচেতনতা দরকার এবং সৃষ্টিশীলতা ও প্রগতিশীলতার অনুকূলে সক্রিয়তা দরকার। দেশের শাসকশ্রেণির সকল দল, সকল গ্রুপ, সকল সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন (সিএসও) সৃষ্টিবিরোধী, প্রগতিবিরোধী।
৭ই মার্চ ১৯৭১ তো এই সেদিনের ঘটনা। এত প্রকাশ্য, এত বিরাট, এত বিপুল, এত তার সাক্ষী, এত তার প্রমাণপত্র—বলে শেষ করা যাবে না। তা সত্ত্বেও এর কিছু বিষয় নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে তুমুল বিতর্ক। এমনকি ওই দিনের বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা যেভাবে সংবিধানে উদ্ধৃত হয়েছে, তাতেও রয়েছে ভুল। চিন্তার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিন দিন খর্ব হয়ে চলছে। কেন এমন হচ্ছে? এসবের কি কোনো মীমাংসা নেই? নেতারা নিজেদের স্বার্থে যাই করুন না কেন, জনসাধারণ এভাবে বিভক্ত হয়ে মিথ্যার মধ্যে থাকছে কেন? জনসাধারণের বিবেক-বুদ্ধি নিষ্ক্রিয় কেন? এসব নেতার—এমন দলের আত্মপ্রকাশ কি ঘটতে পারে না, যিনি-যে দল জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতি গঠন করবেন? তিতুমীরের, শরীয়তুল্লাহর, শেরেবাংলার, ভাসানীর, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য রাজনৈতিক উত্তর সাধক কি এ দেশে দেখা দেবেন না? জনগণ নিষ্ক্রিয় থাকলে, ঘুমিয়ে থাকলে কিছু হবে না। জনগণের মধ্যে বিবেকের জাগরণ, শুভবুদ্ধির জাগরণ, আত্মমর্যাদাবোধ ও স্বাধীনতার চেতনা দরকার। অবস্থা এমন হয়েছে যে, যুবসমাজের মধ্যে যৌবনের পরিচয় নেই। সকলেরই উপলব্ধি করা দরকার যে, কোনো জাতির ইতিহাসকে বিকৃত করা হলে সেই জাতির আত্মাই বিকৃত হয়ে যায়। ইতিহাস চর্চা আর ইতিহাস বিকৃতির চর্চা এক নয়।
রমনা রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত ৭ মার্চ ১৯৭১-এর জনসভা সম্পর্কে পরের দিনের ‘দৈনিক পাকিস্তান’ লেখা হয় (উদ্ধৃত : আবুল কাসেম ফজলুল হক, ‘মুক্তিসংগ্রাম’, প্রথম প্রকাশ জুন ১৯৭২, চতুর্থ সংস্করণ-মার্চ ২০১২, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা পৃ-২২৩) : “মুহুর্মুহু গর্জনে ফেটে পড়ছে জনসমুদ্রের উত্তাল কণ্ঠ। স্লোগানের ঢেউ একের পর এক আছড়ে পড়ছে। লক্ষ কণ্ঠে এক আওয়াজ : ‘আমার দেশ সোনার দেশ—বাংলাদেশ বাংলাদেশ’। বাঁধ না মানা দামাল হাওয়ায় বজ্রশপথ। হাওয়ায় পতপত করে উড়ছে পূর্ব বাংলার মানচিত্র অঙ্কিত সবুজ জমিনের ওপর লাল সূর্যের পতাকা। লক্ষ হস্তে শপথের বজ্রমুষ্টি মুহুর্মুহু উত্থিত হচ্ছে আকাশে। জাগ্রত বীর বাঙালির সার্বিক সংগ্রামের প্রতীক সাত কোটি মানুষের সংগ্রামী হাতিয়ারের প্রতীক বাঁশের লাঠি মুহুর্মুহু স্লোগানের সঙ্গে সঙ্গে উত্থিত হচ্ছে আকাশের দিকে। এই ছিল গতকাল রোববার রমনা রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সভার দৃশ্য। বঙ্গবন্ধু মঞ্চে আরোহণ করেন ৩টা ২০ মিনিটে। কিন্তু ফাল্গুনের সূর্য মাথার উপরে ওঠার আগে থেকেই স্লোগান চলছে। মঞ্চে মাইকে এসে স্লোগান দিচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আবদুর রব, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ ও আবদুল কুদ্দুস মাখন। স্লোগান দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান আবদুর রাজ্জাক। স্লোগান দিচ্ছেন সিরাজুল আলম খান ও আরো অনেকে। লক্ষ কণ্ঠে ফিরে আসছে স্লোগানের জওয়াব বজ্রনির্ঘোষে। স্লোগানের ফাঁকে ফাঁকে নেতৃবৃন্দ দিচ্ছেন টুকরো টুকরো বক্তৃতা। মঞ্চ থেকে স্লোগান শেষ হলে স্লোগান উঠছে মাঠের বিভিন্ন স্থান থেকে। স্লোগান দিচ্ছে ছাত্র শ্রমিক কৃষক মজুর মেহনতি জনতা। স্লোগান দিচ্ছে সর্বস্তরের জনগণ। স্লোগান দিচ্ছে মহিলারা, স্লোগানে স্লোগানে সভাস্থলে ক্রমে বেড়ে গেছে সংগ্রামের উদ্দীপনা, শপথের প্রাণবহ্নি। স্লোগানের ভাষা ছিল : ‘জয় বাংলা—জয় বাংলা’, ‘আপস না সংগ্রাম—সংগ্রাম সংগ্রাম’ ‘আমার দেশ তোমার দেশ—বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘পরিষদ না রাজপথ—রাজপথ রাজপথ’, ‘ষড়যন্ত্রের পরিষদে—বঙ্গবন্ধু যাবেন না’, ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ো—বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো—বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ ইত্যাদি।”
দৈনিক পাকিস্তানের এটুকু উদ্ধৃতি থেকে সেদিনকার সভার অবস্থা—জনমনের অবস্থা—অল্পই প্রকটিত হয়। সে ছিল এমন এক দৃশ্য, যা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়।
বঙ্গবন্ধু কথা বলেছিলেন সব দিক লক্ষ করে—সামঞ্জস্য বিধান করে। জনসভায় আগাগোড়া আমি উপস্থিত ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর বস্তৃতার পর অনেকে সঙ্গে আমিও অনুভব করেছিলাম—বক্তৃতায় স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা স্পষ্টভাবে থাকা উচিত ছিল। তবু বক্তৃতা শুনে আমরা আমাদের কথাবার্তায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি সমস্ত অন্তরের সমর্থন জ্ঞাপন করেছিলাম। দল-মতের পার্থক্য আমরা ভুলে গিয়েছিলাম। অপর দিকে লক্ষ করেছিলাম—প্রধানত বয়স্ক লোকদের মধ্যে ভিন্ন উপলব্ধি। তাঁরা বলাবলি করছিলেন : শেখ সাহেব সর্বনাশ করেছেন, অপস-নিষ্পত্তির কোনো কথাই তিনি বলেননি, দেশে মিলিটারি নামবে, কে বাঁচাবে-কে মরবে, কে জানে! সভা শেষেই অনেক লোক নিরাপত্তার কথা ভেবে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তাড়াতাড়ি করে গ্রামে চলে যেতে থাকে।
বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তৃতা শেষ করেছিলেন ‘জয় বাংলা’ বলে, ‘জয় পাকিস্তান’ তিনি বলেননি। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ‘জয় পাকিস্তান’ বলার কোনো বাস্তবতাই ওই সভায় ছিল না। তিনি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সব পক্ষ বিবেচনা করে, সামঞ্জস্য বিধানের ও সামনে চলার উপায় বজায় রেখে কথা বলেছিলেন এবং অত্যন্ত চমৎকারভাবে তা তিনি করতে পেরেছিলেন। তাঁর বক্তৃতা সেদিন মনোমুগ্ধকর হয়েছিল, আজও তা আমাদের কাছে মনোমুগ্ধকর। সৃষ্টিশীলতা ও প্রগতির প্রয়োজনে মুগ্ধতা আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে।
শেখ সাহেব একটা সময় পর্যন্ত তাঁর বক্তৃতা-বিবৃতি শেষ করতেন ‘পাকিস্তান-জিন্দাবাদ’ বলে। তখন তিনি ‘পূর্ব বাংলা’, পরে পূর্ব পাকিস্তান বলতেন। শেষ দিকটায় তিনি ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’-এর বদলে ‘জয় বাংলা’ এবং ‘পূর্ব পাকিস্তান’-এর বদলে ‘বাংলাদেশ’ বলতেন। দেশের লেখক-শিল্পীদের ও ছাত্র-তরুণদের ভাষায়ও পর্যায়ক্রমে এই রকম পরিবর্তন ঘটে চলছিল। কোনো কোনো বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রুপ ও ছাত্রলীগ আগ্রযাত্রী ছিল।
জনগণের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে চিন্তা করতেন, সব দিক লক্ষ্য করে মত গঠন করতেন এবং মত প্রকাশ করতেন। তৎকালীন জাতীয় পরিষদের ১৯৭০-এর নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে থাকে এবং পাকিস্তানকে রক্ষা করার চিন্তাভাবনা ও কার্যক্রম জোরদার হতে থাকে। সে অবস্থায় ১৯৭০ এর ৭ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেশবাসীর প্রতি বঙ্গবন্ধু যে বিবৃতি দেন, সব পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, তার শেষে তিনি ‘জয় বাংলা। জয় পাকিস্তান’ উল্লেখ করেন। এর আগে তিনি কিংবা অন্য কোনো নেতা এমনটি করেননি। (দেখুন : পূর্বোক্ত গ্রন্থ, পৃ-১৩৫। এতে উক্ত বিবৃতিটি সংকলিত আছে।)
এরপর ১৭ই ডিসেম্বরে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ঘূর্ণিঝড়-বিধ্বস্ত এলাকায় জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন একদিনে অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭১-এর ১৭ জানুয়ারি। মওলানা ভাসানী ১৯৭০-এর ১২ নভেম্বরের পর থেকে পল্টন ময়দানে একাধিক জনসভার মাধ্যমে এবং আরো নানা সভা ও বিবৃতির মাধ্যমে ক্রমাগত ১৯৪০ সালের লাহোর প্রাস্তাবের ভিত্তিতে স্বাধীন-সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন করে চলেন। ১৯৭১ সালে ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ শপথ দিবস পালন করে। ওই দিন রমনা রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সদস্যরা (জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ) সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এক শপথবাণী পাঠ করেন, যার সমাপ্তিতে ‘জয় বাংলা। জয় পাকিস্তান।’ আছে। (দেখুন : পূর্বোক্ত গ্রন্থ, পৃ-১৪৫। এতে ৪ জানুয়ারি ১৯৭১-এর দৈনিক পাকিস্তান থেকে উক্ত শপথবাণীটি সংকলিত আছে।) শপথবাণী : “আমরা—জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ দলীয় নবনির্বাচিত সদস্যবৃন্দ-শপথ গ্রহণ করছি পরম করুণাময় ও সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার নামে; আমরা শপথ গ্রহণ করছি সেইসব বীর শহীদের ও সংগ্রামী মানুষের নামে, যাঁরা আত্মাহুতি দিয়ে ও চরম নির্যাতন-নিপীড়ন ভোগ করে আজ আমাদের প্রাথমিক বিজয়ের সূচনা করেছেন। আমরা শপথ গ্রহণ করছি এই দেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, মেহনতি মানুষ তথা সর্বশ্রেণির জনসাধারণের নামে, জাতীয় সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে এই দেশের আপামর জনসাধারণ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ও নেতৃত্বের প্রতি যে বিপুল সমর্থন ও অকুণ্ঠ আস্থা জ্ঞাপন করেছেন, তার মর্যাদা রক্ষাকল্পে আমরা সর্বশক্তি নিয়োগ করব।
“ছয় দফা ও এগারো দফা কর্মসূচির ওপর প্রদত্ত গণরায়ের পতি আমরা একনিষ্ঠরূপে বিশ্বস্ত থাকব এবং শাসনতন্ত্রে ও বাস্তব প্রয়োগে দয় দফা কর্মসূতিভিত্তিক স্বায়ত্তশাসন ও এগারো দফা কর্মসূচির প্রতিফলন ঘটাতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করব।
আওয়ামী লীগের নীতি, আদর্শ, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচির প্রতি অবিচল আনুগত্য জ্ঞাপনপূর্বক আমরা অঙ্গীকার করছি যে, অঞ্চলে অঞ্চলে ও মানুষে মানুষে বিরাজমান চরম রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের চির-অবসান ঘটিয়ে শোষণমুক্ত এক সুখী সমাজের বুনিয়াদ গড়ার এবং অন্যান্য অবিচার বিদূরিত করে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব; জনগণ অনুমোদিত আমাদের কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির প্রয়াসী যে কোনো মহল ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আমরা প্রবল প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলব এবং সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাকল্পে যে কোনোরূপ ত্যাগ স্বীকার করতে আপসহীন সংগ্রামের জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত থাকব। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। জয় বাংলা। জয় পাকিস্তান।”
অতীতমুখিতা ত্যাগ করে, সত্যনিষ্ঠ বিশ্লেষণমূলক বিচারমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সভ্যতা সংস্কৃতি ও প্রগতির পথ ধরে আমাদের পথ চলতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।