সায়মন জেনকিন্সের কলাম

নিশ্চয় মার্কিন হস্তক্ষেপই প্রার্থনা করছেন মাদুরো!

Looks like you've blocked notifications!

একটি জিনিসই পারে ভেনিজুয়েলায় মাদুরোর শাসন টিকিয়ে রাখতে, তা হচ্ছে পশ্চিমা হস্তক্ষেপ। সীমান্তে স্বার্বভৌম শত্রুপক্ষ অবস্থানই ওই দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। ভেনিজুয়েলার মানুষ হয় তো তাদের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে পছন্দ করে না, কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রকেও অপছন্দ করে। চীন হয় তো অস্বস্তি বোধ করবে, কিন্তু তারা যেহেতু মাদুরোর মিত্র, তাই মার্কিন আক্রমণে তারা মাদুরোকে সাহায্য করতে পারে। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যদের উচিত ভেনিজুয়েলাকে তার মতো করে একা থাকতে দেওয়া। বহিঃশত্রুর হস্তক্ষেপের ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণাম দেখেছে সময়। বিষয়টি শুধু ডোনাল্ড ট্রাম্পই দেখতে পারছেন না।

যারা ভেনিজুয়েলাকে জানেন এবং দেশটিকে ভালোবাসেন, তারা যন্ত্রণার সঙ্গে শাভেজ-মাদুরোর ২০ বছর দেখেছেন। কখনোই তেলনির্ভর শক্ত অর্থনীতি দাঁড়ায়নি, পূর্ব অথবা পশ্চিমে, মতাদর্শের নামে দুর্নীতিবাজ নেতাদের হাতে এক রকম ধর্ষিত হয়ে আসছে দেশটি। সমাজতন্ত্র এর আগে কখনো এতটা ধ্বংসাত্মক পরিণতির স্বাদ পায়নি। এখানে অন্য কারো দোষ নেই। রাশিয়া ও চীন থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছে ভেনিজুয়েলা। হুগো শাভেজের আগে আসলে দেশটি বেশ (তুলনামূলক) শান্তিপূর্ণ ও অগ্রসর ছিল। তিনি এবং তাঁর শিষ্য দেশটাকে নষ্ট করেছেন। এরাই লেনিনের ‘ইউজফুল ইডিয়ট’দের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়ার যোগ্য। ব্রিটেনের লেবার পার্টি আমাদেরকে যেভাবে বেকুব বানিয়ে যাচ্ছে।

ভেনিজুয়েলায় যারা এই সংঘাত থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখেননি, সরকার পতনের কাজে তারা মূলত কঠিন সময় পাড় করছেন। প্রথমত, ঘটনা এমন দাঁড়িয়েছে যে তারা সেনাবাহিনীর সহায়তা চাইছেন। এখানে বহিঃশক্তিগুলো বরং বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইদোকে নৈতিক সমর্থন জানাতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ সপ্তাহের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও ভয়ঙ্কর সব হুমকি উল্টো ফল দেবে। বাঁধার মুখে পড়া একটি শাসকের জন্য এসব বেহেশতের মান্না সালওয়ার মতো কাজ করছে। তারা বিরোধীদেরকে বিদেশি শক্তির এজেন্ট হিসেবে তুলে ধরতে পারছে। বিদ্রোহকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখাচ্ছে। তারা সেনাদের পক্ষ নেওয়ার আহ্বান করছে। এতে দেশপ্রেমের চাদরে ঢেকে বিদ্রোহ দমনটা সহজ হয়ে যায়।

জাতিসংঘের কতৃত্ত্ব বিনষ্ট হওয়ার পর থেকে নব্যসাম্রাজ্যবাদী গণতান্ত্রিকদের কাছে অন্য দেশের বিষয়ে নাক গলানো বা আগ্রাসন চালানোটা ডালভাতে পরিণত হয়েছে। শুধু গত দুই বছরে ট্রাম্প ইরান, উত্তর কোরিয়া, চীন, মেক্সিকো এবং এখন ভেনিজুয়েলা শাসন করতে চান। অথচ এদের কেউই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নিরাপত্তা হুমকিমূলক কিছু করেনি। এর আগে টনি ব্লেয়ার ক্ষমতায় এসে সার্বিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া ও সিরিয়া আক্রমণের খোঁড়া যুক্তি খুঁজে বের করলেন। এ ছাড়া রাশিয়া, ইরান ও মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও জারি করলেন তিনি। ব্রিটিশদের নিরাপত্তা কিংবা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এসব কী ফল বয়ে আনল তা অজানাই রয়ে গেল। অথচ এসবে অপরিমাপযোগ্য আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটে গেল। অন্যদেশের বিষয়ে নাক গলানোটা এখন নয়া জনপ্রিয়তাবাদের দখলদারত্ব রোগ আকারে দেখা দিয়েছে।

দুর্দশাগ্রস্তদের সহায়তায় এগিয়ে যাওয়ার দাবি নিতান্তই প্রাকৃতিক। একেবারেই কিছু না করাটা বেদনাদায়ক ও নির্মম হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু এসব করলে তা কমই কাজে লাগে। কোনো দেশ রাজনৈতিকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত হলেও তারা স্বার্বভৌম বটে। ভুল করতে এবং নিজেদের ভুল শোধরানোর কাজটা তাদেরই করতে হবে। এতে বরং দেশটি শক্তিশালী হবে। কারাকাসের শাসকগোষ্ঠী হয়তো অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ তাদের জন্য আশার আলো হয়েই দেখা দেবে।

কেমন হতো যদি মাদুরো ব্রিটিশদের ব্রেক্সিট ইস্যু সমাধানের উপায় বাতলে দিতেন, অথবা ট্রাম্প যদি আয়ারল্যান্ড সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণ করতে চাইতেন?