আন্তর্জাতিক

বেক্সিট প্রশ্নে নতুন সংকট ও সম্ভাবনা

Looks like you've blocked notifications!

ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যে বিতর্ক চলছেই। দেশটির পার্লামেন্টে কোনো ভোটাভুটিকে কেন্দ্র করে রাজনীতিকদের এমন দৌড়ঝাঁপ ও উত্তেজনার ঘটনা নিকট অতীতে আর দেখা যায়নি। এর আগে ১৯৬৬ সালে লেবার পার্টি হেরেছিল ১৬৬ ভোটের বিশাল ব্যবধানে। গত বছরের নভেম্বরে চুক্তি সম্পাদনের পর ১১ বার এ বিষয়ে জনমত যাচাই করা হয়। কোনো বারই চুক্তির পক্ষে সমর্থন ২৭ শতাংশ অতিক্রম করেনি। অন্য একটি জরিপে প্রতি ১০জনে মাত্র একজন এই চুক্তির সমর্থক বলে উঠে এসেছে। চুক্তি প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় পুনরায় নির্বাচন তথা গণভোট এবং জেরেমি করবিনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে বলে মনে করা যাচ্ছে।

ব্রেক্সিট চুক্তি সম্পাদনে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বেশ কৌশলী খেলা খেলেছে। এখন যুক্তরাজ্যের খেলার পালা। চুক্তি পাস না হওয়ায় চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ এড়াতে ইইউ নতুন করে কোনো ছাড় দেয় কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। এর পাশাপাশি ব্রেক্সিটের অভিজ্ঞতা ও প্রভাব যে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও অনিবার্য হয়ে পড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশেষ করে গ্রিস, ইতালি, স্পেন ও অন্যত্র তথাকথিত পপুলিস্ট সরকারের যে প্রবল বাতাস বিরাজমান, তারা এ থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

ইইউ থেকে বের হওয়া নিশ্চিত করতে এবার একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে ব্রিটেনের ব্রেক্সিটপন্থী নেতারা। নতুন এ দলের নামও রাখা হয়েছে ব্রেক্সিট পার্টি। দলটিতে যোগ দিয়ে একে আরো শক্তিশালী করেছেন আলোচিত ব্রেক্সিটপন্থী ও সাবেক ইউকিপ নেতা নাইজেল ফারাজ। নতুন দলে যোগ দিয়েই তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মেকে হুঁশিয়ারি দেন। জনগণের ইচ্ছের সুরক্ষায় ফারাজ ফের রাজনীতিতে ফিরেছেন বলে জানান। ব্রেক্সিট গণভোটের যাওয়ার পক্ষে যারা প্রচারণা চালিয়েছিলেন তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিকদের একজন নাইজেল ফারাজ। তার রাজনীতিও গড়ে ওঠে এই ইউরোপীয় জোটের বিরোধিতাকে ভিত্তি করেই। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের শীর্ষস্থানীয় বহু নেতা বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে প্রচারণা চালালেও বলা যায় ব্রেক্সিটের প্রতীক বা মুখ হয়ে উঠেছিলেন এই নাইজেল ফারাজ। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টেরও একজন সদস্য তিনি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি নাকচ হয়ে যাওয়ার পর তেরেসা মে যখন ব্রেক্সিটে বিকল্প চুক্তি ‘প্লান বি’ নিয়ে ছোটাছুটি করছেন ঠিক তখন নতুন দলে যোগদান ফারাজের। সম্প্রতি তিনি তার নিজের দল ইউকিপের নেতা জেরার্ড ব্যাটেনের কট্টর ডানপন্থী সংগঠক টমি রবিনসনের সখ্য থাকায় দল থেকে পদত্যাগ করেন।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি নাকচ হয়ে যাওয়ার পর তেরেসা যখন ব্রেক্সিটে বিকল্প চুক্তি ‘প্লান বি’ নিয়ে ছোটাছুটি করছেন ঠিক তখন নতুন দলে নাম তুললেন ফারাজ। এই মুহূর্তে আরো একটি গণভোটের দাবি বিটেনের রাজনীতিকে তোলপাড় করে তুলেছে। পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের ব্রেক্সিট চুক্তি নাকচ হওয়ার পর নতুন করে গণভোট আয়োজনের চাপ বাড়ছে। সত্তরের বেশি লেবার এমপি, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির ৩৫ ও লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির ১১ এমপি লেবার পার্টির নেতৃত্বের কাছে দলের নীতিতে নতুন গণভোটের দাবি অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।

এমতাবস্থায় ব্রিটেনের সংসদে ব্রেক্সিট চুক্তি বিফল হওয়ার পরও কোনো ঐকমত্যের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তেরেসা মে ও জেরেমি করবিন ব্রেক্সিটের প্রশ্নে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে পড়েছেন উভয় সংকটে। করবিনের দাবি মেনে ‘সফট ব্রেক্সিট' বা ব্রেক্সিটের নরম সংস্করণের পথে এগোলে তাঁর নিজের টোরি দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থীরা বেঁকে বসবেন। এমন অচলাবস্থার জের ধরে ব্রিটেন আগামী ২৯ মার্চ চুক্তি ছাড়াই ইইউ ত্যাগ করতে পারে, এমন আশঙ্কাও বাড়ছে। এই সময়সীমা বাড়ানো সম্ভব হলে আগাম সাধারণ নির্বাচন বা দ্বিতীয় গণভোটও আয়োজন হতে পারে।

ইইউ ব্রিটেনের রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে সংলাপের ইঙ্গিত দিয়েছে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বলেন, ব্রিটেন যাতে চুক্তি ছাড়াই ইইউ ত্যাগ না করে, সেই লক্ষ্যে সবকিছু করা হবে। ইইউর প্রধান ব্রেক্সিট মধ্যস্থাতাকারী মিশেল বার্নিয়ে আরো বড় আকারের ব্রেক্সিট চুক্তির সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেন। কিন্তু যত দিন খোদ ব্রিটেনে কোনো একটি সমাধানসূত্র নিয়ে ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব না হয়, তত দিন ইইউর পক্ষেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়াও কঠিন।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।