অভিমত

ভারতের নির্বাচনে চলচ্চিত্রের প্রভাব

Looks like you've blocked notifications!

ভারতের নির্বাচন মানেই এক রকম চমক। বড় দেশ হওয়ার কারণে সেখানে নির্বাচনের আগে যে বিতর্কগুলো দানা বাঁধতে শুরু করে, তার আকারও বড় হয়। খুব মজারও বটে।

দেশটির গেল নির্বাচনে চলচ্চিত্রের একটা ভূমিকা আমরা দেখেছি। কোনো দল বা নেতার জন্য নয়, বরং সেটি ছিল জনগণের জন্য। সেবার আমরা দেখেছিলাম অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘ভূতনাথ ২’। যে চলচ্চিত্রটি শুরুতে কংগ্রেস, মাঝে বিজেপি ও শেষে আম আদমি পার্টিকে কড়া সমালোচনা করেছিল। লাখ লাখ দর্শকের সঙ্গে, ভারতে আমি ও আমার বন্ধু, জাহাঙ্গীর আলম রতনও বেশ মজা করেই ছবিটি দেখেছিলাম।

ভাবা যায়, ২০১৪ সালের ভারত নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে একজন ভূত নির্বাচন করবে! ফলে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু করে সব কাজ ভূতটিই করছে। প্রতিপক্ষ হিমশিম খায়। টাকা ছিটায়, এটা করে তো সেটা করে, কিন্তু ভূতের কৌশলের সঙ্গে পারে না। কারণ, ভূতটি শুরু থেকে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের জন্য রাজনীতি করছিল। ভূতের কৌশলের সঙ্গে যখন পেরে উঠতে পারে না, তখন মানুষের ভেতরকার পশুটিকে বের করে এনে নির্বাচনী নীতি-কৌশল দিয়ে ভূতকেও প্যাঁচে ফেলেন। এমন চলচ্চিত্র বাংলাদেশে সম্ভব নয়। তবে নির্বাচনের আগে চলচিত্র নির্মাণ এক রকমের কৌশল, যা জনমনে অবস্থান তৈরিতে সক্ষম; তেমন একটি প্রয়াস মাঝামাঝি আকারের হলেও বলা যেতে পারে ‘হাসিনা : আ ডটার’স টেল’-কে।

আসছে ভারত নির্বাচনে যে চলচ্চিত্রটি আবার আঘাত হানবে কংগ্রেস শিবিরে তা হচ্ছে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের জীবনীভিত্তিক বলিউড ছবি ‘দি এক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’। অনেকেই হয়তো জানেন না কিংবা মনে নেই এই ঝড়ের শুরু ২০১৪ সালের এপ্রিলের ১৬ তারিখে, যখন সঞ্জয় বাড়ু বইটি প্রকাশ করেছিলেন। এমন একটি বই প্রকাশ করা শুধু গাটসের পরিচয় নয়, সেই বইটিকে প্রকাশ হতে দেওয়া এক রকমের রাজনীতির ম্যাচিউরিটির বিষয়ও বটে। আমাদের দেশ হলে ছাপাখানা থেকে বইয়ের সফট কপি হাওয়া হয়ে যেত। কিংবা লেখক দুদকের মামলায় জড়িয়ে পরতেন কিংবা অভাবনীয় কিছু হতো যা, আমরা নিয়মিত করে থাকি কণ্ঠ রোধ করতে। দিল্লিতে তা হয়নি।

আমি বইটির বেশ কিছু পাতা পড়েছিলাম তখনই। কেন নির্বাচনের সময় বইটি প্রকাশ করা হলো, তা বুঝতে ছুটেছিলাম মানুষের কাছে। বিজেপি চেয়েছিল বইটি যেন নির্বাচনের সময় প্রকাশ হয় এবং তা তাদের জয় নিশ্চিতে সহযোগিতা করবে। অলআউট খেলতে চেয়েছিল তারা। তবে প্রকাশক এমন কিছু চেয়েছিলেন কি না জানি না। তবে আসছে নির্বাচনের আগে এমন একটি ছবির ট্রেইলার ছাড়া হয়েছে, যা নিয়ে উভয় শিবির কিন্তু এক রকম মুখোমুখি অবস্থানে চলে এসেছে।

একজন প্রধানমন্ত্রীর আপাদমস্তক দুর্বলতাকে এভাবে তুলে আনা চাট্টিখানি কথা নয়। তবে এর মাধ্যমে বড়দাগে দেশটির চলচ্চিত্র মাধ্যমের বিকাশ হচ্ছে। যা এ দেশ কেন, অনেক দেশেই অভাবনীয়। কিন্তু ছবিটি মুক্তি না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতারা। তাঁরা অভিযোগ করছেন, ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতেই ২০১৯ সালের নির্বাচন সামনে রেখে এই ছবি নির্মাণ করা হয়েছে এবং তা মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, বিজেপির অভিযোগ, ১০ বছর ধরে একটি পরিবার কীভাবে দেশকে জিম্মি রেখেছিল, তা এই ছবির প্রধান আকর্ষণ। কংগ্রেস দাবি করছে, ছবিটি নির্মাণের উদ্দেশ্য হলো কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপির মিথ্যা প্রচারণা চালানো। কতটা সত্য আর কতটা মিথ্যা, ছবিটি বের হলেই দেখা যাবে। ছবিটিতে যা থাকবে, তা হচ্ছে সব থেকে বড় গণতন্ত্র চর্চার দেশ হওয়ার পরও কীভাবে পরিবারভিত্তিক রাজনীতি দল ও দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সেটিই আসলে কংগ্রের মূল ভয়। এতে করে দলটির খুঁটি একেবারেই নড়ে যাবে। অন্যদিকে এতে বিজেপির সব থেকে বড় লাভটি হবে, মাত্রই চাঙ্গা হওয়া রাহুল গান্ধী নির্বাচনের দৌড়ে পিছিয়ে পড়বেন কয়েক কদম।

বইটি যেহেতু ইংরেজি ভাষায় ছিল, তার হিন্দি ভাষায় মেকিং শুধু ভারত নয়, ছেয়ে যাবে বিশ্বজুড়ে। সেই ভয়ই কংগ্রেস আধামৃত প্রায়। বিজেপি রাজনীতির কূটচালে এগিয়ে গেল বোধ হয়। তবে ফ্রান্স থেকে যুদ্ধবিমান রাফায়েল ক্রয় নিয়ে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা অবশ্যই মোদিকে কষ্ট দেবে, ভাবাবে।

লেখক : একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক।