৩০ লাখ শহীদের নামে বৃক্ষরোপণ

Looks like you've blocked notifications!

প্রতিবছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর-এ ছয় মাস বৃষ্টিপাত হয়। আর এ সময় বৃক্ষরোপণের মৌসুম। কারণ বৃক্ষ রোপণের সাথে বৃষ্টিপাতের একটি বিরাট সম্পর্ক রয়েছে। গাছ লাগালে তা টিকে থাকার জন্য পানির চাহিদা থাকে। কাজেই এ মৌসুমকে কেন্দ্র করেই গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়ে থাকে। তখন বৃক্ষ রোপণের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভাগ দপ্তর যেমন কৃষি বিভাগ, বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর ইত্যাদি তো রয়েছেই,  তা ছাড়া বিভিন্ন সরকারি দপ্তর  ও  বেসরকারি সংস্থা বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ, মাস ইত্যাদি নামে কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে। এর কারণ একটাই   আর তা হলো পরিবেশ রক্ষা ও বায়ু নির্মল রাখা।

আমাদের জন্য একটি সৌভাগ্যের বিষয় এই যে বাংলাদেশের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই বৃক্ষপ্রেমী একজন মানুষ। শুধু তাই নয় তিনি পরিবেশ সম্পর্কে খুবই সচেতন। ২০১৫ সালে তিনি পরিবেশ বিষয়ে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ সম্মান ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।

সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী এবার(২০১৮) বিশ্ব  পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বৃক্ষরোপণ অভিযান উদ্বোধন কালে সারা দেশে স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ শহীদের নামে প্রতীকী ৩০ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ, দপ্তর, বিভিন্ন সরকারি এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাসমূহ মৌসুমভর বৃক্ষরোপণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

পরিবেশ বান্ধব গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে প্রতিবছরই কোনো না কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সফল করার জন্য কাজ করে চলেছে। আর সেক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশ ও প্রণোদনা বিরাট ভূমিকা পালন করছে। যেমন উদাহরণস্বরূপ বলা চলে কয়েক বছর ধরে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। সেই বজ্রপাত কিছুটা হলেও বৈজ্ঞানিকভাবে ঠেকানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সারাদেশে ৩০ লাখ তালগাছ লাগানোর কথা বলা হয়েছে এতে। সরকারি নির্দেশনা পেয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থা দ্বারা নিয়মিত তাল ও সুপারি উঁচু বজ্রপাত নিরোধক গাছ লাগানো চলমান রয়েছে।

আমরা মানুষ মাত্রই গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানি। কারণ ছোটবেলা থেকেই পরিবেশ পরিচিতি বইতে পড়ে আসছি গাছ বায়ুমন্ডলের ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করে পরিবেশ নির্মল রাখতে সহায়তা করে। অপরদিকে মানুষের প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন গ্যাস পরিত্যাগ করে। এতে একদিকে যেমন বায়ুমন্ডলের ক্ষতিকর গ্যাসসমূহের ভারসাম্য রক্ষা হয় অপরদিকে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে পরিবেশ রক্ষা করে থাকে।

আমরা জানি কোনো স্থানের পরিবেশ রক্ষা করার জন্য সে এলাকার মোট আয়তনের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ গাছপালাসহ বনভূমি থাকা বাধ্যতামূলক। অন্য অনেক গবেষণা থেকে পাওয়া যায় একটি গাছ থেকে যে পরিমাণ অক্সিজেন নির্গমন হয় এবং একটি গাছ যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস অভিযোজন করে থাকে- তা ওই এলাকার একটি গাছের দশগুণ আয়তনের সমান। তা ছাড়া দিনে দিনে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিসৃত হয়ে বায়ুমণ্ডলে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে সে এলাকার তাপমাত্রা বেড়ে যায়। প্রকৃত অর্থে এগুলোর কুফলই হলো জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ঘটনা ঘটে থাকে।

কাজেই এমনি একটি সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শহীদদের উদ্দেশে ৩০ লাখ বৃক্ষ রোপণের যে ঘোষণা দিয়েছেন তা সত্যিই প্রসংশার দাবিদার। কারণ বৃক্ষ রোপণ যে শুধু পরিবেশই রক্ষা করে তাই নয়। এর একটি অর্থনৈতিক মূল্যমানও রয়েছে। যদি রোপিত এ ৩০ লাখ বৃক্ষের অর্ধেক অর্থাৎ ১৫ লাখও টিকে থাকে তাহলে তা আগামী ১৫-২০ বছরে এ থেকে প্রচুর কাঠ, ফল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তৈজস পাওয়া যাবে। আসুন আমরা এ বছরের বৃক্ষরোপণ মৌসুমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানকে সম্মান জানিয়ে এবং মুক্তি সংগ্রামের শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে ৩০ লাখ বৃক্ষরোপণের লক্ষ্যমাত্রাকে সঠিক সময়ে পূরণ করে একটি জাতীয় দায় মোচন করি।   

লেখক : কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়