মাদকের গ্রাস থেকে তরুণদের বাঁচাতে হবে
দেশে এবার মাদকের সর্বনাশা করাল গ্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। বেশ জোরেশোরেই শুরু হয়েছে এই যুদ্ধ। এই যুদ্ধটা জরুরি ছিল। দীর্ঘদিন ধরেই আমরা জেনে আসছি যে দেশের মূল চালিকা শক্তি তরুণ সমাজকে মাদক কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকেই এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিতে হলো।
অর্থাৎ জঙ্গি দমনের পর মাদক নির্মূলে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, 'দেশ থেকে যেভাবে জঙ্গিবাদ দূর করা হয়েছে একইভাবে মাদকও সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা হবে। আমরা অঙ্গীকার করেছি, এই মাদক থেকে দেশকে উদ্ধার করব।' প্রধানমন্ত্রী যেহেতু বলেছেন, আমরাও তাঁর কথায় আস্থা রাখছি যে এবারে দেশ থেকে মাদক মুক্তি পাবে ইনশা আল্লাহ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জঙ্গিবাদ দমন করেছি। এখন মাদকের ভয়াবহতা থেকে দেশকে রক্ষা করতে পদক্ষেপ নিয়েছি। আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, এরই মধ্যে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সরকার সব আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা বিশেষ করে র্যাবকে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর হতে নির্দেশ দিয়েছে এবং তারা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।’ তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেক ঘরে শান্তি ও সমৃদ্ধি দেখতে চাই। আমাদের ছেলেমেয়েরা কেন বিপথে যাবে? পরিবারের একজন সদস্য মাদকাসক্ত হলে মূলত পুরো পরিবারই ধ্বংস হয়ে যায়।’
পুলিশের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে সম্প্রতি নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে ‘বন্দুক যুদ্ধে’ মাদক ব্যবসা ও পাচারের সাথে জড়িত অনেকেই নিহত হয়েছে। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, যশোর, বরিশাল ও ফেনী জেলায় পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানের সময় এ ঘটনাগুলো ঘটেছে। মে মাসের চার তারিখ থেকেই পুলিশ ও র্যাব মিলে সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। যেভাবে মাদক বিশেষ করে ইয়াবা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে তা ঠেকাতে বহুভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী।
জনগণকে সম্পৃক্ত করে সর্বনাশা মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময়। কেননা, আজকের প্রজন্ম আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কিন্তু তাদের বড় একটি অংশ বিপথে পরিচালিত হচ্ছে। অথচ দেশের শক্তি যুব সমাজ ও তাদের ভবিষ্যৎ মেধাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে মাদক নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়েছে। পুরো জাতির জন্য মাদক উদ্বেগের বিষয়। মাদকের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে যুদ্ধে নামতে হবে।
সামাজিকভাবে মাদকসেবী এবং মাদক ব্যবসায়ীদের প্রত্যাখ্যান করতে হবে। চলমান যুদ্ধে সবাইকে সম্পৃক্ত হতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে, এই অভিযান মূলত দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে। এজন্য যার যার অবস্থান থেকে প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করতে হবে।
ভারত ফেনসিডিল তৈরি করে। তারা তো ফেনসিডিল খায় না। আমরা খাই কেন ? লাখ লাখ কোটি কোটি ইয়াবা তৈরি হচ্ছে মিয়ানমারে। ওরা খাচ্ছে না। আমরা কেন খাচ্ছি?
এই সর্বনাশা, ধ্বংসাত্মক ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। সর্বনাশা, ধ্বংসাত্মক, আত্মবিনাশী এ কর্মকাণ্ড পরিহার করতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের একটা যুদ্ধ করতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে এর আগে নানাভাবে অভিযান চালিয়েও শেষ পর্যন্ত এটি বেশি ফলপ্রসূ হয়নি। আমরা আশা করি শিগগিরই দেশ মাদকের কবল থেকে মুক্তি পাবে। এই মাদক কত শত তরুণকে মৃত্যুর দিকে ধীরে ধীরে ঠেলে দিচ্ছে ? কত পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার। মাদকের গ্রাসে পড়ে যে সব তরুণ মৃত্যুর মুখে চলে গেছে সেগুলো তো এই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ চেয়েও ভয়ঙ্কর। দেশের প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত মাদকের যে বিস্তার ছড়িয়ে পড়েছে তা থেকে জাতি হিসেবে আত্মরক্ষা করতে হলে একটি শুদ্ধি অভিযান জরুরি। এখন আমাদের আর্জি থাকতে পারে বড়জোর এতটুকুই যেন, এই অভিযান রাজনীতি ও বর্ণ, শ্রেণিপরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে পরিচালিত হয়, সেটি হবে বলেও আমাদের বিশ্বাস।
লেখক : ভাইস প্রেসিডেন্ট, এফবিসিসিআই।