সঞ্চয়পত্রের ওপর খড়্গ!
কিছু হলেই বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী সাহেব সঞ্চয়পত্রের ওপর নজর দেন। খড়্গ চালানোর জন্য নিজের অস্ত্রে শান দিতে থাকেন যেন।
ভাবখানা এমন, সঞ্চয়পত্র হচ্ছে গরিবের বউ, তাই কোনো চিন্তাভাবনা না করেই ভাবি ডাকা যায় আর কী। কেউ কিছু মনে করবে না। তিনি মনে করেন, এগুলো যাঁরা কেনেন, তাঁরা সমাজের অসহায় একটি অংশ। হয়তো মনে মনে প্রতিবন্ধীও ভাবেন সঞ্চয়পত্রের ক্রেতাদের। তাই এর সুদের হার কমালে ছাত্র আন্দোলনের মতো কেউ রাজপথে নেমে সরকার পতনের বাঁশি বাজাতে পারবে না। তাঁর মতো মানুষ এ রকমও ভাবতে পারেন, বিশ্বাস নেই।
এই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো নিয়ে তাঁর যত মাথাব্যথা। কিছু হলেই দেখা যায়, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশি, এর সুদের হারের বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে। এ রকম আলোচনা চলতেই থাকে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী এই সঞ্চয়পত্রের বিষয়টিকে খুবই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন।
এই সরকারের আমলে এই মন্ত্রী যত সমালোচনার মুখে পড়েছেন বাংলাদেশের গত বছর বাজেটের সময় সংসদে তিনি প্রভাবশালী নেতাদের তোপের মুখে পড়েছেন। তবুও তিনি তাঁর স্বভাবসুলভ আচরণ বজায় রেখেছেন। অনেকে বলেছেন, তাঁর বয়স হয়েছে, এখন তাঁর অবসরে যাওয়া উচিত।
সর্বশেষ কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্রদের আন্দোলনের সময় তিনি কোটার সংস্কারের সঙ্গে বাজেটকে এক করে ফেলে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছেন। বলেছেন, বাজেটের আগে কোটা নিয়ে কিছু করা যাবে না। কই কোটা, কই বাজেট।
সম্প্রতি দেখলাম ব্যাংকাররা বলেছেন, সুদের হার কমানোর কারণে সাধারণ মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখছে না। তাই তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষ উপায় না পেয়েই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছে। কারণ সঞ্চয়পত্রে সুদের হার একটু বেশি।
খুব সাধারণ হিসাব, মানুষ কোথায় টাকা রাখবে? শেয়ারবাজারে গিয়ে কতবার ধরা খাবে? এই সরকারের আমলে মানুষ শেয়ারবাজারে গিয়ে যেভাবে দেউলিয়া হয়েছে, তা ইতিহাসে রেকর্ড হয়ে থাকবে। তার কিছুই করতে পারেনি সরকার আর তার অর্থমন্ত্রী। এখন মানুষ কোথায় বিনিয়োগ করবে ? ব্যাংকে ভরসা নেই। যেভাবে লুটপাট হয়েছে ব্যাংকিং সেক্টরে, তাতে মানুষ ব্যাংকের কথা শুনলে কেঁপে ওঠে ভয়ে। না জানি তাঁর জীবনের শেষ সম্বলটুকু ব্যাংকে রেখে লোপাট হয়ে যায়।
তাই স্বল্প পুঁজিটুকু দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনে মাসে মাসে গিয়ে বা তিন মাস অন্তর গিয়ে কিছু লাভ পেয়ে নিশ্চিন্তে বাসায় ফিরতে পারছে। সেখানে যদি এই অর্থমন্ত্রী ব্যাংকারদের খুশি করার জন্য সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর চিন্তা করে, তা হলে সাধারণ মানুষ পথে বসে যাবে। আর একবার যদি রাজপথে নেমে যায়, তা হলে সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার সব আশা ভণ্ডুল হয়ে যাবে।
তাই অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, ব্যাংকের লুটপাট বন্ধ করুন আগে। তারপর দেখবেন মানুষ অটোমেটিক ব্যাংকের দিকে নজর দেবে। প্রতিবছর ব্যাংকগুলোকে ভিক্ষা করে করে টাকার জোগান দেবেন আর চোরেরা সব লুটপাট করে খাবে, তাতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ ছাড়া আর কিছুই হবে না।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ মানুষের কথা ভাবতেন। তাই তিনি মহান নেতা হতে পেরেছিলেন। আপনাদের মতো ব্যাংক ডাকাতদের প্রেম দেখানোরা তাঁর দলে থেকে সাধারণ মানুষের করুণা পাবেন শুধু, ভালোবাসা পাবেন না।
সাধারণ মানুষের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিন। গুটি কয়েক ব্যাংক মালিক বলল আর আপনি তারল্য সংকট কমানোর জন্য সমাজের বিশাল জনগোষ্ঠীর সামান্য কয়েকটা টাকা কমানোর পথ বের করবেন না। সঞ্চয়পত্রের ওপর থেকে খড়্গ সরান, প্লিজ।