প্রযুক্তি
পৃথিবী ছাড়িয়ে মানুষের স্যাটেলাইট-চোখ
পৃথিবী কেন্দ্র করে একটানা ঘুরছে কয়েক হাজার স্যাটেলাইট। মাত্র ৫০ বছরে পৃথিবীর মানুষের জীবন পুরোপুরি বদলে দিয়েছে এসব স্যাটেলাইট। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এসব স্যাটেলাইট হচ্ছে- মানুষের তৈরি অন্যতম জটিল এক যন্ত্র। আবহাওয়ার পূর্বাভাস, টেলিযোগাযোগ, টেলিভিশন সম্প্রচার, সামরিক ক্ষেত্র, যোগাযোগ- সবই এখন স্যাটেলাইট প্রযুক্তি নির্ভর।
স্যাটেলাইট কী
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সংজ্ঞা অনুযায়ী, ‘A satellite is a body at orbits around another body in space. There are two different types of satellites – natural and man-made. Examples of natural satellites are the Earth and Moon. The Earth rotates around the Sun and the Moon rotates around the Earth’। এর মানে হলো, মহাকাশে কোনো বস্তুর চারপাশে ঘূর্ণায়মান অন্য কোনো বস্তুই হলো প্রথম বস্তুটির স্যাটেলাইট। এই সংজ্ঞায় প্রাকৃতিক ও মনুষ্য নির্মিত দুই ধরনের স্যাটেলাইটের কথা বলা হয়েছে। ব্যাখ্যা অনুযায়ী, সূর্যের চারপাশে পৃথিবী ঘোরে বলে পৃথিবী হলো সূর্যের স্যাটেলাইট, আবার একই কারণে চাঁদ হলো পৃথিবীর স্যাটেলাইট। আর মানুষের বানানো কৃত্রিম স্যাটেলাইট ঘুরছে পৃথিবীর চারপাশে, কোনো কোনোটি আবার পৃথিবী ছাড়িয়ে চাঁদ ও সৌরজগতের কয়েকটি গ্রহের চারপাশেও ঘুরছে।
এই সংজ্ঞা অনুযায়ী পরিষ্কার, স্যাটেলাইটের বাংলা অর্থ কোনোভাবেই ‘ভূ-উপগ্রহ’ নয়। বাংলায় ‘ভূ-উপগ্রহ’ শব্দটি উল্টো স্যাটেলাইটের বিভ্রান্তিকর পরিচয়ের প্রকাশ ঘটাচ্ছে।
কৃত্রিম স্যাটেলাইটের ধারণা ও বিজ্ঞান
মাত্র ৭৫ বছর আগেও কৃত্রিম স্যাটেলাইট ছিল একটি ধারণা মাত্র, যেটি প্রথম করেছিলেন প্রখ্যাত ব্রিটিশ উদ্ভাবক ও কল্পবিজ্ঞান লেখক আর্থার সি ক্লার্ক। ১৯৪৫ সালে ওয়্যারলেস ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনে লেখা একটি বিজ্ঞান প্রবন্ধে ক্লার্ক প্রথম বলেন, ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরের জিওস্টেশনারি অরবিটে কী করে স্যাটেলাইট স্থাপন করে তা থেকে সিগন্যাল সম্প্রচার করা যেতে পারে। ক্লার্ক নিশ্চিত ছিলেন, মানুষ একদিন না একদিন স্যাটেলাইট পাঠাতে পারবেই। এর ১২ বছর পর প্রথম স্যাটেলাইট স্পুটনিক- ওয়ান মহাশূন্যে পাঠায় তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন। এখনকার দিনে বেশিরভাগ যোগাযোগ স্যাটেলাইট ২২ হাজার ৪০০ মাইল বা প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার উপরের জিওস্টেশনারি অরবিটে থেকে পৃথিবীর ঘূর্ণনের সঙ্গে সমান তাল রেখে ঘুরছে।
পৃথিবীর অভিকর্ষ বল এড়ানোর জন্য স্যাটেলাইটকে প্রচণ্ড গতিতে ঘুরতে হয়। এই গতি বুলেটের গতির চেয়েও বেশি। বন্দুক থেকে গুলি ছুড়লে তা এক সময়ে আবার ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে, কিন্তু তাত্ত্বিকভাবে বুলেটের গতি ঘণ্টায় ১৭ হাজার ৫০০ মাইল বা প্রায় ২৮ হাজার ২০০ কিলোমিটার হলে তা স্যাটেলাইটের মতোই পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে থাকবে। তাই স্যাটেলাইটকে তার নির্ধারিত কক্ষপথে পৌঁছে দিতে ব্যবহৃত রকেটের গতি সেকেন্ডে ৫ মাইল বা ঘণ্টায় ১৮ হাজার মাইল। এর ফলে স্যাটেলাইটের অর্জিত তীব্র গতি অভিকর্ষ বলকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। স্যাটেলাইটটি তখন ভূপৃষ্ঠে পড়ার পরিবর্তে ক্রমাগত পৃথিবীর চারপাশে আবর্তিত হতে থাকে। এটাই আর্থার সি ক্লার্ক নির্দেশিত স্যাটেলাইটের পাক খাওয়ার মূল নীতি।
কৃত্রিম স্যাটেলাইটের যাত্রা
স্যাটেলাইট পাঠানোর চেষ্টার শুরুতে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল এর ওজন ও বিপুল খরচ। একেবারে প্রথম দিকের সরল স্যাটেলাইটের ওজন মাত্র কয়েক কেজি হলেও তা মহাকাশে পাঠানোর খরচ ছিল কয়েক বিলিয়ন ডলার। এখকার দিনের রকেট কয়েক টন ওজনের স্যাটেলাইট কক্ষপথে পৌঁছে দিতে সক্ষম, তবে খরচ আগের মতোই বিপুল। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট তৈরি, কক্ষপথে পাঠানো ও পরিচালনায় খরচ হচ্ছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।
মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর শুরুটা তখনকার দিনের দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের অংশ। পারমাণবিক বোমার প্রথম মালিক যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে সমরাস্ত্রের পাশাপাশি মহাকাশ প্রযুক্তি গবেষণায় জোর দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর নতুন অধ্যায়ের শুরু। মাত্র ২৩ ইঞ্চি ব্যাসের ৮৩.৬ কেজি ওজনের স্পুটনিক- ওয়ান মহাকাশে পাঠায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। স্পুটনিকের রুশ অর্থ- ভ্রমণ-সঙ্গী। কক্ষপথে এটি কার্যকর ছিল মাত্র তিন সপ্তাহ। ঘণ্টায় প্রায় ১৮ হাজার মাইল গতিতে স্যাটেলাইটটির পৃথিবীকে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগত প্রায় ৯৮ মিনিট। ব্যাটারি ফুরিয়ে যাওয়ায় ১৯৫৭ সালের ২৬ অক্টোবর এটি তথ্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়। তবে এরপরেও এটি কক্ষপথে ছিল প্রায় তিন মাস, এ সময়ে স্যাটেলাইটটি পৃথিবীর চারপাশে সাত কোটি মাইল পরিভ্রমণ করেছিল। ভূপৃষ্ঠ থেকে এটি সর্বনিম্ন ২১৫ এবং সর্বোচ্চ ৯৩৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করত। পৃথিবীর ওপরের দিকের বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব সংক্রান্ত কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছিলো স্পুটনিক- ওয়ানের তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে।
এক মাস পর ১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বর স্পুটনিক- টু পাঠায় সোভিয়েতরা। এবারের স্যাটেলাইট শুধু যন্ত্রপাতিতে ঠাসা নয়, ক্যাপসুলে আরোহী এক কুকুর, যার নাম লাইকা। মেয়ে কুকুর লাইকা-ই প্রথম প্রাণী যে স্যাটেলাইটে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিক্রমণ করে। তবে অতিরিক্ত তাপ ও তেজস্ক্রিয়তার কারণে উৎক্ষেপণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে লাইকা মারা যায়। এই মহাকাশ অভিযানের কয়েক দশক পর কুকুরটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ প্রকাশ করে রুশ সরকার। ওজনহীন পরিবেশে প্রাণীর টিকে থাকার কৌশল ও পদ্ধতি জানার দরজা মানুষের সামনে খুলে দিয়েছিল লাইকা।
সোভিয়েত ইউনিয়নের স্পুটনিক যুক্তরাষ্ট্রের সামনে ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। রকেট প্রযুক্তি আর ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি একই ধরনের হওয়ায় সোভিয়েত সমরাস্ত্রের সক্ষমতা নিয়েও আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে যুক্তরাষ্ট্রে। মহাকাশ গবেষণায় বিপুল অর্থ ঢালতে শুরু করে মার্কিন সরকার।
মার্কিন রকেট বিজ্ঞানের শুরু অবশ্য এর বেশ কয়েক দশক আগেই। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের পদার্থবিদ রবার্ট এইচ গডার্ড ১৯২৬ সালের ১৬ মার্চ সর্বপ্রথম তরল জ্বালানির রকেট উৎক্ষেপণ করেন। প্রথম উৎক্ষেপণে তরল অক্সিজেন ও গ্যাসোলিনের জ্বালানি তার রকেটকে মাত্র ৪১ ফুট উচ্চতায় নিতে পেরেছিল। তবে এর মাধ্যমে রকেটের তীব্র গতি সৃষ্টিতে তরল জ্বালানির কার্যকারিতা তিনি ভালোভাবেই বুঝতে পারেন। ১৯৩০-এর দশক ও ৪০-এর দশকের শুরুর পুরোটি সময়ে গডার্ড এই রকেট প্রযুক্তির উন্নয়নে নিরলস কাজ করেন। ফলে এক মাইল উচ্চতা পর্যন্ত পৌঁছে যায় তার রকেট। লোকজন খুব একটা পাত্তা না দিলেও তিনি মনে করতেন, রকেট একদিন চাঁদ পর্যন্ত পৌঁছাবে। তবে অপূর্ণ স্বপ্ন রেখে ১৯৪৫ সালের ১০ আগস্ট মারা যান এই পদার্থবিদ।
যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো প্রথম স্যাটেলাইটের নাম হতে পারত ভ্যানগার্ড- ওয়ান। তবে ১৯৫৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ১.৪৭ কেজি ওজন ও মাত্র ৬.৪ ইঞ্চি ব্যাসের স্যাটেলাইটির উৎক্ষপণ চেষ্টা ব্যর্থ হয়। লঞ্চিং প্যাডেই আগুনে ধ্বংস হয়ে যায় উৎক্ষপক রকেট। মার্কিন নৌবাহিনীর বানানো এই স্যাটেলাইট ভ্যানগার্ড- ওয়ান শেষ পর্যন্ত উৎক্ষেপণ হয় আরো তিন মাস পর ১৯৫৮ সালের ১৭ মার্চ। ভ্যানগার্ড- ওয়ান সৌর শক্তি চালিত প্রথম স্যাটেলাইট। ১৯৬৪ সালের মে মাসে এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও এখনো স্যাটেলাইটটি কক্ষপথে ঘুরছে।
তবে ভ্যানগার্ড- ওয়ানের চূড়ান্ত উৎক্ষপণের দেড় মাস আগে ১৯৫৮ সালের ৩১ জানুয়ারি মার্কিন স্যাটেলাইট এক্সপ্লোরার- ওয়ানের সফল উৎক্ষেপণ হয়। এটিই কক্ষপথে পৌঁছানো যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম স্যাটেলাইট। ১৩.৯৭ কেজি ওজনের ব্যাটারিচালিত স্যাটেলাইটটির উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দেন জার্মানি থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে পালিয়ে আসা রকেট বিশেষজ্ঞ ভানহাফ ফন প্রাউন। তার নিরলস প্রচেষ্টাতেই সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশ জয় মোকাবিলার পথ খুলে যায় যুক্তরাষ্ট্রের সামনে। সব মিলিয়ে ১১১ দিন এক্সপ্লোরার- ওয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল গ্রাউন্ড স্টেশনের, তবে এরপরেও ১৯৭০ সাল পর্যন্ত স্যাটেলাইটটি কক্ষপথে ছিল।
ঘুরে দাঁড়ানো মার্কিনিদের তিন বছর পর আবারো চমক দেখায় সোভিয়েতরা। ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল ভোস্টক- ওয়ান মহাকাশযানে চেপে প্রথম পৃথিবীর বাইরের কক্ষপথে পৌঁছান একজন মানুষ, যার নাম ইউরি গ্যাগারিন। পেশায় বৈমানিক গ্যাগারিন ৮৯.১ মিনিটে সর্বোচ্চ ২০৩ মাইল গতিতে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করেন। রকেট উৎক্ষেপণ থেকে শুরু করে তার পৃথিবীতে অবতরণ পর্যন্ত সময় লেগেছিল ১০৮ মিনিট। মহাকাশযাত্রার সাত বছর পরে, ১৯৬৮ সালের ২৭ মার্চ একটি মহড়া চলার সময় মিগ-ফিফটিন যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়ে মারা যান ইউরি গ্যাগারিন।
গ্যাগারিনের মহাকাশ মিশনের ১০ মাস পর ১৯৬২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি প্রথম মার্কিনি জন গ্লেন স্পেস ক্যাপসুল ফ্রেন্ডশিপ সেভেনে তিনবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন। ঘণ্টায় গতি ছিল ১৭ হাজার ৫০০ মাইল। ১৯৯৮ সালে আবারো মহাকাশে যান গ্লেন। সবচেয়ে বেশি বয়সে মহাকাশে যাওয়ার রেকর্ড তার দখলে। ২০১৬ সালে ৮ ডিসেম্বর ৯৫ বছর বয়সে মারা যান তিনি।
অন্যদিকে, গ্যাগারিন মিশনের দুই বছর পর ১৯৬৩ সালের ১৬ জুলাই প্রথম নারী নভোচারী ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভাকে মহাকাশে পাঠায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। ভোস্টক- সিক্স মহাকাশযানে তিন দিনে ৪৮ বার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা। এর ২০ বছর পর ১৯৮৩ সালের ১৮ জুন মহাকাশে যান প্রথম মার্কিন নারী নভোচারী স্যালি রাইড। স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জারে মহাকাশে প্রায় ১৪ দিন আট ঘণ্টা ছিলেন স্যালি।
সোভিয়েতকে শেষপর্যন্ত ১৯৬৯ সালে টেক্কা দিতে সক্ষম হয় যুক্তরাষ্ট্র। সে বছরের ২০ জুলাই প্রথম চাঁদে পা রাখে মানুষ। মার্কিন নভোযান অ্যাপোলো- ইলেভেনের বিশেষ ক্যাপসুল ঈগলে করে চাঁদের মাটিতে পৌঁছান নিল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন। আরেক নভোচারী মাইকেল কলিন্স ছিলেন মূল নভোযান কলম্বিয়ায়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চাঁদের মাটিতে ছিলেন আর্মস্ট্রং ও অলড্রিন। শুরু হয় পৃথিবী ছাড়িয়ে মানুষের মহাকাশ জয়ের নতুন অধ্যায়। এই তিনজনই পরে যুক্তরাষ্ট্রের 'প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম'পদক পেয়েছেন। ২০১২ সালের ২৫ আগস্ট ৮২ বছর বয়সে মারা যান চাঁদের বুকে পা রাখা প্রথম মানুষ নিল আর্মস্ট্রং।
স্যাটেলাইটের নানা রূপ
এক্সপ্লোরার- ওয়ান উৎক্ষেপণের ৮ মাসের মাথায় ১৯৫৮ সালের ১ অক্টোবর মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার যাত্রা শুরু। শান্তিপূর্ণ মহাকাশ গবেষণার উদ্দেশ্যে নাসা গঠনের কথা সরকারিভাবে বলা হলেও মূল লক্ষ্য ছিল মহাকাশে সোভিয়েত আধিপত্য প্রতিহত করা। সোভিয়েত পারমাণবিক স্থাপনা ও সেনা অবস্থানের ছবি মহাকাশ থেকে তোলার জন্য শুরু হয় সিআইএর তত্ত্বাবধানে স্পাই স্যাটেলাইট তৈরির প্রকল্প। ১৯৫৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি কক্ষপথে পাঠানো প্রথম স্পাই স্যাটেলাইট ডিসকভারার- ওয়ানের ওজন ছিল ৫৮৯.৬৭ কেজি। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের কথা সরকারিভাবে বলা হলে সিআইএর এই স্পাই প্রজেক্টের কোড নেইম ছিল ‘কোরোনা’।
১৯৬০ সালের ১১ আগস্ট ডিসকভারার- থার্টিন একটি উত্তাপ প্রতিরোধক বিশেষ ক্যাপসুল প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলে। নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার সেটি উদ্ধার করে ওয়াশিংটনে নিয়ে যাওয়ার পর অবমুক্ত করেন প্রেসিডেন্ট আইজেন হাওয়ার। এর ভেতরে ছিল একটি মার্কিন পতাকা। এর মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হয়, স্যাটেলাইটের তোলা ছবি ক্যাপসুলের সাহায্যে পৃথিবীতে পাঠানো সম্ভব। আটদিন পরেই ১৯৬০ সালের ১৯ আগস্ট মহাকাশ থেকে তোলা একটি ছবি ক্যাপসুলের সাহায্যে পৃথিবীতে পাঠায় আরেকটি স্পাই স্যাটেলাইট ডিসকভারার- ফর্টিন। তবে এভাবে পাঠানো ছবির মান খুব খারাপ থাকায় হতাশ হয় সিআইএ। ফলে তখনকার প্রচলিত গোয়েন্দা বিমান ইউ-টুর ছবির ওপরেই আবার আস্থা রাখতে শুরু করে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
তবে ১৯৬০ সালের ১ মে সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্রে একটি ইউ টু বিমান এবং ১৯৬২ সালের অক্টোবরে আরেকটি বিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনায় মার্কিন সমর বিশেষজ্ঞরা বুঝতে পারেন, গোয়েন্দা বিমান দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ নজরদারি চালানো অসম্ভব। ফলে আবারো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নজরদারির প্রকল্প গুরুত্ব পেতে শুরু করে। ১৯৬২ সালে সবগুলো মার্কিন গোয়েন্দা স্যাটেলাইটের কর্যক্রম সমন্বয় করে সেগুলোর কোড নেইম দেয়া হয় ‘কি-হোল’। এসব স্যাটেলাইটের ছবির মান উন্নয়নের গবেষণা জোরদার হয়, তবে ১৯৬০ ও ৭০-এর দশকের গোড়ার দিক পর্যন্ত স্যাটেলাইটের তোলা ছবির সবই পৃথিবীতে এসেছে ক্যাপসুলের মাধ্যমে। এতে কোনো স্থাপনা বা ঘটনার ছবি তোলার পর তা সামরিক বিশেষজ্ঞদের হাতে পৌঁছাতে ৪ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত লেগে যেত। তাই দ্রুত ছবি পেতে রেডিও সিগন্যাল কাজে লাগানোর গবেষণা শুরু হয়।
১৯৭৭ সালের ২৮ জানুয়ারি জিমি কার্টার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার দিনেই কি-হোল- ইলেভেন স্যাটেলাইট প্রথমবার সিগন্যালের সাহায্যে ইলেক্ট্রো-অপটিকাল ডিজিটাল ছবি প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাউন্ড স্টেশনে পাঠাতে সক্ষম হয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্পাই স্যাটেলাইটের সেই ছবি তোলা ও পাঠানোর পদ্ধতি এরপর ধারাবাহিকভাবে উন্নত হয়েছে। এখনকার দিনে ব্যবহৃত হচ্ছে আল্টা-ভায়োলেট ও ইনফ্রারেড রশ্মি, যার ফলে স্যাটেলাইট রাত-দিন যে কোনো সময়ে, যে কোনো আবহাওয়ায় যে কোনো জায়গার ছবি তুলতে সক্ষম। সামরিক প্রয়োজন ছাড়িয়ে এখন বেসামরিক খাতে বাণিজ্যিকভাবেও ব্যবহৃত হচ্ছে অসংখ্য স্যাটেলাইট।
১৯৬০ সালের ১ এপ্রিল কক্ষপথে পাঠানো টাইরস- ওয়ান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণে সক্ষম প্রথম স্যাটেলাইট। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রকল্পের আওতায় পাঠানো এই স্যাটেলাইটটি কক্ষপথে ছিল ৭৮ দিন। টাইরস- ওয়ানের পাঠানো ছবি বিশ্লেষণ করে মেঘ সঞ্চারিত হওয়ার প্রক্রিয়া ও ঝড়ের পূর্বাভাস দেয়ার উপায় জানতে পারেন বিজ্ঞানীরা। এর পরের বছর টাইরস- থ্রি আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট একটি হারিকেন সবার আগে চিহ্নিত করে ছবি পাঠাতে সক্ষম হয়েছিল। আবহাওয়া স্যাটেলাইট সাধারণত বেশ নিচুতে (ভূপৃষ্ঠ থেকে এক হাজার কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে) দুই মেরুর ওপর দিয়ে (পোলার অরবিট) পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে। কিছু অবশ্য জিওস্টেশনারি অরবিটেও রয়েছে, যেগুলো নির্দিষ্ট অঞ্চলের বছরব্যাপী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণে সক্ষম। ঝড়ের পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে সঞ্চারণশীল মেঘমালার যে ছবি আমরা পাই, তা সাধারণত জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের তোলা, পৃথিবী থেকে যেগুলোর কক্ষপথ প্রায় ২২ হাজার ৪০০ মাইল বা ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে।
ভূতাত্ত্বিক গঠন, ভূমির বৈশিষ্ট্য ও বিন্যাস পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের জন্য বিশেষায়িত স্যাটেলাইটের নাম ‘ল্যান্ডস্যাট’। ১৯৭২ সালের ২৩ জুলাই ল্যান্ডস্যাট- ওয়ান উৎক্ষেপণ করে যুক্তরাষ্ট্র। মহাকাশ থেকে ভূত্বকের উচ্চ রেজল্যুশনের ছবি তুলতে সক্ষম এই স্যাটেলাইট। ভূত্বকের চ্যুতিরেখা চিহ্নিত করা থেকে শুরু করে বনভূমি-কৃষিজমির পরিমাপ, নগর মানচিত্র তৈরি- সবকিছুই সম্ভব এসব স্যাটেলাইট দিয়ে। এখন পর্যন্ত আটটি ল্যান্ডস্যাট কক্ষপথে পাঠানো হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পাঠানো হবে ল্যান্ডস্যাট- নাইন।
গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস হলো বিশেষায়িত বেশকিছু স্যাটেলাইটের একটি নেটওয়ার্ক যার নাম ‘ন্যাভস্টার’। এর মালিকানা যুক্তরাষ্ট্রের এবং মার্কিন বিমান বাহিনী এটি পরিচালনা করছে। এই নেটওয়ার্কের প্রধান ২৪টি স্যাটেলাইটের প্রতিটি বিভিন্ন দিক থেকে দিনে দুইবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে। বিভিন্ন দিক থেকে অন্তত চারটি স্যাটেলাইটির ডেটা বিশ্লেষণ করে যে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব। জিপিএস আগে শুধু মার্কিন সামরিক বাহিনী ব্যবহার করলেও এখন তা সবার জন্য উন্মুক্ত। পৃথিবী থেকে ১২ হাজার ৪২৭ মাইল বা ২০ হাজার কিলোমিটার দূরের কক্ষপথে রয়েছে জিপিএস স্যাটেলাইট। এ ধরনের প্রথম স্যাটেলাইট ব্লক-ওয়ান কক্ষপথে পাঠানো হয় ১৯৭৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি।
যোগাযোগ স্যাটেলাইটের ওপর এখন নির্ভরতা পুরো বিশ্বের। টেলি যোগাযোযোগ, টেলিভিশন ও রেডিও সম্প্রচার, ইন্টারনেট- এসব স্যাটেলাইট ছাড়া এক কথায় অচল। বিশ্বের প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট ছিল ইকো- ওয়ান নামের একটি বেলুন। ১৯৬০ সালের ১২ আগস্ট এটি পৃথিবী থেকে এক হাজার মাইল ওপরের কক্ষপথে পাঠায় মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ইকো- ওয়ানে যুক্ত দশ তলা ভবনের সমান উচ্চতার সুবিশাল আয়না রেডিও তরঙ্গকে প্রতিফলিত করে আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম ছিল। স্যাটেলাইটটি উৎক্ষপণের পর প্রেসিডেন্ট আইজেন হাওয়ার পরীক্ষামূলকভাবে তার বক্তব্য দেশজুড়ে সম্প্রচার করেছিলেন। এর দুই বছর পর ১৯৬২ সালের ১০ জুলাই প্রথম বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্যাটেলাইট টেলস্টার- ওয়ান কক্ষপথে পাঠায় নাসা। প্রযুক্তি তখন কিছুটা উন্নত হলেও বেশ কম দূরত্বের কক্ষপথে যোগাযোগ স্যাটেলাইটের অবস্থানের কারণে সংকেত গ্রহণের অ্যান্টেনাকে সারাক্ষণ স্যাটেলাইটের গতিপথ অনুসরণ করতে হতো। কখনো অ্যান্টেনা সংকেত ধরতে না পারলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত যোগাযোগ। তাছাড়া পুথিবীকে দ্রুতগতিতে পাক খেত বলে মাত্র কয়েক মিনিট যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে থাকত টেলস্টার।
এমন অবস্থায় জিওস্টেশনারি যোগাযোগ স্যাটেলাইট সিনকম- ওয়ান তৈরি করে নাসা। তবে ১৯৬৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি উৎক্ষেপণের পরপরই কারিগরি ত্রুটির কারণে এর সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে যায়। এর পাঁচ মাস পর ১৯৬৩ সালের ২৬ জুলাই পাঠানো হয় সিনকম- টু। প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরের জিওস্টেশনারি কক্ষপথে যাওয়া প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট এটি। এর প্রথম পরীক্ষায় প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ওয়াশিংটন থেকে সরাসরি টেলিফোন করেছিলেন আফ্রিকা উপকূলের এক জাহাজে। সিনকম- টু একসঙ্গে মাত্র ২৪০টি ফোনকলের সংযোগ দিতে সক্ষম হলেও এটি জিওস্টেশনারি অরবিটের কার্যকারিতা সফলভাবে উন্মোচন করে। ১৯৬৪ সালে জাপানে আয়োজিত গ্রীষ্মকালিন অলিম্পিক প্রথমবার সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশনে সম্প্রচার হয়। সিনকম- টু’র ধারাবাহিকতায় গত কয়েক দশকে একের পর এক পাঠানো হয়েছে জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট। বঙ্গবন্ধু-১ এমনই সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এক জিওস্টেশনারি যোগাযোগ স্যাটেলাইট।
কক্ষপথে যেভাবে যাবে বঙ্গবন্ধু- ১
পৃথিবীর ৩৬ হাজার কিলোমিটার ওপর দিয়ে পাক খাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। তবে পৃথিবী থেকে দূর আকাশে স্থির দেখা যাবে এর অবস্থান। কারণ এই স্যাটেলাইট পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির সঙ্গে সমানতাল রেখে ঘুরবে নিজের কক্ষপথে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণ করেছে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান তালেস এলিনিয়া স্পেস। আর একে কক্ষপথে পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানি স্পেসএক্স। সর্বাধুনিক ফ্যালকন- নাইনের ব্লক ফাইভ মডেলের রকেটের সাহায্যে ফ্লোরিডার কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ প্যাড থেকে উড়বে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। এবারই প্রথম ব্যবহার করা হচ্ছে ফ্যালকন- নাইন রকেটের ব্লক- ফাইভ মডেল। প্রতিটি রকেট কমপক্ষে ১০টি স্যাটেলাইট পাঠাতে পারবে কক্ষপথে। এতদিন স্যাটেলাইট পাঠাতে ফ্যালকন নাইন ব্লক- ফোর মডেলের রকেট ব্যবহার করছিল স্পেসএক্স। এ ধরনের রকেটের সাহায্যে সর্বোচ্চ তিনটি স্যাটেলাইট পাঠানো সম্ভব। স্পেসএক্স কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন ব্লক ফাইভ মডেলের রকেটের নিরাপত্তা আগের চেয়ে অনেক উন্নত। পাশাপাশি প্রচুর জ্বালানি সাশ্রয়ও করবে এই রকেট।
তিন হাজার ৫০০ কেজির স্যাটেলাইটটি কক্ষপথে পাঠাতে রকেটের দুটি অংশ পর্যায়ক্রমে সক্রিয় হবে। ফ্যালকন- নাইন রকেটের একেবারে ওপরের অংশে থাকবে স্যাটেলাইট, তারপরেরটি অ্যাডাপটর। আর এরপর থাকবে স্টেজ- টু এবং সবচেয়ে নিচে স্টেজ-ওয়ান। উৎক্ষেপণের শুরুতে তরল অক্সিজেন এবং রকেট গ্রেড কেরোসিন- আরপি ওয়ানের বিক্রিয়া শুরু হয়ে প্রসারিত গ্যাস বের হবে প্রচণ্ড বেগে। আর নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র মেনে অবিশ্বাস্য গতিতে ছুটতে শুরু করবে ফ্যালকন নাইন। মাত্র এক মিনিটের মধ্যে গতি পৌঁছাবে ঘণ্টায় প্রায় এক হাজার কিলোমিটারে। এই পর্যায়টির নিয়ন্ত্রণ করবে রকেটের একেবারে নিচের অংশ বা স্টেজ- ওয়ান। উৎক্ষেপণের প্রায় তিন মিনিট পর ভূপৃষ্ঠ থেকে থেকে ৭০ কিলোমিটার ওপরে পৌঁছে খুলে যাবে স্টেজ- ওয়ান। বাকি অংশের গতি তখন ঘণ্টায় প্রায় আট হাজার কিলোমিটার। স্টেজ- ওয়ান ফিরে আসবে পৃথিবীতে, আর রকেটটির নিয়ন্ত্রণ তখন স্টেজ- টুর কাছে। এটি আরো তীব্র গতিতে স্যাটেলাইটকে পৌঁছে দেবে নির্ধারিত কক্ষপথের দিকে। যাত্রা শুরুর প্রায় ৯ মিনিটের মাথায় পৃথিবী থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দূরে স্যাটেলাইটটি থেকে বিচ্ছিন্ন হবে স্টেজ- টু। এ সময় গতি পৌঁছাবে ঘণ্টায় ৩৬ হাজার কিলোমিটারে।
বঙ্গবন্ধু- ১ স্যাটেলাইটের কক্ষপথ ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রণ করে এটি সঠিকভাবে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরের কক্ষপথে স্থাপন করা হবে, যাতে সময় লাগতে পারে আট থেকে ১০ দিন। এরপরেই নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করা হবে বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে। গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ার গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটিকে। এটি কার্যকর থাকবে ১৫ বছর।বঙ্গবন্ধু-১ কক্ষপথে পৌঁছানোর পর ৫৮তম দেশে হিসেবে স্যাটেলাইটের মালিক হবে বাংলাদেশ।
কৃত্রিম স্যাটেলাইটের মালিকানা
গত আগস্টে বহিঃমহাকাশ বিষয়ক জাতিসঙ্ঘ কার্যালয়- নুসার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ৪ হাজার ৬৩৫টি স্যাটেলাইট পৃথিবীকেন্দ্রিক কক্ষপথে রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৩৮টি কার্যকর, বাকি সবই অকেজো বা ধ্বংসাবশেষ। সক্রিয় স্যাটেলাইটের মধ্যে ৭৪২টি যোগাযোগ স্যাটেলাইট, পৃথিবী পর্যবেক্ষণ বিষয়ক ৫৯৬টি, প্রযুক্তি বিষয়ক ১৯৩টি, দিক নির্ণয়/অবস্থান শনাক্তকরণ বিষয়ক ১০৮টি, মহাকাশ গবেষণা বিষয়ক ৬৬টি, ভূত্বক গবেষণা বিষয়ক ২৪টি, মহাকাশ বিজ্ঞান বিষয়ক ৯টি স্যাটেলাইট রয়েছে। এসব স্যাটেলাইটের ৭৮৮টি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত, ৪৬১টি সরকারি কাজে, ৩৬০টি সামরিক প্রয়োজনে এবং ১২৯টি বেসামরিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, গত আগস্ট পর্যন্ত মহাকাশে কার্যকর স্যাটেলাইটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮০৩টির মালিক যুক্তরাষ্ট্র, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীনের রয়েছে ২০৪টি, এরপর রাশিয়ার আছে ১৪২টি স্যাটেলাইট। কার্যকর স্যাটেলাইটের ৬১.৬% রয়েছে কম দূরত্বের কক্ষপথে, ৩০.৬% আছে জিওস্টেশনারি কক্ষপথে, ৫.৬% আছে মাঝারি দূরত্বের কক্ষপথে, আর ২.২% আছে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে।
বার্তা সম্পাদক, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন