এক্সট্রা কাভার
অস্ট্রেলিয়ার কাছাকাছি থাকবে তো বাংলাদেশ?
ক্রিকেট ইতিহাসের অনেক তর্কই পরিসংখ্যান দিয়ে মীমাংসিত হয়নি। আবার পরিসংখ্যান নিছকই পরিসংখ্যান নয়। ক্রিকেটে শ্রেষ্ঠত্ব মাপার গুরুত্বপূর্ণ একটা মাপকাঠিও বটে। তার পরও বলতে হচ্ছে, পরিসংখ্যান হচ্ছে অতীতের চিত্র তুলে ধরার কিছু সংখ্যা, যা দেখে মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য ওই সংখ্যাগুলো যথেষ্ট নয়। কথাগুলো পড়ে অনেকের খটকা লাগতে পারে। প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলে পরিসংখ্যান নিয়ে এত মাতামাতি কেন। পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই তো স্যার ডন ব্র্যাডম্যান সফল। তাঁর সাফল্য যুগোত্তীর্ণ। তিনি সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান।
আসলে পরিসংখ্যান নিয়ে মাতামাতি যেমন আছে, তেমনি বিভ্রান্তিও আছে! পরিসংখ্যান অনেক সময় বিভ্রান্তিও তৈরি করে। একেবারে সাম্প্রতিক একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরলে বিভ্রান্তির চিত্রটা আরো পরিষ্কার হয়ে ওঠে। সেপ্টেম্বরের শেষে বাংলাদেশে আসছে অস্ট্রেলিয়া। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে তারা। যেকোনো সিরিজ শুরুর আগে পরিসংখ্যান আর রেকর্ডের পাতা ঘাঁটাঘাঁটি শুরু হয়ে যায়। তবে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট সিরিজের ইতিহাস খুব সংক্ষিপ্ত। এবং সেখানে অস্ট্রেলিয়ানদের প্রাধান্য। তাই সেই ইতিহাসে আগ্রহী ক্রিকেটমনস্ক মানুষের সংখ্যাও কম। তবে দুটো দলের সাম্প্রতিক টেস্ট পারফরম্যান্সের পরিসংখ্যান অদ্ভুত এক তথ্য দিচ্ছে! অস্ট্রেলিয়া তাদের খেলা গত পাঁচ টেস্টের তিনটা হেরেছে। জিতেছে দুটো। আর বাংলাদেশ তাদের খেলা পাঁচ টেস্টের মধ্যে হেরেছে মাত্র একটা! বাকি চার টেস্ট ড্র! আর ড্র করা সেই প্রতিপক্ষ দলগুলোর নাম পাকিস্তান, ভারত আর সাউথ আফ্রিকা। এই পরিসংখ্যানের নিচে হয়তো অনেকে ফুটনোট দিতে আগ্রহী হয়ে পড়বেন, ‘সৌজন্যে-বৃষ্টি!’
হ্যাঁ, বৃষ্টি ছিল ভারত, সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে তো খুলনায় একেবারে খাদের কিনার থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে টেস্ট ড্র করেছে বাংলাদেশ। এবং সেটা পূর্ণশক্তির পাকিস্তানের বিপক্ষে। যে পাকিস্তান শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে সিরিজ জিতেছে। বৃষ্টির কথা বাদ দিন। মনোযোগটা পরিসংখ্যানের পাতায় রাখুন। বাংলাদেশকে খুব একটা পিছিয়ে রাখতে পারবেন না অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে! কথাটা শুনে কারো ভ্রূ কুঁচকে যেতে পারে। কেউ মুচকি হাসতে পারেন। কিন্তু কিছু করার নেই। কারণ, পরিসংখ্যান দিয়ে পারফরম্যান্স মাপলে সত্যিই বাংলাদেশ খুব একটা পিছিয়ে ছিল না অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে!
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গেল পাঁচ টেস্টে অস্ট্রেলিয়া নয় ইনিংসে মোট রান করেছে ২,৫৬৫। আর বাংলাদেশ পাঁচ টেস্টের আট ইনিংসে রান করেছে মোট ২,১৬৪। ইনিংসপ্রতি অস্ট্রেলিয়া গড়ে রান তুলেছে ২৮৫। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ইনিংসপ্রতি গড়ে রান তুলেছে ২৭০ দশমিক ৫। ওভারপ্রতি অস্ট্রেলিয়া রান তুলেছে ৩ দশমিক ৭৫। ওভারপ্রতি বাংলাদেশের রান ৩ দশমিক ৩৬। অস্ট্রেলিয়া নয় ইনিংসে মোট ব্যাট করেছে ৬৮৪ ওভার। আর বাংলাদেশ আট ইনিংসে ব্যাট করেছে ৬৪৪ ওভার। গড়ে বাংলাদেশের প্রতিটি ইনিংসের আয়ু ছিল ৮০ দশমিক ৫৬ ওভার। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার প্রতি ইনিংস ছিল ৭৬ দশমিক শূন্য ১ ওভার। গত পাঁচ টেস্টে ইনিংসপ্রতি গড়ে বেশি সময় ব্যাট করার কৃতিত্ব অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে বাংলাদেশের বেশি!
পরিসংখ্যান আরো কৌতূহলোদ্দীপক মজার তথ্য দিচ্ছে। যে ইংল্যান্ডের কাছে সিরিজ হেরে বাংলাদেশে আসছে অস্ট্রেলিয়া, সেই ইংল্যান্ডের চেয়ে পাঁচ টেস্টে ইনিংসপ্রতি গড়ে রান বেশি করেছে বাংলাদেশ! ইংল্যান্ড পাঁচ টেস্টে মোট রান করেছে ২,৩৬৫। ইনিংসপ্রতি গড় ২৬২ দশমিক ৭৮। আর বাংলাদেশের ইনিংসপ্রতি গড় ২৭০ দশমিক ৫ রান! তার পরও ইংলান্ডের কত জয়ডঙ্কা! কারণ, তাঁরা অ্যাশেজ জিতেছে। আসলে অ্যাশেজটা ইংল্যান্ডকে জিতিয়েছে তাদের বোলাররা। অস্ট্রেলিয়ান পেসার আর স্পিনরারা মিলে পাঁচ টেস্টে ইংলিশদের ৬১ উইকেট তুলে নিতে পেরেছিলেন। আর ইংলিশ বোলাররা তুলে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ৮০ উইকেট। পার্থক্যটা ওখানেই হয়ে গেছে। সিরিজ নির্ধারণী পারফরম্যান্সটা করেছেন ইংলিশ বোলাররা। এখানেও সেই পুরোনো কথাটাই চলে আসে। আধুনিক ক্রিকেটে যেটা অনেক বেশি প্রচলিত—এ ক্যাপ্টেন ক্যান ওনলি বি অ্যাজ গুড অ্যাজ হিজ বোলার্স।
অতএব, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভালো করতে হলে বাংলাদেশের বোলারদের আরো ভালো কিছু করে দেখাতে হবে। আগের সিরিজে হাইপ তোলা মুস্তাফিজ কিংবা আইসিসির র্যাংকিংয়ে শীর্ষে থাকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের জন্য সত্যিই বড় চ্যালেঞ্জ হবে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ।
পরিসংখ্যান সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে যতই অস্ট্রেলিয়ার খুব কাছাকাছি রাখুক বাংলাদেশকে, বাস্তবে টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার অনেক দূরবর্তী প্রতিবেশী হচ্ছে বাংলাদেশ। এবার সেই দূরত্বটা ঘোচানোর পাল্লা।
লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক