অভিমত
‘পরিমিতিবোধ’ শব্দটা কি হারিয়ে গেছে?
‘পরিমিতিবোধ’ শব্দটা ছোটবেলায় যখন প্রথম শুনেছিলাম এর অর্থ পুরোপুরি বুঝতে পারিনি। তবে মনে হতো এটা একটা দামি শব্দ। কথাটা বলতে পারার মধ্যেও একধরনের ভাব গাম্ভীর্য থাকে। যিনি কথাটা উচ্চারণ করেন তাঁরও একটা ওজন আছে। বড় হওয়ার পর শব্দটার অর্থ বোঝার চেষ্টা করেছি।
কিন্তু বর্তমানে ওই শব্দটা মাথায় প্রায় এসে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমের খবর দেখে বা পড়ে ‘পরিমিতিবোধ’ শব্দটার মানে নতুন করে বোঝার চেষ্টা করছি। আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীদের বিভিন্ন বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে তারাও আমার ছোটবেলার মতো ‘পরিমিতিবোধ’ শব্দটার অর্থ পরিণত বয়সেও বুঝে উঠতে পারেননি।
প্রিয় পাঠক, সম্প্রতি গণমাধ্যমে চোখ রাখলে দেখা যাবে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো রাজনীতিবিদ তাদের প্রতিপক্ষকে উদ্দেশ করে এমন এমন সব বক্তব্য দিচ্ছেন যা শুনে মনে হবে তারা সবাই ছোটই রয়ে গেছেন। যেমন ছোটবেলা নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট বিষয়ে ছোটরা যেমন কথা বলে, মৃদু ঝগড়া করে তেমনভাবেই রাজনীতিবিদরা কথা বলছেন।
সবচেয়ে অবাক লাগে যখন এক রাজনৈতিক দলের নেতা প্রতিপক্ষ দল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এমন এমন ভাষায় বক্তব্য দেন যে, মনে হয় প্রতিপক্ষ দলের প্রতি দরদ উছলে পড়ছে। এরপর পাল্টা আবার ওই প্রতিপক্ষ দলের কোনো নেতা ওই একইভাবে মন্তব্য করেন।
খালেদা জিয়া জেলখানায় একদিন থাকলে বিএনপির ১০ লাখ ভোট বাড়বে। বিএনপির কোনো নেতার এমন বক্তব্যের পর প্রতিপক্ষের কেউ একজন বলছেন একদিন জেলে থাকলে ১০ লাখ ভোট কমবে। বিএনপি একটা আইট্টা কলাগাছে পরিণত হয়েছে। এ রকম সব রুচিহীন মন্তব্যও ছুড়তেও কেউ পিছপা হচ্ছেন না।
বিএনপির ভোট হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ে কোনো যন্ত্রণা থাকলে সেটা বিএনপির-ই থাকা উচিত। এ ব্যাপারে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। ওই যে কথায় বলে না মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশি। ওই কথাটাই মনে পড়ছে, এই ধরনের বক্তব্য শুনে।
এই বিষয়টি যে তারা বোঝেন না, ব্যাপারটি সে রকমও না। আসলে কোন ধরনের বক্তব্য দেওয়া উচিত বা উচিত না সেই বিষয়ে ওই পরিমিতিবোধের অভাব।
এই পরিমিতিবোধ সবক্ষেত্রেই সবার থাকা উচিত। যখন যা ইচ্ছে হলো বলে ফেললাম, এই ধরনের ছেলেমানুষি আসলে ছোটবেলায় মানায়। আমরা আসলে শিশুসুলভ আচরণে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি, মনে হচ্ছে।
রাজনৈতিক নেতাদের কাছে এ ধরনের বক্তব্য আসা আমাদের পীড়িত করে। কারণ দেশ নিয়ে যারা ভাবেন, দেশের ভালোমন্দ যাদের ওপর নির্ভর করে তাদের কাছ থেকে এ রকম মানসিকতা আমাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে দেয়। কাদের কাছে আমরা দেশের দায়িত্ব দিয়েছি, তাহলে?
এ রকম প্রশ্ন আমাদের মনে এসে ভিড় করে।