দৃষ্টিপাত
সাহিত্যকর্মকে সরকারিভাবে আরো উৎসাহ দেওয়া দরকার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি অনুরাগী মানুষ তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। শিল্পী, সাহিত্যিকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অনুরাগ থাকার মূল কারণ তাঁর সমৃদ্ধ পারিবারিক ঐতিহ্য ও তাঁর লেখকসত্ত্বা। এ বিষয় সবাই অবগত যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিল্পী, সাহিত্যিকদের অসম্ভব রকম ভালোবাসতেন এবং সম্মান করতেন। শেখ হাসিনা জাতির জনকের সেই প্রবাহটি অব্যাহত রাখছেন। যদিও প্লেটো তাঁর আদর্শ রাষ্ট্রে কবিদের নির্বাসিত করার কথা বলেছেন, কিন্তু আমরা মনে করি, একজন আদর্শ সরকার প্রধানকে অবশ্যই শিল্প-সাহিত্যমনা হওয়া উচিত।
শেখ হাসিনা একজন লেখকও। তাঁর ১০টির অধিক গ্রন্থ রয়েছে। ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ বইটি আমি অভিভূত হয়ে পড়েছি। সময় সুযোগ মতো বই পড়ার অভ্যেস আছে শেখ হাসিনার। বই পড়ুয়া মানুষ তিনি। বিভিন্ন বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর পড়া বই, পছন্দের লেখকদের কথা বলতে শুনি। সমকালীন লেখকদের মধ্যে সেলিনা হোসেন, হরিশংকর জলদাস প্রমুখ প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের লেখক। রবীন্দ্রসঙ্গীতের নিয়মিত শ্রোতা তিনি। সবমিলিয়ে সংস্কৃতিবান মানুষ হিসেবে ‘শেখের বেটি’ শেখ হাসিনার শিল্পী ও লেখকদের প্রতি অনুরাগ বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সাহিত্য চর্চাকে আরো বেশি গতিশীল করছে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
শিল্প-সাহিত্য বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীতভাবে কয়েকটি প্রস্তাবনা রাখতেই আজকের এ লেখা। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে প্রতি জেলার নির্দিষ্ট সংখ্যক সংস্কৃতিসেবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে তাদের কার্যক্রম আরো বেশি বেগবান করতে ও উদ্দীপনা জোগাতে বাৎসরিক নির্দিষ্ট অঙ্কের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। এতে করে সংস্কৃতিসেবীরা যেমন উপকৃত হয়, তেমনি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও উজ্জীবিত থাকে। আমি এই কার্যক্রমের সাথে সাহিত্যকর্মী ও সাহিত্য সংগঠনগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি জানাই। যদি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতিটি জেলার নির্দিষ্ট সংখ্যক সাহিত্যকর্মী ও সাহিত্য সংগঠনকে সহযোগিতা করা যায় তবে তা অবশ্যই রাষ্ট্রের জন্যেই ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাইলেই এই কাজটি সহজেই করতে পারেন। এতে করে তৃণমূল পর্যায়ের প্রথিতযশা সাহিত্যকর্মীদের জীবন-যাপন সহজ হবে এবং সাহিত্য সংগঠনগুলোর কার্যক্রম আরো ব্যাপত হবে। যার ঢেউ পরবর্তীতে জাতীয় সাহিত্যেও ব্যাপকভাবে পড়বে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবনাটি ‘সাহিত্য একাডেমি’ নিয়ে। দেশে বেসরকারিভাবে পরিচালিত মাত্র দুটি ‘সাহিত্য একাডেমি’ রয়েছে। একটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও অপরটি চাঁদপুরে অবস্থিত। এ দুটি সাহিত্য একাডেমিতেই নিয়মিত সাহিত্য আড্ডা হয়। স্থানীয় লেখক সেই আড্ডায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এ দুটি সাহিত্য একাডেমিই বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থা। আছে অবহেলিত অবস্থায়। এ দুটি একাডেমিকে ভেঙে নতুন ভবন করা প্রয়োজন। প্রয়োজন সম্প্রসারণ ও কার্যক্রম বৃদ্ধি। সাথে সাথে ‘সাহিত্য একাডেমি’ প্রতিষ্ঠার ধারণাটি আরো কয়েকটি জেলায় বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। অন্তত, ত্রিশটি জেলায় যদি সাহিত্য একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা যায় তাহলে বাংলাদেশে সাহিত্য চর্চার আরো বেশি প্রসার ঘটবে। বিশ্ব সাহিত্যে বাংলাদেশ নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে।
নিজের লেখা বই একজন সাহিত্যিকের কাছে সন্তানতুল্য বস্তু। তৃতীয় প্রস্তাব সেই বই প্রকাশ নিয়ে। প্রতিবছর একুশে বইমেলায় কবি লেখকদের অসংখ্য গ্রন্থ প্রকাশ হয়ে থাকে। এ কথা সত্য, তরুণদের বই প্রকাশ করতে সবচেয়ে বেশি কণ্টকময় পথে হাঁটতে হয়। অনেকে ভালো লিখলেও তাদেরকে নিজ খরচে প্রথম বইটিকে আলোর মুখ দেখাতে হয়। যদি প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বা অর্থায়নে ঐ জেলার সম্ভাবনাময় তরুণদের মধ্য থেকে প্রতি বছর অন্তত একটি বই প্রকাশের ব্যবস্থা অথবা একটি পাণ্ডুলিপিকে পুরস্কৃত করা হয় তবে তরুণ লেখকগোষ্ঠী বিশেষ উপকৃত হবে। এতে করে প্রতিটি জেলা থেকে ভালো রচনাগুলো প্রকাশের দ্বারও উন্মুক্ত হবে। অথবা যদি বাংলা একাডেমির উদ্যোগে প্রতি বইমেলায় তরুণদের কাছ থেকে পাণ্ডুলিপি আহ্বান করে নির্বাচিত পনের-বিশটি গ্রন্থ প্রকাশ করা যায়, তাহলেও লেখকগোষ্ঠী অসম্ভব উপকৃত হবে।
বর্তমান সরকার সংস্কৃতিবান্ধব সরকার। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর যে শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিপ্রেমীদের প্রতি বিশেষ অনুরাগ রয়েছে তা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উপর্যুক্ত প্রস্তাবনা বিবেচনা করে দেখবেন--এই প্রত্যাশা করছি।
লেখক : গল্পকার ও সম্পাদক, বাঁক।