সংঘর্ষ
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হোক নিরাপদ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ও সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে এলাকাবাসী-ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শনিবার দিনভর যে উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা মোটেই কাম্য নয়।
পুলিশ, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক নেতা লিফা ফার্স্ট ফুড অ্যান্ড কনফেকশনারি ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি করে। পরে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দোকানের ফ্রিজসহ খাবারের কাচের আসবাবপত্র ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে ব্যবসায়ীরা ঢাকা-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে ঘটনার প্রতিবাদ জানায়। পরে পুলিশ দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে তা প্রত্যাহার করে নেয়।
একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানমালিকরা মামলা করেন। মামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। পরে মামলার প্রতিবাদের বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে। তখন এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা এক জোট হলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে এলাকাবাসী-ব্যবসায়ীরা দখল নেয় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড় এলাকা।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে আগুন ধরিয়ে ভিতরের প্রবেশের চেষ্টা করে স্থানীয় উত্তেজিত ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি দোকানেও। পরে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম, দৈনিক যুগান্তরের ফটোসাংবাদিক উদয় বর্মণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, স্থানীয় এলাকাবাসী এবং পথচারীসহত অন্তত ২০ জন আহত হন। এতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
এদিকে বিপাকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বনির্ধারিত ক্লাস-পরীক্ষা থাকা শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে বেশ কিছু বিভাগের নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। অজানা আতঙ্কে কিছু শিক্ষার্থী যাত্রা শুরু করেছে বাড়ির দিকে। বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ব্যক্তি মালিকানার ছাত্রাবাসে অবস্থানরতর ছাত্রছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ের হোটেল ও দোকানপাট বন্ধ থাকায় খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
সংঘর্ষ চলাকালে বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা- কুড়িগ্রাম মহাসড়ক। এতে রাস্তার দুই পাশে শতাধিক যানবাহন আটকে যায়। পুলিশ উভয় পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
হঠাৎ শান্ত ক্যাম্পাস অশান্ত হয়ে উঠায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাজুড়ে। তাই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা একদিকে যেমন দুঃখজনক অন্যদিকে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখা, নিরাপত্তা নিশ্চত করাসহ দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে এ ধরনের ঘটনার আর ঘটবেনা বলে আশা করা যায়। ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনা ঘটার ফলে শিক্ষাঙ্গনের গড়ে উঠা পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে। অপর দিকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে। এতে ব্যাহত হয়েছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার স্বাভাবিক পরিবেশ। এরই মধ্যে স্থানীয় এলাকাবাসী-ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক
শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত করছে।
লেখক : শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর