খাদিজার বেঁচে থাকা সার্থক হোক
নিজ বাড়িতে ফিরল খাদিজা আক্তার নার্গিস। মৃত্যুপথের যাত্রা থেকে আবার জীবনের রাস্তায় ফিরে আসায় তাঁর পরিবারের মুখে এখন হাসি। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের (ডিগ্রি) ছাত্রী খাদিজা পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বদরুল আলমের হামলার শিকার হন গত বছরের ৩ অক্টোবর। অবশেষে জীবনের সংকটের সময় পেছনে ফেলে খাদিজা আজ সুস্থ হয়ে ফিরলেন, যে মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা করছিল সবাই! খাদিজা আজ মৃত্যুঞ্জয়ী নারীর প্রতীক হয়ে আবারও দাঁড়াল ঘাতক বদরুলের সামনে। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিচার চাইলেন। সময়ের ব্যবধানে ঘাতক বদরুলকে তাঁর পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে, এটা এখন অনেকাংশে নিশ্চিত।
ঘটনার পর আদালতপাড়ায় প্রথম মুখোমুখি খাদিজা-বদরুল। এখন আদালতের কাছে খাদিজার দেওয়া বক্তব্য আর বদরুলের জবানবন্দি সবই বিবেচনা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতে বদরুল আদালতে দাঁড়িয়ে নিজের শাস্তি চাইলেন। পাশাপাশি খাদিজার সুখে থাকার অভিব্যক্তি প্রকাশে পরোক্ষ পরাজয়ের ইঙ্গিত দিলেন কি না, সেটা বিবেচনায় আসতে পারে। তবে খাদিজা বেশ শক্তভাবেই আগে কোনো সম্পর্ক কিংবা সখ্যর কথা বিবেচনায় আনতে চাননি। বদরুলের শাস্তির দাবিতে জোরালো অবস্থান সুস্পষ্ট করা ও ঘটনার সরাসরি বর্ণনা দেওয়ায় বিচারকের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। উভয় পক্ষের আইনজীবীরা এ ঘটনার ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ থাকায় আইনি লড়াই জমে উঠেছে। এখন দেখার পালা, সবশেষ সমীকরণটা কী হয়!
নিজ গ্রামে ফেরার পর গ্রামের সবাই খাদিজাকে দেখতে আসছে। সবার আশীর্বাদ পাচ্ছেন খাদিজা। বদরুলের জন্য দুয়োধ্বনি দিচ্ছে সবাই। বন্ধুদের অপেক্ষা, কবে ফিরছে খাদিজা কলেজে? গ্রামের আর সবার মতো খাদিজারও স্বপ্ন প্রতিষ্ঠিত হতে চায়। বড় ব্যাংকার হওয়ার ইচ্ছে তাঁর। সবকিছু ঠিক থাকলে সিলেট শহরতলির আউশা গ্রামের সেই সাদাসিধা মেয়েটা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে, সে আশা সবার। সে আবারও মিলতে চায় বন্ধুদের সঙ্গে, বাঁচতে চায় মাথা উঁচু করে।
মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে প্রথমে খাদিজাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর অচেতন অবস্থাতেই খাদিজাকে ওই দিন দিবাগত রাতে তাঁর স্বজনরা ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সংকটজনক অবস্থাতেই খাদিজার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের ৯৬ ঘণ্টা পর চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, ‘খাদিজার আর জীবন সংশয় নেই।’ সে কথা সত্য হলো আজ। এই প্রচেষ্টার পেছনে যাঁদের অবদান ছিল, খাদিজা ও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। দেশের প্রত্যেক মানুষ যেভাবে সহাভূতি দেখাল, সেটা অভূতপূর্ব। একটা মেয়ের বেঁচে থাকার জন্য এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে। সব মিলিয়ে খাদিজার বেঁচে থাকা সার্থক হোক। সমাজের সব অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলো হয়ে জ্বলে উঠুক খাদিজা। আর বদরুলের মতো ঘাতকরা মাথা নিচু করে সমাজকে কলঙ্কমুক্ত করুক।
লেখক : প্রতিনিধি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।