করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই অস্থির হয়ে খুঁজছেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই, সে সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নানাভাবে তৈরি করছে মানহীন স্যানিটাইজার। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে এবং বিক্রি করছে চড়া দামে। এ জাতীয় পণ্য কতটুকু কার্যকর? হ্যান্ড স্যানিটাইজার বনাম সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, কোনটি বেশি কার্যকর?

করোনা বা কোভিড-১৯-এর মতো সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধের ক্ষেত্রে পুরোনো কালের হ্যান্ড ওয়াশিংয়ের চেয়ে ভালো কিছু হয় না। তবে যদি পানি ও সাবান পাওয়া না যায়, তাহলে আপনার পরবর্তী সেরা বিকল্পটি হতে পারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, এমন ধরনের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে, যাতে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল থাকে। কারণ, এখানে অ্যালকোহলই জীবাণু ধ্বংসের মূল উপাদান। একটি বিষয় সব সময় খেয়াল রাখবেন, ঘরে তৈরি হ্যান্ড স্যানিটাইজার শিশুর ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।

হাতের স্যানিটাইজার কার্যকরভাবে ব্যবহারের জন্য করণীয় :

১. স্যানিটাইজার এক হাতের তালুতে স্প্রে বা প্রয়োগ করুন।

২. আপনার হাত একসঙ্গে ভালো করে ঘষুন। নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার হাতের সমস্ত পৃষ্ঠ ও সমস্ত আঙুলে এটি পৌঁছেছে।

৩. ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ডের জন্য বা আপনার হাত শুকনো না হওয়া পর্যন্ত ঘষতে থাকুন। হাতের বেশিরভাগ জীবাণু মারতে এটি কমপক্ষে ৬০ সেকেন্ড সময় নিতে পারে।

৪. যদি আপনার হাত চিটচিটে বা নোংরা হয়, তবে প্রথমে আপনার হাত সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়া উচিত।

স্যানিটাইজার কোন জীবাণু মারতে পারে

সিডিসির মতে, স্যানিটাইজার (যাতে অ্যালকোহলের পরিমাণ সঠিক রয়েছে) হাতে দ্রুত জীবাণুর সংখ্যা হ্রাস করতে পারে। এটি করোনাভাইরাস, সার্স-কোভি-২ সহ হাতে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টিকারী এজেন্টগুলো ধ্বংস করতে সহায়তা করে। কিন্তু স্যানিটাইজারগুলোরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং সব ধরনের জীবাণু দূর করতে পারে না। এটি অনেক (নরোভাইরাস, ক্রিপ্টোস্পরিডিয়াম, ক্লোস্ট্রিডিয়াম) জীবাণুগুলো ধ্বংসের ক্ষেত্রেও কার্যকর নয়। এ ছাড়া যদি আপনার হাত দৃশ্যমান নোংরা বা চিটচিটে হয়, তবে স্যানিটাইজার ভালো কাজ করতে পারে না। যদি আপনার হাতটি নোংরা থাকে, তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের পরিবর্তে হাত ধোয়ার বিকল্পটি বেছে নিন।

হ্যান্ড ওয়াশিং বনাম হ্যান্ড স্যানিটাইজার, কোনটি করোনা ধ্বংসে বেশি কার্যকর

সাধারণ সর্দি ও নভেল করোনাভাইরাস বা অন্য অসুস্থতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হলে প্রথমে আমাদের জানতে হবে কখন হাত ধোয়া উচিত বা কখন হ্যান্ড স্যানিটাইজার। সিডিসির মতে, সাবান ও পানি দিয়ে আপনার হাত ধোয়া সর্বদা অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। কেবল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন, যদি সাবান ও পানি সহজলভ্য না হয়।

কার্যকর উপায়ে হাত ধোয়ার নির্দেশাবলি

১. সর্বদা পরিষ্কার, চলমান পানি ব্যবহার করুন।

২. প্রথমে আপনার হাতগুলো ভিজিয়ে নিন, তারপর কলটি বন্ধ করুন ও সাবান দিন।

৩. কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য সাবান দিয়ে আপনার হাত একসঙ্গে ঘষুন। আপনার হাতের আঙুলের মাঝে ও নখের নিচে হাতের পেছনে পরিষ্কার করার বিষয়টি নিশ্চিত করুন।

৪. পানি চালু করুন এবং আপনার হাত ধুয়ে ফেলুন।

৫. একটি পরিষ্কার তোয়ালে বা এয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করুন।

হ্যান্ড স্যানিটাইজার হলো সাবান ও পানি পাওয়া যায় না এমন সময় জীবাণুর বিস্তার রোধে সহায়তা করার সহজ উপায়। স্যানিটাইজার আপনাকে সুরক্ষিত রাখতে এবং নভেল করোনাভাইরাসের প্রসার কমাতে সহায়তা করতে পারে। যদিও স্যানিটাইজারগুলো জীবাণু থেকে মুক্তি পাওয়ার কার্যকর উপায় হতে পারে, তবু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ রোগজনিত ভাইরাস এবং অন্যান্য জীবাণু থেকে মুক্ত রাখতে হ্যান্ড ওয়াশিংয়ের পরামর্শ দেন।

লেখক : অধ্যাপক, কীটতত্ত্ববিদ, গবেষক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়