কোভিড-১৯ নিয়ে আলোচিত ১০টি ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ও প্রকৃত সত্য
করোনাভাইরাস সার্স-সিওভি-২ থেকে সৃষ্ট রোগ বা কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব ও দ্রুত বিস্তার মহামারিতে পরিণত হয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। মহামারি বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে নানা রকম ষড়যন্ত্রতত্ত্ব (Conspiracy Theories)। ষড়যন্ত্রতত্ত্ব সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া কোনো ঘটনা ঘটার পেছনে গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত করে। আমরা জানতে চেয়েছি, কোভিড-১৯ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া এবং মূল ধারার সংবাদমাধ্যমে বহুল আলোচিত প্রধান ১০টি ষড়যন্ত্রতত্ত্বের কারণ ও প্রকৃত সত্য।
১. ফাইভজি (5G) মোবাইল নেটওয়ার্ক ভাইরাস ছড়াচ্ছে
ফাইভজি প্রযুক্তির বৈদ্যুতিক চৌম্বকীয় বর্ণালি (electromagnetic spectrum) ব্যবহার করে ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া জৈবিকভাবে অসম্ভব। ফাইভজি হলো ওয়েভ বা ফোটন, অন্যদিকে ভাইরাস প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিডের সমন্বয়ে গঠিত জৈবিক কণা। দুটির যোগসূত্র সম্পূর্ণ অবান্তর। সাধারণত ষড়যন্ত্রতত্ত্বগুলো দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার মাঝে যোগসূত্র দেখাতে চায়, যা বিশ্বাসযোগ্য মনে হতে পারে। ফাইভজি নেটওয়ার্কের দ্রুত বিকাশ এবং সমসাময়িক কোভিড-১৯ বিস্তারকে জড়িয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছিল। অ্যান্টিভ্যাকসিন (টিকাবিরোধী) অ্যাক্টিভিস্ট দ্বারা প্রচারিত এই সংক্রান্ত একটি হাস্যরসাত্মক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ভাইরাল’ হয়। অ্যাক্টিভিস্টরা বহুদিন ধরে বৈদ্যুতিক চৌম্বকীয় বিকিরণ সম্পর্কে ভয় ছড়াচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায় না। উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ এমন অনেক দেশেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে ফাইভজি নেটওয়ার্ক নেই। তবুও এই গুজব দ্বারা প্রাভাবিত হয়ে যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু দেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারে আগুন আগুন দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
২. বিল গেটস দায়ী
ভাইরাসের মিউটেশন বা রূপান্তরের মতো গুজবের নানা রকম শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটতে থাকে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দোষারোপ করছেন এবং তহবিল দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিলেন; বিল গেটস এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলেন। এরপর বিল গেটসকে জড়িয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক গুজব ছড়াতে থাকে এবং তিনি নতুন টার্গেটে পরিণত হন।
নিউইয়র্ক টাইমসের মতে, অ্যান্টিভ্যাকসিন অ্যাক্টিভিস্ট, ফার-রাইট সদস্য এবং কিছু ডানপন্থী বিশেষজ্ঞ গেটসের দেওয়া ২০১৫ সালে টেডটকের একটি ভিডিও নিয়ে কথা তুলেছেন, যেখানে তিনি ইবোলা প্রাদুর্ভাব নিয়ে আলোচনা করেছিলেন এবং একটি নতুন মহামারি সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। তাঁদের দাবি, বিল গেটস কোভিড-১৯ মহামারি সম্পর্কে আগে থেকেই জানতেন বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটি ঘটিয়েছেন।
এই ষড়যন্ত্রতত্ত্বের জনপ্রিয় ধারণাটি হলো, কোভিড-১৯ সারা বিশ্বের জনসংখ্যাকে টিকা দেওয়ার জন্য গেটসের নেতৃত্বাধীন ‘গর্হিত চক্রান্তের’ একটি অংশ। বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে রোগ থেকে বাঁচানো ও মৃত্যুর সংখ্যা এড়ানোর জন্য টিকা কার্যকর উপায় হতে পারে। তবে অ্যান্টিভ্যাকসিন অ্যাক্টিভিস্টদের ধারণা, ভ্যাকসিন বা টিকার কার্যকারিতা নেই; বরং এটি মানুষের জন্য ক্ষতিকর। বৈজ্ঞানিকভাবে এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
৩. চীনের গোপন ল্যাব থেকে ছড়িয়েছে ভাইরাস
বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপিত হলেও এই গুজবটি মিথ্যা। কোভিড-১৯ মহামারির কেন্দ্রস্থল, চীনের উহান শহরের ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটের গবেষকরা দীর্ঘদিন বাদুড়ের করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছেন। বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট ও পূর্বের সার্স (SARS) প্রাদুর্ভাব গবেষণার প্রথম সারির গবেষক শি ঝেঙলি, এই ষড়যন্ত্রতত্ত্বের সম্ভাব্যতা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ছিলেন। এ কারণে তিনি ল্যাব রেকর্ড যাচাই করে দেখেছেন যে কোনো ভুল আদৌ হয়েছিল কিনা। তিনি জেনেটিক সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে নতুন সার্স-কোভ-২ করোনাভাইরাস (SARS-CoV-2 Corona Virus) এবং উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে গবেষণা করা ভাইরাসের সঙ্গে কোনো জেনেটিক মিল নেই।
কোভিডের প্রাদুর্ভাব ও বাদুড়ের করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণারত চীনের শীর্ষস্থানীয় ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটের অবস্থান কাকতালীয়ভাবে একই স্থানে হওয়ায় এই গুজব ছড়াতে দেরি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইংরেজি সংবাদপত্র ‘এপোক টাইমস’ (Epoch Times) এই ধারণাটি নিয়ে প্রচার চালাচ্ছিল। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) দ্বারা নিপীড়িত হওয়া ‘ফালুন গং’ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে এপোক টাইমসের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এপোক টাইমস তার সমস্ত ডকুমেন্টারিতে কোভিডকে সিসিপি ভাইরাস (CCP Virus) বলার জন্য জোর দিয়ে প্রচার চালাচ্ছিল। ওয়াশিংটন পোস্ট, টাইমস (যুক্তরাজ্য) এবং মূলধারার অন্যান্য সংবাদমাধ্যম এই তত্ত্বকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করেছে।
৪. জৈবিক অস্ত্র হিসেবে কোভিড তৈরি হয়েছিল
আরেকটি মুখরোচক গুজব হলো, করোনাভাইরাস ল্যাব থেকে দুর্ঘটনাবশত ছড়ায়নি; বরং ইচ্ছাকৃতভাবে চীনা বিজ্ঞানীরা একটি বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার বা জৈব অস্ত্র হিসেবে এটি তৈরি করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনমত জরিপ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার-এর জরিপ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি দশজনের মধ্যে তিনজন বিশ্বাস করেন, কোভিড-১৯ একটি ল্যাবরেটরিতেই তৈরি করা হয়েছিল। ২৩% বিশ্বাস করেন এটি ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়ানো হয়েছিল এবং ৬% বিশ্বাস করেন এটি ছিল দুর্ঘটনা।
ডানপন্থী মার্কিন রাজনীতিতে বিশেষ জনপ্রিয় এই তত্ত্বটি মনে করে, চীনারা ভাইরাসটি তৈরি করেছিল। মার্কিন সিনেটর টম কটন (রিপাবলিকান, আরকানসাস)-এর বদৌলতে তত্ত্বটি মূলধারার সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি এই তত্ত্বকে ওয়াশিংটন এক্সামিনারে (অত্যন্ত রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যম) প্রথম প্রকাশ করেছিলেন, যেখানে উল্লেখ করেন, উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি ‘বেইজিংয়ের গোপন বায়ো-ওয়ারফেয়ার প্রোগ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে।’
জেনেটিক সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তির কল্যাণে দেখা যায়, সার্স-সিওভি-২ ভাইরাসটি বাদুড় থেকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এসেছে। ফলে এই তত্ত্বটি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এক্সামিন পত্রিকা এরপর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা স্বীকার করে নেয় এবং তাদের প্রকাশিত সংবাদকে ‘সম্ভবত মিথ্যা’ বলে দায় স্বীকার করে এবং পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত খবরের সংশোধনী প্রকাশ করে।
৫. মার্কিন সেনারা চীনে করোনাভাইরাস এনেছে
চীনবিরোধী গুজবের বিপরীতে চীন সরকার নিজস্ব একটি তত্ত্ব বা কন্সপিরেসি থিওরি প্রকাশ করে সাড়া ফেলে দিয়েছিল, যেখানে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেকে দায়ী করা হয়েছিল।
ধারণাটি প্রাথমিকভাবে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝা লিজিয়ান দিয়েছিলেন, যিনি টুইটারে বলেছিলেন, ‘মার্কিন সেনারা এই ভাইরাসটি উহানে এনেছে,এমনটা হওয়া সম্ভব।’ ভয়েস অব আমেরিকার সংবাদ অনুসারে কিছু থিওরি চীনে ব্যাপকভাবে প্রচার পায়। তার একটি হলো, মার্কিন সামরিক কর্মীরা গত অক্টোবরে উহানে অনুষ্ঠিত সামরিক ওয়ার্ল্ড গেমস-২০১৯-এ অংশ নেওয়ার সময় ভাইরাসটি নিয়ে এসেছিল। চীনের একটি বার্তা সংস্থা, আটলান্টিক সংবাদমাধ্যমকে জানায়, এই কন্সপিরেসি থিওরি এবং ‘ইউএসএ ভাইরাস (USA-Virus)’ নামকরণের প্রচেষ্টা ছিল একটি বৈশ্বিক রাজনৈতিক চাল, যা চীনে বা স্থানীয়ভাবে মিথ্যা প্রচারণার জন্য ঠিক ছিল, কিন্তু বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এটি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠেনি।
৬. জিএমও-কে কোনোভাবে দোষ দেওয়া
জেনেটিক্যালি মডিফাইড ফসল কন্সপিরেসি থিওরির শিকার বা বছরের পর বছর ধরে ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের লক্ষ্য হিসেবে কাজ করেছে। তাই জিএমও-কে সম্পৃক্ত করে কোভিড-১৯ মহামারির জন্য দায়ী করা গুজবে অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। মার্চের শুরুর দিকে, ইতালির অ্যাটর্নি ফ্রান্সেস্কো বিলোটা এল ‘ম্যানিফেস্টো’-তে প্রকাশিত প্রবন্ধে উদ্ভট ধারণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, জিএম ফসলের মাধ্যমে জেনেটিক দূষণের ফলে পরিবেশগত ‘ভারসাম্যহীনতার’ কারণেভাইরাস ছড়িয়ে যেতে পারে। আশ্চর্যজনকভাবে জিএমও-বিরোধী কর্মীরা কোভিড-১৯-এর জন্য আধুনিক কৃষিকেও দোষারোপ করার চেষ্টা করেছেন। আমরা ইতোমধ্যে জানি যে ইবোলা, এইচআইভি এবং আরো অনেক ভাইরাসের মতো এই ভাইরাসটিও মানুষের আদিম অভ্যাস; যেমন—বন্যপ্রাণীদের বন্দি এবং হত্যা করার মতো কার্যকলাপ থেকে ছড়ায়।
মজার বিষয় এই যে, ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরির সমাধান হিসেবে জিএমও প্রযুক্তির অবদান অস্বীকার করা যায় না। চলমান ভ্যাকসিন প্রকল্পের মধ্যে কোনো একটি সফল হলে সেটিই হবে কোভিড থেকে বিশ্বকে মুক্তি করার কার্যকর উপায়। উল্লেখ্য, ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরিতে জেনেটিক মডিফিকেশন (জিন প্রকৌশল) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। জিএমও বিশ্বকে কোভিডের অভিশাপ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করলে, সম্ভবত জিএমও-বিরোধীরা তাদের মিথ্যাচার এবং আতঙ্ক ছড়ানো বন্ধ করবে।
৭. কোভিড-১৯ (COVID-19) বলে আসলে কিছু নেই
ডেভিড ইক ও অ্যালেক্স জোন্সের মতো ‘পেশাদার’ ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকদের (Professional Conspiracy Theorist) মতে, কোভিড-১৯ (COVID-19) বলে আসলে কিছু নেই। তাদের দাবি, আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী অভিজাত শ্রেণির একটা চক্রান্ত।
এই তত্ত্বের প্রাথমিক সংস্করণটি বেশ দুর্বল, যেখানে বলা হয়েছে, নভেল করোনাভাইরাসটি ‘সিজনাল ফ্লুর মতো’ এবং পরবর্তীসময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যে লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভকে প্রভাবিত করেছে এই তত্ত্ব। যারা ঘরে না থেকে কোনোরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন, তাদের এলাকায় মহামারিটি বেশি ছড়িয়েছে এবং পরিণতি হয়েছে ভয়াবহ।
৮. মহামারিটি ‘রাষ্ট্রের ভেতর’ থেকে পরিচালিত হচ্ছে
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগে থেকেই এখানে উল্লিখিত অনেক থিওরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। ট্রাম্প এবং তাঁর সহকারীরা বিশ্বাস করেন, আমেরিকার অভিজাত গোষ্ঠী ‘ডিপ এস্টেট’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। এই তত্ত্বে মার্কিন করোনাভাইরাস মহামারির মুখপাত্র ড. অ্যান্টনি ফৌসিকে ‘ডিপ এস্টেট’-এর একজন গোপন সদস্য মনে করা হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন এই গুজবের কথা উল্লেখ করেছিলেন, তখন ফৌসির অবিশ্বাসের চেহারাই এই গুজবকে দূরে সরিয়ে দেয়।
৯. কোভিড-১৯ বড় ওষুধ কোম্পানিগুলোর চক্রান্ত
ষড়যন্ত্রতত্ত্ব বা কন্সপিরেসি থিওরির প্রবর্তকরা চালাকি ও ধাপ্পাবাজি করে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির মতো গুজবকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করছেন। যেমন অ্যালেক্স জোনস তাঁর দর্শককে দামি ‘অলৌকিক বড়ি’ (Miracle Pills) কেনার কথা বলে অনুদান দিতে অনুরোধ করেন। তিনি দাবি করেন, সমস্ত পরিচিত রোগগুলো নিরাময় করতে পারে তাঁর ‘অলৌকিক বড়ি’।
ভুল তথ্য ছড়ানোর কারণে গুগল থেকে নিষিদ্ধ হওয়া ডক্টর মার্কোলা, একজন হাতুড়ে অ্যান্টি-ভ্যাক্স এবং অ্যান্টি-জিএম কর্মী। যিনি দাবি করেছেন, ভিটামিন (এবং তার বিক্রি করা অনেক পণ্য) কোভিড নিরাময় বা প্রতিরোধ করতে পারে।
ন্যাচারাল নিউজ, এমন আরেকটি কন্সপিরেটর সাইট, যা এই ধরনের বড়ি, কবিরাজি ওষুধ বিক্রি করে। এই ষড়যন্ত্রকারীরা বিশ্বাস করে বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত ও প্রচলিত ওষুধ রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে না, বরং আমাদের অসুস্থ করার জন্য বড় ওষুধ সংস্থাগুলোর ষড়যন্ত্রের ফসল হচ্ছে নানা রকম ওষুধ। অ্যান্টিভ্যাকসিন বা টিকাদানবিরোধী কর্মীরা মনে করছে, করোনাভাইরাস বড় ওষুধ কোম্পানিগুলোর চক্রান্ত, যাতে কোম্পানিগুলো ওষুধ বা ভ্যাকসিন বিক্রি করতে পারে।
১০. কোভিডের মৃত্যুর হার বেশি দেখানো হচ্ছে
অন্য একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর হার বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। তাই লকডাউনসহ অন্যান্য নিয়মাবলি বা সামাজিক দূরত্ব পালন করার কোনো দরকার নেই।
এই মিথ্যা কাহিনি প্রচার করেন ড. অ্যানি বুকাসেক, যেখানে তিনি বেলছেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর সার্টিফিকেট নকল বা হেরফের করা হচ্ছে। এ রকম বার্তা নিয়ে তাঁর একটি ইউটিউব ভিডিও এক মিলিয়নবারের বেশি দেখা হয়েছে। বুকাসেক মেডিকেল কর্মকর্তার মতো একটি সাদা ল্যাব কোট এবং গলায় একটি স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন; যাতে তাঁর কথা মানুষ বিশ্বাস করে।
রোলিং স্টোন ম্যাগাজিন অনুসন্ধান করে বের করে, বুকাসেক আসলে কট্টর ডানপন্থী, টিকাদানবিরোধী এবং গর্ভপাতবিরোধী কর্মী। মৃত্যুর হার বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে বলে তিনি যা বলতে চাচ্ছেন, বাস্তবে তার কোনো ভিত্তি নেই। বরং বলা যায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মৃতের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।
ষড়যন্ত্রতত্ত্ব (কন্সপিরেসি থিওরি) এবং গুজব থেকে বাঁচার উপায়
আতঙ্ক না ছড়িয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য জানতে হবে। কোভিড-১৯, জলবায়ু পরিবর্তন, জিএমও বা অন্য যেকোনো বিষয়ে ভুল তথ্য এবং ভুল থিওরি বা গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। জন কুক ও স্টিফান লেভানডভস্কির তাঁদের লেখায় (হ্যান্ডবুক https://bit.ly/2VED4dy) জলবায়ু পরিবর্তন ‘অস্বীকারকারীদের’ ও কন্সপিরেসি থিওরি প্রচারকারীদের মতবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জনসাধারণকে সঠিক ধারণা দিতে ও মানবকল্যাণে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উদ্ভাবনকে হাতের নাগালে নিয়ে আসার লক্ষ্যে ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ (এফএফবি) বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। এফএফবি সব সময় বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকৃত সত্য প্রকাশ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ-এর কমিউনিকেশন অ্যান্ড আউটরিচ বিভাগের কর্মীদের সহায়তায় কর্নেল অ্যালায়েন্স ফর সাইন্স-এর ‘কোভিড : টপ টেন কারেন্ট কন্সপিরেসি থিউরিস’ প্রবন্ধ অবলম্বনে রচিত।
লেখক : জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও যোগাযোগ, ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ