অপরাজেয় অনুসরণীয় শেখ হাসিনা
দক্ষিণ এশিয়ার সীমানা পেরিয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনা এখন বিশ্বরাজনীতিতে একজন প্রশংসনীয় এবং অনুকরণীয় রাষ্ট্রনায়ক। তাঁর অর্জনের খাতা এতই সমৃদ্ধ যে এই ছোট্ট লেখায় সেসব তুলে ধরা বেশ কঠিন। আজ বাংলাদেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন।
জাতির জনক, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের বিখ্যাত টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ফজিলাতুন্নেছার পাঁচ সন্তানের মধ্যে শেখ হাসিনা সবার বড়। তাঁর রাজনৈতিক জীবন চার দশকেরও বেশি সময়ের।
শেখ হাসিনা ১৯৮৬-১৯৯০ ও ১৯৯১-১৯৯৫ পর্যন্ত বিরোধীদলীয় নেতা এবং ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জনগণের বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হন। এরপর ২০১৪ সালে তৃতীয় ও ২০১৯ সালে রেকর্ড চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেন।
কিন্তু দেশরত্ন শেখ হাসিনার সফলতার পথটা মোটেও সহজ ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হলে দুঃস্বপ্নের শুরু হয় তাঁর জীবনে। নারকীয় হত্যাযজ্ঞের সেই রাতে ছোট বোন শেখ রেহানার সঙ্গে প্রবাসে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের অগ্রদূত শেখ হাসিনা।
১৫ আগস্ট কাল রাতের সেই দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে ওঠা মোটেও সহজ ছিল না তাঁর জন্য। তবে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলার মানুষের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন বঙ্গবন্ধু-তনয়া শেখ হাসিনা। সেদিন ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করেও লাখো জনতা তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ওই দিনটাই ছিল টার্নিং পয়েন্ট।
১৯৮১ সালের ঐতিহাসিক ১৭ মে দীর্ঘ নির্বাসিত জীবনশেষে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে লাখো জনতার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলার মানুষের মুক্তিসংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি।’ তিনি তাঁর কথা রেখেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের নেত্রী হয়েছেন, এ দেশের মানুষ বারবার তাঁকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছেন ঠিকই, তবে তিনি ব্যক্তিজীবনে সহজ-সারল্য থেকে একচুলও বিচ্যুত হননি। যে মানুষটা ফজরের নামাজ দিয়ে দিন শুরু করেন, কোরআন পড়েন প্রতিদিন, সুযোগ পেলে রান্না করেন, ছিপ দিয়ে মাছ ধরেন, বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা করেন; আবার মাদুরে বসে সবার সঙ্গে আড্ডা দিতেও কার্পণ্য করেননি কখনো। এ যেন শতভাগ বাঙালিয়ানা, যা আমাদের সবার জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়।
জাতীয় যেকোনো সমস্যা সমাধানই নয়, সাধারণ মানুষের সমস্যার সমাধানও করেন তিনি। তাঁর কাছে সবাই সমান। তার বাস্তব একটি উদাহরণ হলো জামালপুরের তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়, যারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএমএস করে কোরবানির জন্য গরু চেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী তাদের ইচ্ছা পূরণ করেছেন, তাদের জন্য গরু পাঠিয়েছেন।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (অটিস্টিক) শিশু মামিজা রহমান রায়ার স্বপ্ন পূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে চেয়েছিল প্রধানমন্ত্রী যেন তার সঙ্গে একটু কথা বলে। এমন শত উদাহরণ রয়েছে তাঁর।
দেশে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে গত ৩৯ বছরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। একে একে ১৯ বার তাঁকে হত্যার জন্য ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কখনো ঘাতকের বুলেট, কখনো যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহৃত ভয়ংকর গ্রেনেড—সেসব দুঃসহ মুহূর্ত কাটিয়ে তিনি এখন বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার। শুধু উন্নয়নেই নয়, যেকোনো জাতীয় দুর্যোগে তিনি বলিষ্ঠ মনোবল দিয়ে কাজ করেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর চলার পথটা মোটেও সহজ ছিল না। কখনো স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন, কখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন। যার ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। দেশ তখন উন্নয়নের মহাসড়ক দূরে থাক, পাকা সড়কেও যেতে পারেনি। দেশকে উন্নয়নের পথে আনতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে কাজ শুরু করেন তিনি।
২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে গেছেন উন্নয়নের মহাসড়কে। গত ছয় বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বের সেরা পাঁচটি দেশের একটি বাংলাদেশ। বাংলার মানুষের ভাগ্য যাঁর হাত ধরে বদলে গেছে, তাঁকে বিনাশ করবে এ সাধ্য কার? দেশের মানুষের ভালোবাসাকে পুঁজি করে তিনি এখন চারবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ২০১৭ সালে তাঁর অবস্থান ছিল ৩০তম এবং ২০১৮ সালে ২৬তম।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা কতটা সফল, সৎ ও আদর্শিক; সেটা জানতে হলে আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে কয়েকটি সংস্থার স্বীকৃতির কথা জানা দরকার। ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্যারাডাইস পেপারস আর পানামা পেপারসের পর এবার পিপলস অ্যান্ড পলিটিকস বিশ্বের পাঁচজন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে চিহ্নিত করেছেন, যাঁদের দুর্নীতি স্পর্শ করেনি, বিদেশে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই, উল্লেখ করার মতো কোনো সম্পদও নেই। বিশ্বের সবচেয়ে সৎ এই পাঁচজন সরকারপ্রধানের তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে ২০১৮ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা সংস্থা দ্য স্ট্যাটিসটিকস শেখ হাসিনাকে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করে। ২০১৪ সালে ইউনেস্কো তাঁকে ‘শান্তির বৃক্ষ’ ও ২০১৫ সালে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তাঁকে রিজিওনাল লিডারশিপ পুরস্কারে ভূষিত করে। জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচি দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ-২০১৫’ পুরস্কারে ভূষিত করে।
২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের টেলিভিশন চ্যানেল ফোর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খেতাবে ভূষিত করে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বঙ্গবন্ধু-তনয়াকে ‘বিরল মানবতাবাদী নেতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
২০০৯ সালে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য ভূমিকা পালনের জন্য শেখ হাসিনাকে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কারে ভূষিত করে। এ ছাড়া তিনি ব্রিটেনের গ্লোবাল ডাইভারসিটি পুরস্কার এবং দুবার ‘সাউথ সাউথ’ পুরস্কারে ভূষিত হন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে নানা চড়াই-উতরাই আর ঘাত-প্রতিঘাতের সেই বন্ধুর পথ পেরিয়ে এসে শেখ হাসিনা এখন উন্নয়নের রোল মডেল। জয়তু শেখ হাসিনা।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী