ঢাকা সিটি নির্বাচন
শঙ্কা থাকলেও সম্ভাবনা অনেক
ঢাকা সিটি নির্বাচনের তারিখ নিয়ে জটিলতার অবসান হয়েছে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে নানা অভিযোগ-অনুযোগের মধ্য দিয়ে জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা। এ নির্বাচনের দিকে জনসাধারণের বিশেষ নজর রয়েছে। কারণ, নির্বাচনে লড়াইটা মূলত দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির। দেশের প্রধান দুটি দল এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বলে সাধারণ মানুষের বিশেষ দৃষ্টি থাকাটাই স্বাভাবিক। প্রতিদিন সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে এই নির্বাচনকে ঘিরে।
দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আস্থা ফিরবে কি ফিরবে না, এমন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও সংশয় নিয়ে এগিয়ে চলেছে নির্বাচনী আয়োজন। নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে কি না, সরকারের প্রভাব কেমন থাকবে, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে কি না—এমন শঙ্কা থাকাটা অমূলক নয়। আমাদের দেশের পূর্ববর্তী নির্বাচনী ইতিহাস খুব স্বাভাবিকভাবেই এগুলো নিয়ে ভাবিয়ে তোলে। বিভিন্ন কারণেই বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় পূর্ণ আস্থা ফেরানোর চ্যালেঞ্জ রয়েছে নির্বাচন কমিশনের সামনে।
দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, জাতীয় কিংবা স্থানীয়, কোনো নির্বাচনেই বর্তমান নির্বাচন কমিশন জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা কার্যত শূন্যের কোটায় এসে ঠেকেছে। এ নির্বাচনকে কমিশনের ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে আসন্ন ঢাকা সিটি নির্বাচনকে। সাধারণ ভোটারদের ভোটাধিকার যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে কাজ করতে হবে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ইমেজ যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের দায়িত্ব পালনের সময়ে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কোনোটি গ্রহণযোগ্য হয়েছে কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ভোটারদের। অবশ্য ভিন্নমতও রয়েছে।
আসন্ন ঢাকা সিটি নির্বাচন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি উভয়ের জন্যই সম্ভাবনার সুযোগ রয়েছে। হারজিত যার পক্ষেই যাক না কেন, সবাই যেন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুযোগটা পায় এবং সবাই সবার অধিকার বুঝে নেওয়ার পাশাপাশি অন্যের অধিকারটাও যেন পায়, সে ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এমনটা হলেই গণতন্ত্র বিকশিত হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেমন পারস্পরিক আস্থার জায়গাটা তৈরি হবে, তেমনি সাধারণ জনগণেরও আস্থার সুযোগ আসবে।
নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে যেমন সাধারণদের নির্বাচন সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, তেমনি ক্ষমতাসীন দলের সম্পর্কেও রয়েছে। অতীতে যে নেতিবাচক সমালোচনা রয়েছে, তা মুছে ফেলার লক্ষ্যে আসন্ন সিটি নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন পরিবেশের মাধ্যমে দল ও প্রার্থীর জনপ্রিয়তা পরীক্ষা করার এই একটা সুযোগ। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা সিটি করপোরেশনে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা করে তাঁর মতামত দিয়েছেন। সুতরাং আসছে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন একটি গ্রহণযোগ্য মানের হবে, এমন প্রত্যাশা আমাদের সবার।
প্রচলিত নেতিবাচক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও চিন্তা থেকে বের হতে না পারলে কোনোভাবেই নির্বাচনকে সাধারণের আস্থায় আনা যাবে না। এ মুহূর্তে এ কথা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, অবাধ নির্বাচন হলে লড়াই জমবে। কাজেই ঢাকা সিটি নির্বাচনে জমজমাট একটি লড়াই করতে সব প্রতিদ্বন্দ্বী রজনৈতিক দল ও প্রার্থী, সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়