ফ্যাশন ২০১৫
সেরা দেশীয় ফ্যাশন
প্রতিবছরই ফ্যাশনে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে খুব ঘটা করে পোশাকের ফ্যাশনে পরিবর্তন না এলেও এর কাটিং, ডিজাইন আর রঙে ছিল নতুনত্ব। সে সঙ্গে কাপড়েও ছিল বৈচিত্র্য। লং কামিজের চল এবারও ছিল, তবে এর ঘের ছিল ফ্রক স্টাইলে।
লেসের পরিবর্তে মখমলের পাড়ের চাহিদা ছিল বেশি। আর ঢিলেঢালা টপসের চাহিদাও কোনো অংশে কম ছিল না। জাম্পস্যুট, স্লিভলেস পোশাক আর কটির চল ছিল চোখে পড়ার মতো। উৎসব, মৌসুম আর আয়োজনে বছরজুড়ে ছিল অভিজাত ফ্যাশনের চল। চলুন, একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক কোন কোন ফ্যাশনেবল পোশাক এ বছর পছন্দের শীর্ষে ছিল :
কটি কামিজের ফ্যাশন
কামিজের কাট ও নকশার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে এর ডিজাইনেও। লং কামিজের প্যাটার্নে সালোয়ার-কামিজে বৈচিত্র্য এনেছে ‘কটি’। একটু আলাদা ডিজাইন আর কাটছাঁটের ভিন্নতায় এসব কটি কামিজ প্রচলিত ধারায় এনেছে নতুনত্বের ছোঁয়া।
হাল ফ্যাশনের এই যুগে প্রায় সব বয়সেই কটি কামিজ পরা যায়। সুতির পাশাপাশি মসলিন, কোটা, হাফসিল্ক, অ্যান্ডির পোশাকে এ ধরনের কটি এনে দিয়েছে ট্রেন্ডি লুক। এ বছর ফ্যাশনেবল 'কটি' কামিজের চল ছিল চোখে পড়ার মতো।
ছিমছাম জাম্পস্যুট
গরমের শুরুতে পোশাকে স্বস্তি পেতে এ বছর তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে ছিল রংচঙা জাম্পস্যুট, যা পাশ্চাত্যের পোশাক হিসেবেই পরিচিত। আমাদের দেশে এর জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ হলো এটি খুবই আরামদায়ক ও ফ্যাশনেবল। একটা সময় ফ্যাশনে ট্রেন্ড ধরে রেখেছিল ফিটিং পোশাক। পালাজ্জো বা লেগিংসের মতো বেশ কিছু নতুন ট্রেন্ডও যোগ হয়েছে এর সঙ্গে। তবে আবারো ঢিলেঢালা পোশাকের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। তাই এ বছর ফ্যাশন অঙ্গনে জাম্পস্যুটের চাহিদা কোনো অংশে কম ছিল না।
স্লিভলেস পোশাকের চল
স্বাচ্ছন্দ্য আর মানানসই, দুটো জায়গায়ই স্লিভলেস বরাবরই এগিয়ে। তাই তরুণী থেকে শুরু করে একটু বয়স্ক যাঁরা, তাঁদের সবার পছন্দের তালিকায় এ বছর জায়গা করে নিয়েছে স্লিভলেস পোশাক। কারণ ক্যাম্পাস, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা অথবা কোনো পার্টিতে স্লিভলেস যেকোনো পোশাকই মানিয়ে যায় বেশ।
বৈশাখে রঙিন শাড়ি
বৈশাখ মানেই লাল-সাদা পাড়ের শাড়ি অথবা পোশাক—এই চলের একটু হলেও পরিবর্তন এসেছে এ বছর। এবার রংধনুর সব রং-ই জায়গা পেয়েছে বৈশাখী পোশাকে। একরঙা, নয়তো বিভিন্ন রঙের মিশ্রণের চল ছিল এবার। লাল, সাদা, কমলা, হলুদ, সবুজ, বেগুনি, নীল—সব রংই বৈশাখী আমেজে পোশাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ঈদের ফ্যাশনেবল সালোয়ার-কামিজ
লং হোক কিংবা শর্ট, সালোয়ার-কামিজের আবেদন এতটুকু কমেনি এ বছর। যেকোনো উৎসব-পার্বণে নারীদের পছন্দ সালোয়ার-কামিজ। ঝামেলাবিহীন স্বস্তির পোশাক হিসেবে সালোয়ার-কামিজকেই বেছে নেন তাঁরা। তবে বরাবরের মতো এবারও এর কাটিংয়ে ছিল ভিন্নতা এবং প্যাটার্নে নতুনত্ব। এবারের ঈদে নামীদামি বিদেশি ব্র্যান্ডের বাইরে দেশি পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের ঝোঁকটা একটু বেশিই ছিল। এর কারণ ভালো মান আর ডিজাইনে বাহারি ঢং।
বাহারি শাড়িতে ঈদ
এবারের ঈদে শাড়ির ক্ষেত্রে সুতির পাশাপাশি সিল্কের চাহিদাও অনেক বেশি চোখে পড়ছে। সে সঙ্গে কাতানের চল তো রয়েছেই। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একই সুতির শাড়ির কয়েকটি রূপ। এর মধ্যে তাঁতের শাড়ি ও কোটা শাড়ি পছন্দের শীর্ষে ছিল। এর ডিজাইনেও ছিল ভিন্নতা। কোনোটাতে স্ক্রিনপ্রিন্ট করা, কোনোটায় ব্লকের কাজ, আবার কোনো শাড়িতে ছিল নকশিকাঁথার কাজ। বরাবরের মতো এবারও সিল্কের শাড়ির চাহিদা ছিল। কারণ, এ ধরনের শাড়ি সব বয়সী নারীকেই ভালো মানায়। সিল্কের মধ্যেও ছিল বাহারি ধরন—টাঙ্গাইল সিল্ক, হাফ সিল্ক, রাজশাহী সিল্ক, জয়পুরি সিল্ক, মসলিন সিল্ক, কাতান সিল্ক ও অ্যান্ডি সিল্ক। হাতের কাজের পাশাপাশি এতে স্ক্রিনপ্রিন্ট ও এমব্রয়ডারির কাজকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ আবার বাহারি লেসকে বেছে নিয়েছেন।
ছিমছাম পশ্চিমা পোশাক
কাপড় যেমনই হোক না কেন, এর কাটিং আর প্যাটার্নে পশ্চিমা আমেজ ছিল এ বছর। লং প্যাটার্নের পাশাপাশি ছিল শার্ট-প্যান্টের আদলে তৈরি পোশাক। আবার কিছু ছিল গাউন স্টাইলের। বছরজুড়ে এমন ছিমছাম পশ্চিমা পোশাকের চল বেশি ছিল।
বৃষ্টিভেজা সিল্ক শাড়ি
রিমঝিম বৃষ্টির সঙ্গে শাড়ির সখ্য যেন বহুদিনের। তা আবার যেনতেন শাড়ি নয়। তবে বরাবরের মতো এবারো এই জায়গা ধরে রেখেছে বর্ণিল সিল্ক শাড়ি। সিল্ক শাড়ি আবার কয়েক ধাঁচের ছিল। কোনোটা ফ্লোরাল প্রিন্টে, কোনোটা একরঙা, আবার কোনোটা কন্ট্রাস্ট কালারের। যেখানে ছিল নানা রঙের শেড।
পূজায় আভিজাত সাজপোশাকে
পূজা মানেই শাড়ি। আর পূজার শাড়ির সঙ্গে লাল-সাদা রং জড়িয়ে আছে বহুকাল থেকেই। কারুকার্যে যতই ভিন্নতা থাকুক না কেন, রঙের বিষয়ে কোনো আপস ছিল না। তবে এবার পূজার শাড়ির ডিজাইনে নতুনত্ব ছিল চোখে পড়ার মতো। হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি, নকশিকাঁথার কাজ, অ্যাপলিক ও ব্লকের কাজের ছড়াছড়ি ছিল। উজ্জ্বল রং ও কারুকার্যে বৈচিত্র্য পূজার আমেজকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
সোয়েটারের আদলে পঞ্চ
পঞ্চ এমনই এক পোশাক, যা স্টাইলিশ লুক আনার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনও মেটায়। এই শীত-পোশাকটির নাম পঞ্চ হওয়ার কারণ হলো, এটি চাদর ও সোয়েটারের ফিউশনে তৈরি। এর পাঁচ দিকে পাঁচটি কোনা থাকে। তবে এ বছর এটি কিছুটা সোয়েটারের আদলে করা হয়েছে; কিন্তু ঢিলেঢালা ভাবটা ঠিক আগের মতোই রয়েছে। ‘পঞ্চ’ আমাদের দেশে বহুকাল আগে থেকেই ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বলতে গেলে ফ্যাশনের সঙ্গে এর তেমন একটা সম্পর্ক ছিল না। তবে এবার তরুণ প্রজন্ম ‘পঞ্চ’ নামক এ শীতবস্ত্র স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করেছে। এর কারণ হলো, এটি বেশ স্টাইলিশ এবং সহজেই বহন করা যায়।
শীতে রংচঙা লং গাউন
গাউনের চল গেল কয়েক বছর ধরেই বেশ চলছে। আগে শুধুই পার্টিতে গাউন পরা হতো। তবে এ বছর তরুণীরা সব ক্ষেত্রেই লং গাউন বেছে নিয়েছেন। কারণ, স্বাচ্ছন্দ্য আর স্টাইল দুটোই খুঁজে পাওয়া যায় লং গাউনে। পার্টিওয়্যার বা ক্যাজুয়াল—সব লুকেই এই পোশাক বেশ মানানসই।
আরামদায়ক ঢিলেঢালা টপস
লম্বায় ছোট আর পাশে চওড়া হওয়ার কারণে এই টপস দেখতে বেশ স্টাইলিশ লাগে। এ কারণে গোল গলা বা হাইনেকে এ বছর দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে ঢিলেঢালা টপস। আর হাতাও বেশ চওড়া করে বানানো হয়েছে। তরুণীরা এসব টপস লুফে নিয়েছেন।
পোশাকে লাল-সবুজের ছোঁয়া
বিজয় মানেই আনন্দ। বিজয় মানেই উৎসব। আর এই খুশির ধারায় এ বছরের পোশাকেও ছিল বিজয়ের ছাপ, জাতীয় পতাকার রং লাল-সবুজের ছোঁয়া। তবে এই বিশেষ দিনে সুতি কাপড়কেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
ফ্যাশনে ‘একের ভেতর দুই’
শীতের হিম বাতাসে একটু উষ্ণতা জোগাতে চাই গরম কাপড়। তবে স্টাইলের কথা ভুলে গেলে চলবে না। তাই এ বছর তরুণীরা বেছে নিয়েছেন ছিমছাম ‘একের ভেতর দুই’। এই পোশাক অবশ্য ‘টু ইন ওয়ান’ নামেই পরিচিত, যা শীত নিবারণের পাশাপাশি ট্রেন্ডি লুকও ধরে রেখেছে। টু ইন ওয়ান পোশাক মূলত টপস ও এর ওপর ঢিলেঢালা পাতলা কার্ডিগান স্টাইলের সোয়েটারকে বোঝায়। যার থাকবে না ব্লেজারের মতো কোনো বোতাম বা সোয়েটারের মতো জিপার। কোনোটা খুব লম্বা আবার কোনোটা সাইজে ছোট। তবে কাটিং ও প্যাটার্ন একই রকম।