বারোকের অনুপ্রেরণা লা রিভে
‘বারোক’ শব্দটি আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই সতেরো শতকে, বারোক চিত্রকলার স্বর্ণযুগে। ফ্রান্স, রোম, ইতালি তথা ইউরোপজুড়ে তখন শুরু হয়েছে বারোক চিত্রের জয়জয়কার। বারোক বলতে শিল্পকলার এমন একটি কৌশলকে বোঝায়, যা চিত্রে গতি ও ভাব প্রকাশের অতিরঞ্জন, আলোছায়ার খেলা এবং ছোট ছোট কাজের সুস্পষ্ট বিবরণের মাধ্যমে শিল্পে নাটকীয়তা, উত্তেজনা, আবেগের গভীরতা কিংবা মহিমান্বিত কোনো অনুভূতিকে ফুটিয়ে তুলত। ওই সময়টায় চিত্রকলা, স্থাপত্যশিল্প, সাহিত্য, ভাস্কর্য, নৃত্য, এমনকি সংগীতেও বারোকের প্রবল প্রভাব তৈরি হয়েছিল। ফ্যাশনে বারোকের প্রভাব পড়েছিল ১৬২০-এর দিকে। বারোক ফ্যাশনের অনুপ্রেরণা ছিল এর অভিজাত নকশা, উজ্জ্বল কালো, সোনালি ও সাদা রঙের ব্যবহার এবং অভিজাত আবরণ।
সে সময়ের রাজা-রাজড়া এবং গণ্যমান্যরা বারোককে বেছে নিয়েছিলেন নিজেদের আভিজাত্য প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো বারোক আর্ট থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে সবার জন্য পোশাক ডিজাইন করতে শুরু করেন। তারা বারোকে ব্যবহৃত গসপেলের চরিত্রগুলোকে বদলে চেইন, দড়ি, ট্যাসেল, চামড়ার কড়ার মোটিফ ব্যবহার করতে থাকেন, আর চিরাচরিত বারোক রংগুলোর সঙ্গে যোগ হতে থাকে নানান রকম শেড। জিয়ান্নি ভারসাচি বারোকের আদলে লেপার্ড প্রিন্টের সঙ্গে দেবী মেডুসার মাথা ব্যবহার করে দেখিয়েছিলেন বারোক প্রিন্টের ভিন্ন মাত্রার ব্যবহার। অন্যদিকে শ্যানেল তার লোগোর চারপাশে বারোক ধাঁচের সোনালিরঙা মোটা চেইনের মোটিফ বসিয়ে তৈরি করেছিল অসাধারণ কিছু পরিচ্ছদ। কিছু কিছু ব্র্যান্ড বারোকের ভাব আনতে নিয়ন রং ব্যবহার করতে থাকে। বর্তমানে বারোক বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত সবচেয়ে প্রচলিত প্রিন্টগুলোর একটি। অতিরঞ্জিত রং আর মোটিফের মাঝেই একটি অভিজাত ধাঁচ তৈরি করতে বারোকের আবেদন সবচেয়ে শক্তিশালী বলে মানা হয়। ফল ফ্যাশন এবং হাই ট্রেন্ড ফলো করা মানুষের মধ্যে বারোক একটি অবিচ্ছেদ্য নাম হয়ে উঠেছে এখন। এই বছরের ফল ফ্যাশনের মূল বৈশিষ্ট্য ঔজ্জ্বল্য এবং নজরকাড়া স্টাইলিং, যার অতুলনীয় মাধ্যম মানা হয় বারোককে। হাল আমলের জনপ্রিয় স্ট্রিট ফ্যাশন অবশ্য সব সময়ই নিজেদের সম্ভ্রান্ত স্টাইল ফোটাতে বারোকের শক্তিশালী আবেদন ব্যবহার করে আসছে।
অতুলনীয় এই প্রিন্টটির প্রভাব পড়েছে লা রিভেও। ব্র্যান্ডটি তার ফল ’১৯ কালেকশন মূল আকর্ষণ হিসেবে রেখেছে বারোক প্রিন্টের অনুপ্রেরণায় তৈরি পোশাক। নারী ও পুরুষের জন্য তৈরি এই সংগ্রহে জোর দেওয়া হয়েছে অভিজাত প্রিন্ট আর রুচিশীল ডিজাইনকে।
লা রিভের প্রধান নির্বাহী মন্নুজান নার্গিস বলেন, ‘শিল্প এবং ফ্যাশনের সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং হাল আমলের প্রচলিত স্টাইল, এ দুই উপাদান লা রিভকে সব সময়ই অনুপ্রাণিত করে। তারই ধারাবাহিকতায় এই বছর লা রিভ বারোক ফ্যাশনের অনুপ্রেরণার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে তার ফল কালেকশনে।’
চিরায়ত এবং চলতি, দুই ধরনের বারোক প্রিন্টের মোটিফ ফোটানো হয়েছে লা রিভের ফল ’১৯ বারোক প্রিন্ট কালেকশনে। লতা এবং ফুল, ভারি চেইন, ফুলের মতো সাজানো দড়ি, হাল আর নোঙর, বর্ণিল ট্যাসেল, কমলায় ফোটানো স্ট্র্যাপ, গয়না এবং শেকলের যুগলবন্দি এমন নানা ধরনের বৈচিত্র্যময় মোটিফে সাজানো হয়েছে পোশাকগুলো। রং হিসেবে কালো, সাদা, সোনালি ছাড়াও বারোকের স্টাইলে সবুজ, নীল, বাদামি এবং গাঢ় লাল রং ব্যবহার করা হয়েছে। মেয়েদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে টিউনিক, শার্টড্রেস, সিঙ্গেল কামিজ, সিঙ্গেল শার্ট এবং টপস, যাতে বারোকের আধুনিক রং ও নকশাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
‘অন্যদিকে ছেলেদের সংগ্রহে রাখা হয়েছে ক্যাজুয়াল শার্ট, পোলো, টি-শার্ট যাতে আধুনিক এবং ক্লাসিক, দুই ধরনের বারোক ডিজাইনই ব্যবহার করা হয়েছে। লা রিভ এই প্রথম বারোক প্রিন্টের এত বড় একটি শারদীয় সংগ্রহ তৈরি করল বাংলাদেশের জন্য। পাশাপাশি সবার উপযোগী ডিজাইনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রানওয়ের সর্বশেষ স্টাইলগুলোকেও সংযোজন করেছি আমরা,’ মন্নুজান নার্গিস স্মিত হেসে যোগ করেন।
লা রিভ বারোক প্রিন্টের এই আকর্ষণীয় সংগ্রহ পাবেন উত্তরা, বনশ্রী, ধানমণ্ডি, মিরপুর-১ ও ১২, ওয়ারী ১ ও ২, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি রোড, পুলিশ প্লাজা কনকর্ড, বাসাবো এবং মোহাম্মদপুরের লা রিভ শোরুমে। এ ছাড়া খুলনা, নারায়ণগঞ্জ ও সিলেটে লা রিভের শোরুম আছে। বিস্তারিত জানতে এবং ঘরে বসে কিনতে লগ ইন করুন