অফিসে কান্নাকাটি কি ঠিক? কী বলেন বিশেষজ্ঞরা
অফিসে কাজের চাপ, বসের খারাপ ব্যবহার বা সহকর্মীর বাজে আচরণ ইত্যাদি ব্যবস্থাপনা করতে না পেরে অনেকেই অফিসে কান্নাকাটি করেন। দুর্ভাগ্যবশত, এই সময় ব্যক্তির ধারণশক্তি নিয়ে সহকর্মী বা বসের মনে প্রশ্ন উঠে। একে দুর্বলতা ও পেশাদারত্বের অভাব হিসেবে চিন্তা করা হয়।
অফিসে কান্নাকাটি কি ঠিক, না কি এটি মানুষের একটি স্বভাবজাত প্রক্রিয়া- এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ক্যারিয়ার বিষয়ক ওয়েবসাইট মনস্টার।
গবেষণায় দেখা যায়, কানাডার ১০ জন ব্যক্তির মধ্যে চারজন অফিসে কাঁদেন। ডাচ একটি গবেষণায় বলা হয়, অফিসে যারা কাঁদেন তাদের আবেগপ্রবণ, কম যোগ্য হিসেবে চিন্তা করা হয়। এই বিষয়টি কখনো কখনো প্রমোশনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তবে সত্যটি হলো, মানুষ রোবট নয়। তাঁদের আবেগ থাকবে। আসলে আমরা যা করি তার সবকিছুর মধ্যে আবেগ জড়িত থাকে। অফিসে কান্নার বিষয়টি নিয়ে কান্না বিশেষজ্ঞ অ্যান ক্রিমিয়ার বলেন, ‘প্রায়ই লোকেরা অফিসে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। এই আবেগ কান্না হিসেবে প্রকাশ পায়।’
‘অফিসে কেউ কাঁদতে চান না, তবে অনেক সময় এটি হয়ে যায়। এতে লজ্জিত হবেন না এবং অবস্থানটি থেকে পালাবেন না’, বলেন তিনি।
কান্না বিশেষজ্ঞ অ্যান ক্রিমিয়ার আরো বলেন, ‘একটি টিস্যু নিন। চোখ মুছে ফেলুন। এই ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিগত অভিমত দেবেন না। একে একটি মানবিক মুর্হূত হিসেবে চিন্তা করুন। এটি কোনো অভ্যাস নয়।’
অনেক ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তিকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে ফেলার জন্য অফিস নিঁখুত ঝড় তৈরি করতে পারে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাত থেকে আট ঘণ্টার ভেতর,সময় ও সম্পদের সংক্ষিপ্ততার ভেতর, কাজের গুণগত মান ভালো করার জন্য একটি প্রক্রিয়া চলতে থাকে অফিসে। কখনো কখনো মানুষ সেই উচ্চাশা পূরণ করতে পারে না। তখন হয়তো চোখ দিয়ে পানি ঝড়ে।
বিশেষজ্ঞ অ্যান ক্রিমিয়ার বলেন, ‘একটু আলোটা নেভান। ভাবুন কী হচ্ছে? কী কারণে নিজেকে মূল্যহীন লাগছে? মূল সমস্যাটি খুঁজে বের করুন।’
আসলে সত্যি কী, মানুষের শেখা উচিত সব পরিস্থিতিতে কীভাবে নিজেকে নিরব বা শান্ত রাখা যায় জানিয়ে অ্যান ক্রিমিয়ার বলেন, ‘সবার উচিত নিজেদের প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা। তবে এই নেতিবাচক আবেগগুলো দূর করতে মানসিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।’
অফিসে লোকেদের কান্নার বিষয়ে এক হাজার লোক নিয়ে একটি গবেষণা করেন অ্যান ক্রিমিয়ার। গবেষণায় বলা হয়, কর্মক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারী বেশি কাঁদেন। প্রাথমিকভাবে নারীদের এই কান্নার কারণ হিসেবে দেখা গেছে, হতাশা ও রাগ। এগুলো প্রকাশ করতে না পেরে বা অবদমন করার কারণে তাঁরা কাঁদতে থাকেন। রাগের জন্য দায়ী হরমোন তখন কান্নার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। আর এটি থামানো মুশকিল।
তবে এমন ক্ষেত্রে কী করণীয় সে পথ বাতলে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের পরামর্শ :
- অফিসে কান্না আসার মতো পরিস্থিতি হলে উঠে দাঁড়ান এবং পানি পান করুন।
- উজ্জীবিত হতে রেস্ট রুমে যান বা বাইরে চলে যান অথবা কোনো কিছু কম্পোজ করতে শুরু করুন।
- অতিরিক্ত কাজের চাপ নেবেন না। যতটুকু আপনার পক্ষে সম্ভব ততটুকুই করুন।
- কোন বিষয়গুলো বা কোন ধরনের কথাগুলো আপনাকে আহত করে, সেগুলো আপনি জানেন। তাই, না কেঁদে প্রস্তুত হোন কীভাবে কৌশলে এগুলো ব্যবস্থাপনা করবেন এই বিষয়ে।
- ছুটির দিনগুলোতে নিজের পছন্দের কাজ করুন। এটি আপনাকে আনন্দ দেবে। অফিস নিয়ে সারাক্ষণ ভাববেন না।
কোনো সহকর্মী এভাবে কাঁদলে কী করবেন
- তাঁকে সমবেদনা দেখান।
- আপনার প্রতিক্রিয়া সহজ রাখুন।
- সে কেন কাঁদছে বা কী হয়েছে, এসব বিষয় নিয়ে তখনই প্রশ্ন করতে যাবেন না। তাঁকে একটু সময় দিন। কিছুক্ষণ পর বা পরের দিন এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে কথা বলুন।
- সমস্যা বা বিষয়টি নিয়ে তাঁকে দোষী বা দায়ী করে কথা না বলে ইতিবাচকভাবে কথা বলুন।
- অবস্থাটিকে বিচার করতে শুরু করে দেবেন না। পরবর্তী সময় এগুলো নিয়ে সমালোচনা থেকেও বিরত থাকুন।