ঝগড়া মা-বাবার, কী ক্ষতি হচ্ছে সন্তানের?
প্রত্যেক সম্পর্কেই টুকটাক মনোমালিন্য, ঝগড়া থাকেই। এটা সাধারণ ব্যাপার হলেও সন্তানের সামনে নিত্যদিন কথা কাটাকাটি, চিৎকার-চেঁচামেচি চলতে থাকলে সন্তানের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অনেক সময় তাদের আবেগ, মানসিক ও শারীরিক বিকাশেও তা বড়সড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রায়ই ঝগড়াঝাটি সন্তানের মন অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতায় জর্জরিত করে।
তো, নিজেদের মধ্যকার বিবাদ আপনার আদরের সন্তানকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করছে না তো? এক গবেষণা বলছে, শুধু বড়দের নয়, ঘুমন্ত শিশুর ওপরও মা-বাবার ঝগড়ার মারাত্মক প্রভাব পড়ে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্স ও আরলি ইন্টারভেনশন ফাউন্ডেশন যৌথভাবে একটি গবেষণা চালায়। গবেষণা বলছে, মা-বাবার প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব দীর্ঘমেয়াদে সন্তানের মানসিক বৈকল্য সৃষ্টি করে, এমনকি তা জীবনঝুঁকিতেও ফেলে দেয়।
মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বাধা
মা-বাবার মধ্যে কলহ ও তাদের বিচ্ছেদের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সন্তানরা। মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এদের মধ্যে ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। শুধু তাই নয়, সমাজবিরোধী ও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের দিকেও ঝুঁকে পড়তে পারে এসব সন্তান। মা-বাবার ঝগড়া সন্তানকে আগ্রাসী করে তোলে।
নিরাপত্তাহীনতা
ঝগড়াতে একে-অপরের ওপর দোষারোপ চলতেই থাকে। এ আচরণ সন্তানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তারা বিরক্ত হয়। নিজেকে উপেক্ষিত মনে করে। এর ফলে সন্তানের মনে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়।
কার কাছে যাবে?
মায়ের কাছে না বাবার কাছে?—ঝগড়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, যখন সন্তানরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। মা-বাবা দুজনই সন্তানের আশ্রয়। কিন্তু তখন সন্তান আশ্রয়হীনতা অনুভব করে। ওই সময় তীব্র মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। তারা বুঝে উঠতে পারে না, দোষ কার। কার কাছে যাবে, এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে।
ভবিষ্যৎ কেমন?
সন্তানরা প্রাথমিক আদবকেতা শেখে তাদের পরিবার থেকে। আর যখন পরিবারটি ভেঙে যায়, তখন তাদের ভবিষ্যৎ হয়ে দাঁড়ায় অনিশ্চিত। মা-বাবার দ্বন্দ্বের কারণে সন্তানরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে ভয় পায়। বিয়ে, বাচ্চা, এমনকী তাদের একটি পরিবার হবে- এমনটাও ভাবতে পারে না।
পরামর্শে সন্তানদের না নেওয়া
মা-বাবা যখন কোনো কাউন্সিলর বা পরামর্শক অথবা আত্মীয়র কাছেও যান, তখন বাচ্চাদের সঙ্গে নেওয়া ঠিক নয়। কেননা এমন পরিবেশ-পরিস্থিতিতে সন্তানের মনে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
পরিস্থিতি সামলানো
সম্পর্কে টানাপড়েন থাকবে, এটা স্বাভাবিক। তবে একে সুন্দর করে সামলাতে জানা বেশি জরুরি। মা-বাবার একে-অপরের ব্যবহার দেখে সন্তানরা আচরণ শেখে। তাই তাদের সামনে পরিমার্জিত আচরণ প্রয়োজন। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস।