১২০ টাকায় নারিন্দার ঝুনুর পোলাও
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী আইটেমগুলোর মধ্যে মোরগ পোলাওয়ের ইতিহাসটা বেশ প্রাচীন। ঝরঝরে সাদা পোলাওয়ের সঙ্গে মাখা মাখা ঝোলসহ মুরগির রোস্ট যেন অপার্থিব মনে হয়। পুরান ঢাকার মোরগ পোলাওয়ের মধ্যে ঝুনুর মোরগ পোলাও বেশ বিখ্যাত। হালকা বাদামি রঙের ঝরঝরে পোলাওয়ের সঙ্গে এক বিশেষ কায়দায়, মাটির চুলায় রান্না করা দেশি মুরগি মাংসের স্বাদ নিতে অনেক দূর-দূরান্ত থেকেই মানুষ এসে ভিড় করে এখানে।
অরিজিনাল চিনিগুঁড়া চালের পোলাও, দেশি মোরগের সিদ্ধ মাংস, দেশি মুরগির ডিম, গিলা-কলিজার কোরমা আর পেঁয়াজ-শসার মিক্সড সালাদ দিয়ে পরিবেশন করা হয় এই পোলাও। আপনি চাইলে নিতে পারেন কোল্ড ড্রিংকস এবং শেষে কাশ্মীরি ফিরনি। ১১ নারিন্দা রোডের এই দোকানে সাইনবোর্ডে ‘ঝুনু পোলাও ঘর’ লেখা থাকলেও লোকে একে চেনে ‘ঝুনু বিরিয়ানি’ নামেই। পোলাও রান্না সয়াবিন তেল দিয়ে হলেও পোলাওয়ে তেলের পরিমাণ খুবই কম। প্রতিদিন প্রায় ৪০ কেজি চালের পোলাও রান্না করা হয়। খুবই অল্প জায়গায় এই দোকান। একসঙ্গে ২০-২২ জন লোক বসে খেতে পারে। কেউ চাইলে পারসেল নিয়ে যেতে পারবেন।
কথা বলে জানা যায়, ১৯৭০ সালে এই দোকানে মোরগ পোলাও বিক্রি করতে শুরু করেন নূর মোহাম্মদ। তাঁর চার মেয়ে। তৃতীয় মেয়ে ঝুনুর নামেই দোকানের নাম রাখেন। ১৯৮৮ সালে নূর মোহাম্মদ মারা গেলে তাঁর ভাই ইসার উদ্দিন দোকানটির হাল ধরেন। তিনিও এখন আর নেই। ইসার উদ্দিনের ছেলে মো. স্বপন এখন দোকানটি পরিচালনা করছেন। ঝুনুর পোলাও সারা দিন বিক্রি হয় না। মো. স্বপন আরো জানান, দুপুরের পর থেকে বিক্রি চালু করা হয়। বেচাবিক্রি চলে রাত পর্যন্ত।
যেভাবে যাবেন?
নারিন্দা পুলিশ ফাঁড়ির পশ্চিম পাশে ঝুনুর পোলাও ঘরের অবস্থান। সাইনবোর্ডে যাই লেখা থাকুক না কেন, ভোজনরসিকদের কাছে এটি ঝুনুর বিরিয়ানি নামেই পরিচিত। এখানে আসতে চাইলে কয়েকটা উপায়ে আসা যায়। আপনি মতিঝিলের শাপলা চত্বরের পরে ইত্তেফাক মোড় দিয়ে যদি আসেন, তবে সালাউদ্দিন হসপিটালের (রাজধানী মার্কেট) সামনে দিয়ে যে রাস্তাটা সোজা চলে গেছে নারিন্দার দিকে, সেখানেই অবস্থিত এই ঝুনুর পোলাও। যাকে বলে নারিন্দা পুলিশ ফাঁড়ি মোড়। আবার পুরান ঢাকার ওয়ারী পার হয়ে সামনে এগিয়ে গেলেই খ্রিস্টান কবরস্থান। কবরস্থানকে বাঁয়ে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেই নারিন্দা মোড়। অথবা ওয়ারী বলধা গার্ডেন আর কাছে গিয়ে যেকোনো রিকশাওয়ালাকে বললে তাঁরা আপনাকে ঠিক জায়গায় নিয়ে যাবে। যাঁরা এভাবে চেনেন না, তাঁরা শাহবাগ, হাইকোর্ট মোড় বা গুলিস্তান থেকে রিকশা নিয়ে যেতে পারেন। ভাড়া পড়বে ৭০-৮০ টাকা।
কত দাম?
এখানে দুভাবে বিক্রি হয়—সিঙ্গেল ও হাফ। সিঙ্গেল প্রতি প্লেট মোরগ পোলাও ১২০ টাকা আর হাফ ১৫৫ টাকা। পার্থক্য হলো সিঙ্গেল প্লেটে এক পিস মাংস আর হাফে দুই পিস মাংস থাকে। বাকি সব সমান। ফিরনি প্রতি কাপ ২৫ টাকা। আপনি যদি ভোজনরসিক হন, তাহলে আপনি দুই প্লেট মোরগ পোলাও অনায়াসে খেয়ে ফেলতে পারবেন।
কম তেলে যে এত স্বাদের পোলাও রান্না হয়, তা ঝুনুর মোরগ পোলাও না দেখলে বিশ্বাস হবে না। ওদের কাশ্মীরি ফিরনিটা এতই মুখরোচক যে মনে হয়, আসলেই কাশ্মীর থেকে আনা ফিরনি। কোনো এক ছুটির দিন আপনিও খেয়ে আসতে পারেন ঝুনুর মোরগ পোলাও। তবে অবশ্যই দুপুরের পরে, অর্থাৎ বিকেলের দিকে যাবেন।