নবাবি খাবার সুতি কাবাব
কাবাব আর নবাব—দুটি শব্দের মধ্যে যেমন রয়েছে অন্তমিল, তেমনি এদের মধ্যে সম্পর্কটাও অনেক দিনের। মোগল রসুইখানার এই মনোমুগ্ধকর খাবারটি নবাবদের হাত ধরেই বেশি পরিচিতি লাভ করেছে। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে চকবাজারের কাবাবের দোকানগুলো। হরেক রকম আইটেমের মধ্যে অন্যতম হলো এই কাবাব। আর কাবাবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জায়গা দখল করে আছে যে কাবাবটি, সেটি হলো সুতি কাবাব। চকবাজারের ইফতারের অন্যতম আকর্ষণ এই সুতি কাবাব। মাংসের পাতলা ফালি আর কিমার সঙ্গে নানা রকমের মসলা, বাদাম বাটা সব মাখিয়ে সুতা দিয়ে পেঁচিয়ে এই কাবার তৈরি করা হয়।
উৎপত্তি
এই কাবাবটির উৎপত্তি পাওয়া যায় সেই নবাবি আমলে। চকবাজার ঘুরে জানা যায়, জুম্মন রুটিওয়ালা নামের এক ব্যক্তি এই কাবাবের আবিষ্কর্তা। তিনিই প্রথম এটি তৈরি করেন। এখন চকবাজারে তাঁর নাতি বাবুল মিয়া এটি বিক্রি করছেন। বর্তমানে আরো কয়েকটি দোকান গড়ে উঠলেও বাবুল মিয়ার কাবাবই বেশি সমাদৃত। তাঁর বাবা আবদুস সোবাহানের পর তিনিই এখন বিক্রি করছেন। তিনি চল্লিশ বছর ধরে বিক্রি করছেন এই কাবাব। পেশায় তিনি কাপড় ব্যবসায়ী, কিন্তু শুধু এই রোজার মাসে তিনি এটি বিক্রি করেন। তিনি বলেন, বাপদাদার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্যই তিনি কাবাব বিক্রি করেন এবং যত দিন বেঁচে থাকবেন, করবেন। এই কাবাবটির আদি নাম বাসনা কাবাব। অনেকে কোপ্তাও বলে থাকেন। পসরার সামনে লম্বা দুই শিকে কালচে বাদামি রঙের বেশ মোটা ঝলসানো মাংস এবং মসলার সুগন্ধে সামনে থাকলে জিভে পানি আসে। একেকটি শিকের ওজন প্রায় ১০-১২ কেজি হয়ে থাকে। মসলা মাখানো মাংস ছোট টুকরা করে একটি বিশেষ কায়দায় সুতা দিয়ে পেঁচিয়ে মোটা শিকে গেঁথে রাখা হয়। এ জন্য এটাকে সুতি কাবাব বলা হয়।
কী কী আছে এবং কীভাবে তৈরি করা হয় :
সুতি কাবাবের প্রধান উপকরণ মাংস আর বুটের ডাল। দোকানি বাবুল মিয়া জানান, কাবাব বানাতে হলে লাগবে মাংস। সেটা গরু হোক কিংবা খাসি। লাগবে বিভিন্ন প্রকারের মসলা।। সম্পূর্ণ রেসিপি না পাওয়া গেলেও জানা যায় এটি বানাতে দরকার হয় মাংসের কিমা, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, বেসন, ধনেপাতা, টেস্টিং সল্ট, আদা, ডিম, রসুন, লবণ, লাল মরিচের গুঁড়া, কাবাব মসলা, সাদা সরিষা, বাদাম বাটা, পোস্তদানা, পেঁপে বাটা, তেল, চর্বিছাড়া মাংস ও আরো কয়েক ধরনের মসলা। মুড়ি মাখার সঙ্গে মেখে কিংবা পরোটা দিয়ে খেলে সুতি কাবাবের আসল স্বাদ মিলবে। শুধু সুতি কাবাব খেয়ে এর স্বাদ পাওয়া যাবে না।
কীভাবে পাবেন, কত দাম
ঢাকার বৃহৎ ইফতার বাজার বসে চকবাজার শাহি মসজিদের সামনের রাস্তায়। ঢাকা উত্তরের যেকোনো জায়গা থেকে প্রথমে বকশীবাজার মোড়ে আসুন। ওখান থেকে রিকশা ভাড়া ২৫ টাকা। যেকোনো রিকশা আপনাকে নিয়ে যাবে। আর ঢাকা দক্ষিণ থেকে আপনি রিকশা বা লেগুনা বা দূরত্বের ওপর নির্ভর করে হেঁটেও যেতে পারবেন।
বর্তমান দাম অনুযায়ী প্রতি কেজি ‘সুতি কাবাব’-এর জন্য আপনাকে গুনতে হবে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা।
যাঁরা বাসায় বানাতে চান
আগেই বলে নিচ্ছি, চকবাজারের স্বাদের সঙ্গে বাসার স্বাদের তুলনা হয় না। তার পরও অনেকে আছেন, যাঁরা বাইরের খাবার খেতে পছন্দ করেন না। তাঁরা চাইলে নিচের প্রক্রিয়ায় বাসায় তৈরি করতে পারেন।
প্রস্তুত প্রণালি
প্রথমে সব ধরনের মসলা ভালো করে মাখিয়ে এক ঘন্টা রেখে দিতে হবে। চর্বি ছাড়া মাংস পাতলা টুকরা করে সামান্য থেঁতলে নিতে হবে। এক চা চামচ কাবাব মসলা, এক চা চামচ লবণ ও এক চা চামচ টেস্টিং সল্ট একসঙ্গে মিশিয়ে ওই থেঁতলানো মাংসের ওপর দিতে হবে। এবার প্রথমে মাংসের টুকরা দিতে হবে। তারপর মাখানো কিমা দিতে হবে। আবার টুকরা, তারপর কিমা দিতে হবে। সবার ওপরে মাংসের টুকরা দিয়ে হাতে নিয়ে গোল করে নিতে হবে। তারপর মাংসের গোলাটি সুতা দিয়ে পেঁচিয়ে নিতে হবে। এরপর ওভেনের ট্রে ও কিমার ওপর হালকা তেল মাখিয়ে নিয়ে ওভেনের ট্রেতে কিমাটি রেখে দিতে হবে। ২৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ৩০ মিনিট এবং পরে ১৮০ ডিগ্রিতে ৫ মিনিট রাখতে হবে। কিমা হয়ে এলে ব্রাশ দিয়ে ওপরে গরম মসলার গুঁড়া মেখে নিতে হবে। গ্যাসের চুলায় তাওয়া বসিয়ে তার ওপর গ্রিল দিয়েও চুলাতে সুতি কাবাব করা যায়। তবে যদি আসল স্বাদ পেতে চান, আপনাকে অবশ্যই যেতে হবে চকবাজার।