বইপোকা

নিউমার্কেটে কমে যাচ্ছে বইয়ের দোকান

Looks like you've blocked notifications!

১৯৫২ থেকে ১৯৫৪ সালের মধ্যে ৩৫ একর জমিতে গড়ে ওঠে রাজধানীর অতিপরিচিত কেনাকাটার বাজার নিউমার্কেট। এ মার্কেট বহু ঘটনার সাক্ষী, একই সঙ্গে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক। দুই সারিতে একতলা-দোতলা দোকানঘর, মাঝখানে হাঁটাচলার প্রশস্ত জায়গা, ওপরে খোলা আকাশ, চারপাশে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা—সব মিলিয়ে দারুণ এক পরিবেশ। সাধারণ মানুষ থেকে অভিজাত সবাই যান সেখানে, কারণ একই জায়গায় পাওয়া যায় সব ধরনের পণ্য, এমনকি বইও।

নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেট থেকে ভেতরে ঢুকে হাতের বাঁয়ে প্রথমেই যে গলি রয়েছে, সেটি পরিচিত লাইব্রেরি গলি হিসেবে। একটা সময় এখানে ১০০টির বেশি বইয়ের দোকান ছিল। সব শ্রেণির পাঠক ও বইপোকার আনাগোনা ছিল এখানে। কী বই ছিল না এখানে, দেশি-বিদেশি ছোটগল্প, উপন্যাস, বোর্ডের বই, মেডিকেল বই—সব ধরনের বইয়ের সংগ্রহ ছিল এ দোকানগুলোতে। সারা দিনই ভিড় লেগে থাকত ক্রেতাদের। ক্রেতাদের আগ্রহে দোকানিরা দেশি-বিদেশি বই সংগ্রহে ব্যস্ত থাকতেন সব সময়। কিন্তু নিউমার্কেটের এই দোকানিদের সেই ব্যস্ততা আর নেই। গ্রাহকের সংখ্যা কমেছে অনেক। বন্ধ হয়ে গেছে অর্ধেকের বেশি দোকান, পরিবর্তে সেখানে বসেছে ভিন্ন পণ্যের পসরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আগে যে দোকানগুলো বইয়ের ছিল, সেগুলো কোনোটা হয়েছে জুতার দোকান, কোনটা সেলুন, খাবারের দোকান, আবার কোনোটা হয়েছে ব্যাংকের বুথ অথবা মোবাইলের দোকন। কোনো কোনো দোকান লোকসান গুনেও টিকে আছে বাপদাদার পুরোনো ব্যবসা বলে। আবার কেউ কেউ সামান্য লাভ বা সামান্য লোকসানে চালিয়ে নিচ্ছেন পুরোনো ব্যবসাটি।

দ্য সিটি পেপার হাউস অ্যান্ড লাইব্রেরির ম্যানেজার আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমি ৪২ বছর ধরে এখানে চাকরি করছি। গত কয়েক বছরে এখানে দোকান কমেছে ২০টির মতো। আগের মতো এখন আর ব্যবসা নেই। বেচাকেনা আগে যা হতো তার চার ভাগের এক ভাগও হয় না। লাভের কথা বলতে গেলে আমাদের দোকান থেকে সব মিলিয়ে সমান সমান থাকে।’

নিউমার্কেটের বই ব্যবসায়ীরা মনে করেন, তাঁদের গ্রাহক কমার মূল কারণ নীলক্ষেত। ১৯৭৪ সালে নীলক্ষেতের সব বস্তি ভেঙে দেওয়া হয়। কিছুদিন পর পর্যায়ক্রমে গড়ে ওঠে বাক্কুশাহ মার্কেট ও গাউছুল আযম মার্কেট। তখন থেকেই নীলক্ষেতে শুরু হয় মূল বইয়ের পাশাপাশি পুরোনো বই ও ফটোকপি করা বই বিক্রি। আর এই ফটোকপি করা বই বিক্রির কারণেই নিউমার্কেটে হ্রাস পেতে থাকে দেশের বাইরে থেকে বই আমদানির পরিমাণ।

ম্যানেজার আক্তার বলেন, ‘বিদেশ থেকে একটা বই আমদানি করে এনে আমরা তিন হাজার টাকায় বিক্রি করলে নীলক্ষেতে ওই বই ফটোকপি করে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করছে। সবাই ওই বই কিনতে ব্যস্ত, কারণ কম দামে পায়। সাধারণ মানুষ হয়তো মূল বই আর ফটোকপি বইয়ের পার্থক্য বোঝে না।’

নিউমার্কেটে বই কিনতে আসা মোহাম্মদ মাসুদ করিম বলেন, ‘আমি ডাক্তারি পড়ছি, আমি একটা বই কিনতে এসেছি। প্রথমে নীলক্ষেতে দেখেছি, কিন্তু বইতে ছবিগুলো দেখতে কেমন ঝাপসা, তাই এখানে এসে বইটি কিনলাম। নীলক্ষেত থেকে এখানে ভালো মানের বই পাওয়া যায়।’

একটা সময় পর্যন্ত ঢাকার ঐতিহ্যবাহী নিউমার্কেট তার এ বইয়ের দোকানের কৌলীন্য ধরে রেখেছিল। কালক্রমে তা এখন কমে যাচ্ছে। তবে আশার কথা, নিউমার্কেটের বাইরে, রাজধানীর অন্যান্য জায়গায় গড়ে উঠছে নতুন নতুন সব বইয়ের দোকান।