রঙিন শাড়িতে ঈদ
গর্জিয়াস শাড়ি কিনব না সুতি? যে গরম পড়েছে, আবার সেই সঙ্গে বৃষ্টি তো রয়েছেই। এমনটা হয়তো অনেকেই ভাবছেন। তবে ভাবনা যতই থাকুক না কেন কিনছেন কিন্তু সেরাটাই। ঈদ বলে কথা! যেনতেন শাড়িতে তো আর উৎসবের আমেজ থাকে না। আর বাজারে যতই নিত্যনতুন পোশাক আসুক না কেন নারীদের কাছে শাড়ির আবেদন এতটুকুও কমেনি। বরং বাহারি রং, কাপড়ের ভিন্নতা আর ডিজাইনে নতুনত্ব শাড়ির জনপ্রিয়তা এখনো বহাল রেখেছে।
শাড়ির ধরন
শাড়ির ক্ষেত্রে সুতির পাশিপাশি সিল্কের চাহিদাও অনেক বেশি চোখে পড়ছে। সেই সঙ্গে কাতানের চল তো রয়েছেই। দিনের বেলা অনেকেই সুতির শাড়িকে বেছে নেয়। উৎসবের সঙ্গে স্বস্তির কথাও মনে রাখতে হবে। বাজার ঘুরে দেখা গেল একই সুতির শাড়ির কয়েকটি রূপ। এর মধ্যে তাঁতের শাড়ি ও কোটা শাড়ি বেছে নিচ্ছে সবাই। যার ডিজাইনেও রয়েছে ভিন্নতা। কোনোটাতে স্ক্রিন প্রিন্ট করা, কোনোটায় ব্লকের কাজ, আবার কোনোটায় নকশিকাঁথার কাজও দেখা গেছে।
সিল্কের শাড়ির চাহিদা বরাবরই থাকে। কারণ এ ধরনের শাড়ি সব বয়সী নারীদেরই ভালো মানায়। সিল্কের মধ্যেও রয়েছে বাহারি ধরন। টাঙ্গাইল সিল্ক, হাফ সিল্ক, রাজশাহী সিল্ক, জয়পুরি সিল্ক, মসলিন সিল্ক, কাতান সিল্ক ও অ্যান্ডি সিল্ক। হাতের কাজের পাশাপাশি এতে স্ক্রিন প্রিন্ট ও অ্যাম্ব্রয়ডারি করা হয়ে থাকে। কোনোটায় আবার বাহারি লেস বসানোও থাকে।
মায়াসির ফ্যাশন হাউসের কর্ণধার এবং প্রধান ডিজাইনার মাহিন খান জানালেন, তাঁদের প্রত্যেকটি শাড়িতে হাতের কাজ করা হয়েছে। কোনোটায় নঁকশিকাথার কাজ, কোনোটায় স্টোনের কাজ, কোনোটা আবার কারচুপির কাজ। আর ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের সিল্ক কাপড়কেই তারা শাড়ির ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিয়েছেন।
রাতে একটু জমকালো ভাব আনতে কাতান শাড়িই বেছে নেন সবাই। আর কাতানেরও রয়েছে নানা পদ। জুট কাতান, কানচি বরন কাতান, চেন্নাই কাতান, মসলিন কাতান, মিলেনিয়াম কাতান, কোটা কাতানসহ বাহারি সব কাতান। এসব কাতানে জরি সুতা দিয়ে কারচুপির কাজ করা হয়েছে।
এবার নেটের শাড়িতেও ঈদবাজার ভরে গেছে। কিনছেও সবাই পছন্দমতো। বিভিন্ন রঙের নেটের শাড়িতে বেলবেটের রিবন অথবা ভারি লেস লাগিয়ে নিজেরাই ডিজাইন করে নিচ্ছে। আবার এগুলো ডিজাইনভেদে কিনতেও পাওয়া যাচ্ছে।
আর জামদানি বরাবরই তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। রং আর ডিজাইনে নতুনত্ব তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে কাজেও রয়েছে ভিন্নতা। গদবাধা কাজের বাইরে খুঁজে পাবেন নিত্যনতুন কাজের ছড়াছড়ি।
গরম হলেও শার্টিন এবং বেলবেটের চাহিদাও এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। পুরো শাড়িতে কাজ করিয়েও নিচ্ছে অনেকে। তবে একটু হালকা বেলবেটকেই বেছে নিচ্ছে সবাই। আর ভারি কাজগুলো শাড়িকে আরো বেশি উৎসবমুখর করে তুলছে।
রঙের বাহার
রঙের ক্ষেত্রে ধরাবাধা নিয়ম অনেকেই মানছে না। যে রঙে নিজেকে ভালো মানাবে সেই রঙকেই বেছে নিতে ব্যস্ত সবাই। মেরুন, লাল, কমলা, সবুজ, আকাশি, ফিরোজা, নীল, গোল্ডেন, সিলভার, কালো, সাদা, নেভিব্লু সব রঙের চাহিদা কমবেশি চোখে পড়েছে। তবে গরমের কারণে এসব রঙের হালকা শেডকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ দুই তিন রঙের শেডের শাড়ি কিনছেন। যা দেখতেও লাগে বেশ।
কোথায় পাবেন
ঈদের জন্য বিভিন্ন দোকানিরা শাড়ির পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মিরপুর বেনারশি পল্লী, মায়াসির, আড়ং, নিপুন, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির, অঞ্জন'স, বাংলার মেলা, কে-ক্রাফটে নিজের মনমতো ডিজাইনের শাড়ি কিনতে পারবেন। এ ছাড়া একটু ভিন্ন ধাঁচের শাড়ি কিনতে বিভিন্ন শপিং মলে যেতে পারেন। যেখানে দেশি-বিদেশি নানা ডিজাইনের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। আর নিউমার্কেট, গাউসিয়া তো রয়েছেই। একটু বাজার ঘুরে সাধ আর সাধ্য অনুযায়ী খুঁজে নিন নিজের পছন্দের শাড়িটি।
শাড়ির দরদাম
সুতির শাড়ি আপনি এক হাজার টাকা থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে কিনতে পারেন। সিল্ক শাড়ি দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে সাত হাজার টাকার মধ্যে পাবেন। এ ছাড়া নেটের শাড়ি এক হাজার ২০০ টাকা থেকে দুই হাজার ২০০ টাকার পর্যন্ত দাম হবে। আর কাতান শাড়ি পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে কিনতে পারবেন। এবং জামদানি শাড়ি পাঁচ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে কিনতে পারবেন। আর মসলিন শাড়ি কিনতে পারবেন চার হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে।
বাহারি ব্লাউজ
শাড়ি যেমনই হোক না কেন ব্লাউজটা হওয়া চাই গর্জিয়াস। আর কাটিংয়ে ভিন্নতা তো থাকতেই হবে। এখন পিঠের দিকটা একটু খোলা রেখে বড় গলার চল চলছে। রংচঙা ফিতার জনপ্রিয়তাও চোখে পড়ছে। অনেকে ভিন্ন ভিন্ন লেসের ব্যবহারের ব্লাউজটিকে করে তুলছে আরো জমকালো। কাতান আর বেলবেটের ব্লাউজের চল একেবারেই এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে নেটের ব্লাউজও বানাতে দেখা যাচ্ছে। হাতার ক্ষেত্রে স্লিভলেসেই পছন্দের জায়গা ধরে রেখেছে। আবার থ্রি-কোয়ার্টারও তার চাহিদা বহাল রেখেছে। তাই যেই ডিজাইনটি আপনার জন্য মানানসই সেটি বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
ব্যাগ ও অনুষঙ্গ
শাড়িটা বেশ গর্জিয়াস। আর ব্যাগটা সাদামাটা হলে চলে! ব্যাগেও চাই উৎসবের চমক। এখন পার্টি ক্লচ ব্যাগগুলোর চল দেখা যাচ্ছে। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে অথবা কন্ট্রাস্ট করে ব্যাগটি বেছে নিতে পারেন। স্টোন বসানো অথবা বাহারি লেসের কারুকাজ এসব পার্টি ব্যাগে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। আর এ ধরনের স্টাইলিশ একটি ব্যাগ আপনার ঈদকে আরো বেশি রঙিন করে তুলবে। তবে এর সঙ্গে গয়নাটাও হওয়া চাই একেবারে নতুন। মেটালের গয়নার চলটাই বেশি। সেই সঙ্গে এর ওপর পাথরের ভারি কাজ না হলেই না। বিভিন্ন রঙের মিশ্রণে অথবা একরঙা পাথরের গয়নাও পরতে পারেন। শাড়ির সঙ্গে মানাবে বেশ।
মানানসই জুতা
শাড়ির সঙ্গে জুতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একটু সচেতন থাকাই ভালো। হাই হিল, সেমি হিল অথবা স্লিপার জুতা শাড়ির সঙ্গে ভালোই লাগে। তবে মনে রাখবেন, যেটাতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন সেই ধরনের জুতাই বেছে নেওয়া ভালো। এখন অবশ্য জুতাও বিভিন্ন রঙের কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে রং বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শাড়ির রঙকেই বেশি প্রাধান্য দিন।
মডেল : ইমা, পোশাক ও অনুষঙ্গ : মায়াসির, মেকআপ : ওমেন্স ওয়ার্ল্ড। ছবি : সৈয়দ অয়ন