ভিন্ন স্বাদের কালাইরুটি
আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা রকম খাবারের নিজস্ব ঐতিহ্য আছে। আমাদের দেশটা ছোট হলেও অঞ্চলভেদে খাবারের কত রকম ঐতিহ্য যে রয়েছে, তা নিয়ে বিশাল গবেষণা হতে পারে। ঠিক তেমনই এক খাবার রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী কালাইরুটি।
সকাল, দুপুর বা রাত, এ অঞ্চলের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবনের খাদ্য তালিকায় অন্যতম প্রিয় কালাইরুটি। বিশেষ করে শীতের সময় কালাইরুটি ছাড়া তো একটি রাতও কাটে না এদিকের মানুষের। আর শুধু কি কালাইরুটি? তার অন্য অনুষঙ্গ মিলিয়ে প্রতিটি শীতের রাত যেন এক-একটা উৎসবমুখর আবহ তৈরি করে রাখে।
আপাতত কালাইরুটির উপকরণ, তৈরির উপায় আর সেটা উপভোগের কথা বলি। সাধারণত কালাইরুটি তৈরিতে দুই রকমের আটা ব্যবহার হয়। আতপ চালের আটা আর তার সঙ্গে মাষকলাইয়ের রুটির উপযুক্ত আটার মিশ্রণ। যার অনুপাত এ রকম, চার ভাগের তিন ভাগ সাধারণ আটা আর এক ভাগ মাষকলাইয়ের আটার মিশ্রণ করতে হবে আদর্শ কালাইরুটি পেতে হলে। অর্থাৎ যদি এক কেজি আটার কালাইরুটি তৈরি করতে চান, তাহলে তিন পোয়া আতপ চালের আটা আর এক পোয়া মাষকলাইয়ের আটা নিতে হবে।
এরপর অন্য রুটির মতো করে সেই মিশ্রণকে মণ্ডা বানিয়ে রুটির করার উপযোগী করে খড়ি বা কাঠের চুলায়, লোহা বা মাটির সরাইয়ে সেই রুটি সেঁকতে হবে। মনে রাখতে হবে, সাধারণ আটার রুটির মতো পাতলা, মিহি আর কোমল হবে না কালাইরুটি। বেশ মোটা, রুক্ষ এবং আপাত অনুভূতিতে কিছুটা শক্ত মনে হলেও ছিঁড়ে মুখে দেওয়ার সময় বেশ নরম হবে। সঙ্গে পোড়া বেগুন ও কাঁচা বা শুকনা মরিচ, ধনেপাতা, পেঁয়াজ আর সরিষার তেলের মিশ্রণে তৈরি ভর্তা। অথবা জলপাই, কাঁচা ঝাল, ধনেপাতা আর সরিষার তেলের চাটনি। এ দুটোই শীতের সময়, গভীর রাতে কালাইরুটি উপভোগের আদর্শ অনুষঙ্গ। তবে কালাইরুটি সারা বছরই পাওয়া যায়।
নানা রকম ভর্তা ও যেকোনো ঝাল-মাংস দিয়ে কালাইরুটি উপভোগ করা যেতে পারে। তবে সরিষার তেল দিয়ে বেগুন ভর্তা আর চাটনি হলো কালাইরুটির সঙ্গে অপূর্ব কম্বিনেশন। তবে আর দেরি কেন? চলুন, ঐতিহ্যবাহী কালাইরুটির স্বাদ নিতে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঘুরে আসি।