বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস : সচেতনতায় মুক্তি
বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। শতকরা ৮ দশমিক ৩ ভাগ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। প্রতি ১০ সেকেন্ডে তিন জন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ কোটি হবে। বাংলাদেশেও ডায়াবেটিস মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। দেশে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৮৫ লাখ। এটি মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগ।
ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালন করা হয়। আজ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে।
আমরা যে খাবার খাই তাতে সুগার থাকে। শর্করা বা সুগার জাতীয় খাবার থেকে আসে গ্লুকোজ। রক্তে গ্লুকোজ আসার সঙ্গে সঙ্গে শরীর ইনসুলিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে। এ ইনসুলিন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো কারণে ইনসুলিন নিঃসরণ না হলে বা নিঃসরণ হলেও কাজ করতে না পারলে রক্তে গ্লুকোজ বেশি হয়। একেই বলে ডায়াবেটিস।
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা খালি পেটে সাত দশমিক শূন্য মিলি/লি ও খাবারের দুই ঘণ্টা পর ১১.১ মিলি/লি-এর বেশি হলে ডায়াবেটিস হয়েছে বলে ধরা হয়।
সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগের হার বাড়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে। দিন দিন স্থুল মানুষের হার বেড়েই চলেছে। অস্বাস্থ্যকর খাবার খান বেশির ভাগ মানুষ। যান্ত্রিক এ সময়ে মানুষ হয়ে পড়েছে অলস। শারীরিক পরিশ্রম করতে অনীহা সবার। শোবার সময় লাইট বন্ধ করার জন্য রিমোট চায় মন, কাজ করা তো দূরের কথা। ফাস্টফুড নামক অখাদ্য কিন্তু সমস্যা বাড়িয়েই চলছে। আর মানসিক চাপ নেই, এমন সুখী মানুষ পেলে গল্পের তার জামা নিয়ে কাড়াকাড়ি লাগবে। এ ছাড়া কিছু অসুখেও ডায়াবেটিস হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগটি শরীরের যেকোনো অঙ্গে প্রভাব ফেলতে পারে। বেশি সমস্যা করে রক্তনালিতে। রক্তনালিতে চর্বি জমে সমস্যা তৈরি করে। চোখে দেখার সমস্যা, ছানি পড়া, স্নায়ুগত সমস্যা, কিডনির সমস্যা করতে পারে। পায়ে ক্ষতও হতে পারে। স্ট্রোক, হার্ট আটাক বেশি হয় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের।
ডায়াবেটিস হলেই কিন্তু সব শেষ নয়। ডায়াবেটিস হলেই ইনসুলিনের সুই নয়। বেশির ভাগ ডায়াবেটিস শুধু নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। খাবার খেতে হবে নিয়ম মেনে। আর শরীরকে একটু কষ্ট দিতে হবে আর কি। এতে ফলাফল কিন্তু ভালো। মাত্র তিন ভাগের একভাগ রোগীর ওষুধের প্রয়োজন পড়ে। এদের মধ্যে অনেকেরই মুখে খাবার ওষুধ দিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। ইনসুলিন দিতে হয় কম সংখ্যক রোগীকে। আপনার জন্য মুখে খাওয়ার ওষুধ না কি ইনসুলিন দরকার, সেটির সিদ্ধান্ত নেবেন আপনার চিকিৎসক।
অনেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে ভীষণ ভেঙে পড়েন। চিকিৎসা নিতে চান না বা চিকিৎসকের কথা মানেন না। তাঁরা মারাত্মক ভুল করেন। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে কিন্তু বিপদ। স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক হতে পারে যেকোনো সময়। তবে নিয়ন্ত্রণে রাখলে স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবনযাপন করা যায়। তাই অবহেলা করবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করান।
ডায়াবেটিস ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ নয়। বেশি মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিক হয়- এ ধারণা ঠিক নয়। খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা ও ওষুধ এ রোগ নিয়ন্ত্রণের উপায়। খাদ্যের গুণগত মানের দিকে নজর রেখে পরিমাণমতো খাদ্য নিয়মিতভাবে গ্রহণ, জীবনের সবক্ষেত্রে নিয়মকানুন বা শৃঙ্খলা মেনে অর্থাৎ কাজেকর্মে, আহারে-বিহারে, চলাফেরায়, এমনকি বিশ্রামে ও নিদ্রায় শৃঙ্খলা মেনে চলা দরকার। নিয়মশৃঙ্খলাই ডায়াবেটিক রোগীর জীবনকাঠি।
লেখক : মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ