আইবিএস রোগের লক্ষণ ও কারণ কী?
আইবিএস বা ইরিটেবল বাউয়েল সিনড্রম একধরনের পেটের রোগ। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৫৩তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. ফখরুল আলম। বর্তমানে তিনি হলিফ্যামিলি মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : আইবিএস বা ইরিটেবল বাউয়েল সিনড্রম কী? কী বোঝানো হচ্ছে এটি দিয়ে?
উত্তর : আইবিএস বা ইরিটেবল বাউয়েল সিনড্রম আসলে দীর্ঘমেয়াদি পেটের পীড়া। খাদ্যনালির সমস্যা। দীর্ঘদিন ধরে রোগীরা এই সমস্যায় ভোগে। রোগীরা এসে অভিযোগ করেন মাঝে মাঝে পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা, মলত্যাগের ধরন পাল্টে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হয়। মলের ধরনও পাল্টে যায়। হয়তো আগে স্বাভাবিক পায়খানা হতো এখন বেশি নরম হয়ে যাচ্ছে, অথবা বেশি শক্ত হয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন : আর কী কী সমস্যা নিয়ে রোগীরা আসে?
উত্তর : এখানে একটি মজার বিষয় হলো অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও আইবিএস রোগে খাদ্যনালিতে কোনো সমস্যা পাওয়া যায় না। খাদ্যনালির সমস্যার চেয়ে এর বাইরের সমস্যাও বেশি পাওয়া যায়। আপনি দেখবেন আমাদের এখন জীবনযাত্রা অনেক পাল্টে গেছে। আমরা অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ছি। শান্ত, স্থির ভাবটি আমাদের মধ্যে কমে গেছে। আমাদের সময়ের খুব অভাব। যার জন্য আমাদের জীবন অনেক গতিশীল হয়ে গেছে। এর প্রভাব আমাদের শরীরের ওপরও পড়ছে। খাদ্যনালি এর ব্যতিক্রম নয়। এর জন্য দেখা যাচ্ছে কোনো একটি পরীক্ষায় খারাপ করল, এর চাপ হয়তো খাদ্যনালির ওপর পড়ছে। এতে পায়খানার ধরন পাল্টে গেছে। মানসিক চাপের মধ্যে যখন মানুষ থাকে, যেমন পারিবারিক সমস্যা বা চাকরিতে পদোন্নতি হচ্ছে না, মানসিক যে অস্থিরতা এর চাপ খাদ্যনালির ওপর পড়ে। আইবিএস রোগের একটি মূল কারণ এটি।
প্রশ্ন : আরো কিছু কারণ কি রয়েছে সঙ্গে?
উত্তর : আরো যেই কারণগুলো রয়েছে, সেগুলো মধ্যে ধরেন, আমাদের খাদ্যনালিতে যেই বিভিন্ন হরমোন আছে সেগুলোর রস ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া করে। এতে খাদ্যনালির স্বাভাবিক গতি কখনো বেড়ে যায়, কখনো খুব কমে যায়। সেগুলোর মধ্যে একটি পদার্থ রয়েছে সেরোটোনিন। এটি যদি খুব বেড়ে যায় বা কমে যায় খাদ্যনালির গতি পরিবর্তন হতে পারে। তা ছাড়া অন্যান্য রোগ যদি থাকে, যেগুলো মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়, সেগুলোও আইবিএসের কারণে হতে পারে।
প্রশ্ন : দৈনন্দিন খাবার তালিকার সঙ্গে কি এর কোনো সম্পর্ক রয়েছে?
উত্তর : কিছু কিছু খাবারের সঙ্গেও কিন্তু আইবিএসের একটি সম্পর্ক রয়েছে। যেমন ধরেন কারো কারো দেখা যায় দুধজাতীয় খাবার খুব বেশি হজম হতে চায় না। যাকে আমরা বলি ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স। এই ধরনের খাবারগুলো খেলে পেট ফেঁপে যায়, কারো কারো ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয়, কারো কারো পেটে অনেক গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাস বের হচ্ছে বেশি বেশি করে— এই ধরনের অভিযোগও অনেকে করেন। এই ধরনের খাবার অনেকের সহ্য হয় না। আবার ধরেন, কিছু খাবার আছে যেমন শাক বা সবজি— এই জাতীয় খাবারও অনেক সময় হজম করতে অসুবিধা হয়। আইবিএস রোগীদের মধ্যে একটি ধারণা আছে যে এই খাবারগুলো ওদের সহ্য হচ্ছে না।
প্রশ্ন : রোগী এই জাতীয় সমস্যা নিয়ে এলে কীভাবে পরীক্ষা করেন?
উত্তর : যেহেতু আমরা মনে করি আইবিএস রোগের শারীরিক সম্পর্ক কম, সে জন্য আমরা আগে দেখার চেষ্টা করি আসলেই খাদ্যনালির কোনো রোগ বা শারীরিক কোনো রোগের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক আছে কি না সেটি বের করতে। আমরা হয়তো তার মল পরীক্ষা করব, আমরা তার বিভিন্ন ধরনের রক্ত পরীক্ষা করব। এরপর তার এন্ডোস্কোপি বা কলোনোস্কোপি পরীক্ষা সেটা করেও আমরা দেখি যে ভেতরে আসলে কোনো সংক্রমণ রয়েছে কি না। কোনো প্রদাহ রয়েছে কি না, অথবা কোনো টিউমারজাতীয় কোনো সমস্যা রয়েছে কি না। তাহলে একে আইবিএস বলা যাবে না। কিন্তু সেই কারণগুলো পাল্টাতে হবে। অথবা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ আছে, যেমন ধরেন ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের রোগ, এগুলোতে কিন্তু খাদ্যনালির ওপর চাপ পড়ে। এই রোগগুলো শরীরে নেই সেটি আমাদের প্রমাণ করতে হবে। এই জন্য আমরা পরীক্ষাগুলো করে দেখি।